সেরা নিউজ ডেস্ক:
অষ্টম দিবসের মত মঙ্গলবারও সারা আমেরিকায় বিক্ষোভ-মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। তবে আগের তিনদিনের মত কোন হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ কিংবা লুটতরাজের ঘটনা ছিল না মঙ্গলবার। গত চারদিনের বিক্ষোভ চলাকালে ১০ জনের প্রাণহানী ঘটেছে বিভিন্ন স্থানে।
২ জুন ভোররাতে লুটের উদ্দেশ্যে দক্ষিণ ফিলাডেলফিয়া সিটিতে আগ্নেয়াস্ত্রের দোকান ‘ফায়ারিং লাইন ইনক’এ প্রবেশকালে স্টোরের মালিকের গুলিতে এক ব্যক্তি মারা গেছে। একইসিটিতে বিষ্ফোরক ঘটিয়ে এটিএম মেশিন উড়িয়ে নগদ অর্থ হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টাকালে আরেক যুবক গুরুতরভাবে আহত হয়েছে।
সোমবার দ্বিতীয় রজনীর মত কার্ফিউর মধ্যেই ফিলাডেলফিয়া সিটিতে হরিলুটের রাজত্ব কায়েম হয়েছিল। একইরাতে লাসভেগাসে একটি ফেডারেল ভবনে লুটের চেষ্টাকালে পুলিশের গুলিতে আরেকজনের মৃত্যু হয়েছে। এসব কারণে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পুনরায় কার্ফিউ বহাল হয় নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, আটলান্টা, ওহাইয়ো, লসএঞ্জেলেস, সান্তা মনিকা, বেভার্লী হিল্স, সানফান্সিসকো, ওকল্যান্ড, মিনিয়াপলিসসহ ডজন দুয়েক সিটিতে।
২০ ডলারের একটি জাল নোট ভাঙানোর অভিযোগে এক স্টোর মালিকের টেলিফোনে ২৫ মে অপরাহ্নে মিনিয়াপলিস সিটির টহল পুলিশ এসে গ্রেফতার করে জর্জ ফ্লয়েড (৪৬)কে। এরপর তাকে হ্যান্ডকাপ পরিয়ে গাড়িতে উঠানোর পর কয়েক মিনিট পর গাড়ি থেকে বের করে সেই গাড়ির পেছনের চাকার নিকটে জর্জকে ফেলে দিয়েই তার ঘাড়ের ওপর হাটু দিয়ে চেপে ধরেন পুলিশ অফিসার ডেরেক চোভিন (৪৪)।
এ সময়ে জর্জ বারবার আকুতি জানিয়ে বলেন যে তিনি নি:শ্বাস নিতে পারছেন না। তার এ অকুতি আমলে না নিয়ে চোভিন মিনিট হাটু সরাননি। এভাবেই তার মৃত্যু হয় এবং এ দৃশ্য একজন পথচারি তার ফোনে ধারণ করেছিলেন। পরদিন তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশের পর সারা আমেরিকায় ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ক্ষোভের সেই আগুণ এখনও অব্যাহত থাকলেও অভিযুক্ত ঘাতক চোভিনের বিরুদ্ধে প্রথম ডিগ্রির হত্যা মামলা হয়নি। এমনকি তার তিন সহযোগিকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হলেও তাদেরকে ঐ মামলায় চোভিনের সাথে যুক্ত করা হয়নি। এসব কারণে ক্ষোভের মাত্রা ক্রমান্বয়ে বেড়েছে।
উল্লেখ্য, এরি মধ্যে মিনেসোটা পুলিশের প্রধান মেডারিয়া এরেডন্ডো গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন যে, কোভিনের সাথে তিন অফিসারও সমভাবে দায়ী। তবুও তারা কেন মামলায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে কারাগারে যায়নি সে প্রশ্নও তীব্র হয়েছে।
কৃষ্ণাঙ্গ জর্জকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার প্রতিবাদ এবং পুলিশী নির্যাতনের নিন্দা ও বর্ণ-বিদ্বেষমূলক আচরণে লিপ্তদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবিতে চলমান এ আন্দোলনে গত তিনদিন ধরে কিছু দুর্বৃত্ত ঢুকে পড়েছে। ওরা মিছিলে হাটতে হাটতে সুযোগ বুঝে পার্শ্ববর্তী দামি পণ্যের স্টোরে হামলা চালিয়ে লুটতরাজ করেছে। রবিবার ও সোমবার রাতে বেশ কটি সিটিতে কার্ফিউর মধ্যেও লুটতরাজের ঘটনা ঘটেছে ফিলাডেলফিয়া, লসএঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো, আটলান্টা, মায়ামী, পোর্টল্যান্ড, সিয়াটল, লাসভেগাস, সেন্টলুইস প্রভৃতি স্থানে। নিউইয়র্ক সিটিতে সোমবার রাতে কার্ফিউ সত্বেও বহু দোকানে হামলা, ভাংচুরের পর মূল্যবান সামগ্রি লুট করা হয়েছে। অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটতরাজের অভিযোগে নিউইয়র্ক, ফিলাডেলফিয়া, লসএঞ্জেলেস, আটলান্টা, মিনিয়াপলিস প্রভৃতি স্থানের পুলিশ কর্তৃক মঙ্গলবার পর্যন্ত তিনদিনে ৬৫০০ দুর্বৃত্তকে গ্রেফতারের তথ্য দিয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে দুর্বৃত্ত শনাক্তের প্রক্রিয়ার পাশাপাশি গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও পুলিশ উল্লেখ করেছে। ফিলাডেলফিয়া, নিউইয়র্ক, আটলান্টা, লসএঞ্জেলেস সিটিতে লুটপাটের শিকার ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশিরাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
তবে মঙ্গলবার দিনভর ৬০ থেকে ৭০ সিটিতে বিক্ষোভ হলেও পরিস্থিতি ছিল একেবারেই শান্ত। যদিও সন্ধ্যায় কার্ফিউ জারির পরও অনেকেই মিছিল করেছেন এবং রাস্তায় দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন পুলিশের সামনেই। কার্ফিউ ভঙ্গেও জন্যে কাউকে গ্রেফতারের চেষ্টা না করে শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ বাসায় যাবার আহবান জানান নিউইয়র্ক পুলিশের কর্মকর্তারা। উল্লেখ্য, ৮৭ বছর পর নিউইয়র্ক সিটিতে কার্ফিউ জারির ঘটনা ঘটলো। ৭ জুন পর্যন্ত কার্ফিউ বহাল থাকবে নিউইয়র্ক সিটি, ফিলাডেলফিয়া, ওয়াশিংটন ডিসি, আটলান্টা, লসএঞ্জেলেস, মিনিয়াপলিস প্রভৃতি স্থানে।
সেরা নিউজ/আকিব