ইiন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
উগ্র ডানপন্থিরা সুরক্ষার নামে লন্ডনে তাণ্ডব চালিয়েছে। তারা পুলিশকে লাথি মেরেছে। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছে। এমনকি স্মৃতিস্তম্ভের কাছে মূত্রত্যাগ পর্যন্ত করেছে। শনিবার এমন তাণ্ডবকে অগ্রহণযোগ্য বলেছেন রাজনীতিকরা। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, বিরোধী লেবার দলের নেতা স্টর্মার পর্যন্ত এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। সহিংস সংঘর্ষের পর শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে লন্ডন পুলিশ। মেট্রোপলিটন পুলিশ বলেছে, শনিবার ওই বিক্ষোভ থেকে পুলিশের প্রতি হামলা চালানো হয়।
এর মধ্যে অনেকেই উগ্র ডানপন্থি। লন্ডনের বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্ট্যাচু বা মূর্তিকে রক্ষা করার নাম করে কয়েক হাজার মানুষ সমবেত হয়। তাদের মধ্য থেকে একজনকে দেখা যায় ২০১৭ সালে ওয়েস্টমিনস্টার হামলায় নিহত পিসি কিথ পালমার স্মৃতিস্তম্ভের বিপরীতে মূত্র ত্যাগ করছে। এটা ঘৃণাপ্রসূত কিনা তা তদন্ত করছে পুলিশ। ওদিকে পূর্ব ঘোষিত বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ লন্ডনে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এমন অবস্থায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, আমাদের রাজপথে বর্ণবাদী দস্যুদের কোনো স্থান নেই। অন্যদিকে পিসি পালমারের স্মৃতিস্তম্ভের কাছে মূত্রত্যাগকে লজ্জাজনক বলে আখ্যায়িত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল। মেট্রোপলিটন পুলিশ কমান্ডার বাস জাভিড বলেছেন, পিসি পালমার স্মৃতিস্তম্ভের কাছে মূত্রত্যাগ করছে এক ব্যক্তি এমন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এমন জঘন্য ও ন্যক্কারজনক ঘটনার বিষয়ে পুলিশ অবহিত। তিনি বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা তদন্ত শুরু করেছি। এ সম্পর্কিত সব তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করছি এবং এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে পার্লামেন্টের কাছে খালিদ মাসুদের ছুরিকাঘাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন পিসি পালমার। তখন তাকে ফার্স্টএইড বা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছিলেন এমপি তোবিয়াস এলউড। এবার পালমার স্মৃতিস্তম্ভের পাশে ওই ব্যক্তির মূত্রত্যাগকে জঘন্য বলে আখ্যায়িত করেছেন তিনি। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ওই স্মৃতিস্তম্ভের কাছে ওই ব্যক্তি কি করছিলেন সে বিষয়ে তিনি পুরোপুরি অবহিত। তার উচিত সামনে এগিয়ে এসে মাফ চাওয়া।
স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলেছে, সহিংস বিশৃঙ্খলা, পুলিশের ওপর হামলা, অস্ত্র রাখা, শান্তি নষ্ট করা, মদ্যপ থাকা, মাদকদ্রব্য রাখার অপরাধে তারা বেশ কিছু মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে। এমন বিশৃঙ্খলায় ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। তিনি টুইটে বলেছেন, বৃটেনের রাজপথে বর্ণবাদী দস্যুদের কোনো স্থান নেই। পুলিশের ওপর যারাই হামলা করবে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করা হবে। এই বিক্ষোভকারীরা সহিংসতার আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমান নির্দেশনা লঙ্ঘন করেছে। বৃটেনে বর্ণবাদের কোনো স্থান নেই। এই বাস্তবতার জন্য আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে।
বৃটেনের কিছু উগ্র ডানপন্থি অ্যাক্টিভিস্টসহ বেশ কিছু গ্রুপ বলেছে, তারা বর্ণবাদ বিরোধীদের থেকে লন্ডনে স্মৃতিস্তম্ভগুলোকে রক্ষা করার জন্য লন্ডনে সমবেত হয়েছিল। হোয়াইট হলে সিনোটাফ যুদ্ধ সমাধি, পার্লামেন্ট স্কয়ারে উইন্সটন চার্চিলের স্ট্যাচু বা মূর্তির মতো অন্যান্য স্মৃতি স্থাপনায় শনিবার জড়ো হয় শ শ মানুষ। এর বেশির ভাগই শ্বেতাঙ্গ। লন্ডনজুড়ে উগ্র ডানপন্থি গ্রুপগুলো বিক্ষোভ করে। এ সময় বেশ কয়েক স্থানে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। বিবিসি লিখেছে, এ সময়ে পুলিশের প্রতি লাথি ও ঘুষি মারে তারা। তাতে ৬ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। লন্ডন এম্বুলেন্স সার্ভিস এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ১৫ জনকে এদিন চিকিৎসা দিয়েছে। এর মধ্যে দু’জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন।
শনিবার সকালের দিকেই কয়েকশত মানুষ পার্লামেন্ট স্কয়ার অভিমুখে ছুটতে থাকে। তার বেশির ভাগই ড্রিংক করছিলেন। কিছু ছিল ফুটবল নিয়ে দাঙ্গা করা নেটওয়ার্কের সদস্য। অন্যরা ছিল উগ্র ডানপন্থি। তারা বৃটেনের প্রত্নতত্ত্বকে রক্ষার কথা বলে সমবেত হলেও দ্রুত তারা সহিংস হয়ে ওঠে। তারা পুলিশের ওপর হামলা চালানোর সুযোগ খুঁজছিল।
তারা পুলিশের প্রতি বোতল ও ক্যান নিক্ষেপ করে। স্মোক বোমা ও আতশবাজি জ্বালাতে থাকে। যেসব সাংবাদিক কাছাকাছি হয়েছিলেন, তাদেরকে হুমকি দিয়েছে। উন্মুক্ত বক্ষের এক ব্যক্তিকে দেখা যায় এক পুলিশ সদস্যকে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দিচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে অন্যরাও পুলিশি বাধার দিকে বার বার অগ্রসর হয়। পুলিশের বিরুদ্ধে এমন হামলার নিন্দা জানিয়েছেন লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ের স্টর্মার।
তিনি বলেছেন, পুলিশের বিরুদ্ধে এই সহিংসতা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। এক্ষেত্রে কোনো ‘যদি’ বা ‘কিন্তু’ থাকতে পারে না। টুইটে তিনি বলেছেন, লন্ডনের বিক্ষোভে নেতৃত্বদানকারীদের উদ্দেশ্যই ছিল সহিংসতা সৃষ্টি করা এবং ঘৃণার বীজ বপন করা। মেট্রো পুলিশ ফেডারেশনও এ ঘটনাকে অগ্রহণযোগ্য বলে বর্ণনা করেছে।
সেরা নিউজ/আকিব