সেরা নিউজ ডেস্ক:
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বল্টন তার সম্পর্কে মারাত্মক সব অভিযোগ আনা হয়েছে। ‘দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড’ শীর্ষক প্রকাশিতব্য ওই বইয়ের খণ্ডাংশ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
এই বইয়ের প্রকাশনা বন্ধে মামলা করেছে হোয়াইট হাউজ। তবে আগামী সপ্তাহে প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা বইয়ের অনুলিপি ইতিমধ্যেই নিউ ইয়র্ক টাইমস ও ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে এসে পৌঁছেছে। দুই পত্রিকাই বইটির কিছু দাবি নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। এছাড়া খণ্ডাংশ ছাপা হয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকায়। এর মধ্যে বইয়ের ৮টি বিস্ফোরক দাবি নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছে গার্ডিয়ান।
১. ২০২০ সালের নির্বাচনে জিততে চীনের সাহায্য চেয়েছেন ট্রাম্প
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত বল্টনের বইয়ের অংশবিশেষে বলা হয়, ট্রাম্প চীনের কাছে সাহায্য চান, যেন দেশটি তার অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার করে তার পুনঃনির্বাচনে সহায়তা করে। ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একবার যুক্তরাষ্ট্রে চীনের প্রতি শত্রুভাবাপন্নতা নিয়ে আলোচনা করছিলেন।
বল্টন লিখেন, ‘ট্রাম্প এরপর আশ্চর্য্যজনকভাবে ওই আলোচনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইস্যুতে পরিণত করেন। চীনের অর্থনৈতিক শক্তির প্রসঙ্গ তুলে তিনি শি জিনপিং-কে বলেন যেন তার পুনঃনির্বাচন নিশ্চিত হয়।’
‘তিনি কৃষকদের গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। এই প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের সয়াবিন ও গম ক্রয় বৃদ্ধির সঙ্গে নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের প্রভাব বর্ণনা করেন। আমি ট্রাম্পের বক্তব্য হুবহু তুলে ধরতে পারতাম, তবে সরকারের প্রকাশনা পর্যালোচনার কারণে তা হয়নি।’
২. দুই দফার অধিক প্রেসিডেন্ট থাকার কথা বলেছেন ট্রাম্প
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত বইটির অংশে আরও বলা হয়, শি জিনপিং যুক্তরাষ্ট্রে দুই দফায় প্রেসিডেন্ট থাকার বিধান তুলে দেওয়ার পক্ষে সমর্থন জানান ট্রাম্প। বইয়ে লেখা হয়, ‘শি বলেন তিনি চান ট্রাম্পের সঙ্গে আরও ৬ বছর কাজ করতে। এরপর ট্রাম্প জবাবে বলেন, মানুষ বলছে প্রেসিডেন্টদের দুই দফার সীমারেখা তার বেলায় তুলে দেওয়া উচিৎ।’ বল্টন আরও বলেন, ‘শি বলেন যে যুক্তরাষ্ট্রে অনেক বেশি নির্বাচন হয়। তিনি আরও বলেন ট্রাম্প ভিন্ন অন্য কাউকে দেখতে চান না তিনি। ট্রাম্প তখন ইতিবাচক ভঙ্গিতে মাথা নাড়েন।’
৩. কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সহায়তার আশ্বাস দেন ট্রাম্প
বল্টনের বইয়ে একটি ঘটনার বর্ণনা আছে যে কীভাবে ট্রাম্প কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সহায়তার অংশ হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি তদন্ত বন্ধের চেষ্টা করেছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক বর্ণনায় বলা হয়, ২০১৮ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে এক আলোচনা তিনি ট্রাপকে একটি মেমো দিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়, আমেরিকায় তদন্তাধীন এক তুর্কি প্রতিষ্ঠান নির্দোষ। ‘ট্রাম্প এরপর এরদোয়ানকে বলেন তিনি সবকিছু ঠিকঠাক করে দেবেন। তিনি বর্ণনা করেন, ওই তদন্তের দায়িত্বে থাকা কৌঁসুলিরা তার লোক নয়, বরং ওবামার লোক। এই সমস্যা সমাধান হবে যখন তিনি সেখানে নিজের লোক বসাবেন।’
৪. চীনের উইঘুর বন্দীশিবিরের প্রশংসা করেছিলেন ট্রাম্প
উইঘুর মুসলিমদের বন্দীশালায় রাখার যেই নীতি নিয়েছে চীন, তা এক বৈঠকে কথা চলছিল। শি জিনপিং এ ব্যাপারে তার দেশের নীতি ব্যাখ্যা করেন। তখন ট্রাম্প তাকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, শির উচিৎ এই শিবির নির্মান অব্যাহত রাখা। তার মতে, এটাই ছিল সঠিক কাজ। প্রায় ১০ লাখ মুসলিম ওই শিবিরে বন্দি রয়েছে।
৫. ইভাংকাকে কেলেঙ্কারি থেকে বাঁচাতে সৌদির প্রশংসা করেন ট্রাম্প
২০১৮ সালে ট্রাম্প সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের পক্ষালম্বন করে একটি বিবৃতি দেন। ওই সময় সাংবাদিক জামাল খাশোগজির হত্যাকাণ্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে ছিল সৌদি আরব। এতে অদ্ভুত কিছু শব্দ ছিল। যেমন: দুনিয়া একটি বিপজ্জনক জায়গা! হয়তো সে করেছে, হয়তো করেনি!
বল্টনের বইয়ে বলা হয়, এ নিয়ে যে সংবাদ হবে তা তিনি জানতেন। আর সেজন্যই এমন অদ্ভুতভাবে ওই বিবৃতি দেওয়া হয়। মূলত, ইভাংকা ট্রাম্প তখন ব্যক্তিগত ইমেইল ব্যবহার করছেন সরকারি কাজে, এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়ছিল। আর সাবেক প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে তিনি সেজন্যই সমালোচনা করে কুপোকাত করেছিলেন। তাই নিজের মেয়েই সেই কাজ যখন করছে, তখন তা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাখতেই ট্রাম্প ওই অদ্ভুত বিবৃতি দিয়েছিলেন। ট্রাম্প তখন বলেছিলেন, ‘এই বিবৃতির কারণে সব চোখ ইভাংকা থেকে সরে যাবে। আমি যদি এই বিবৃতি ব্যক্তিগতভাবে পড়ি, তাহলে ইভাংকার ইস্যু সরে যাবে।’
৬. ট্রাম্পের শীর্ষ কর্মকর্তারাই তাকে পেছনে কটুবাক্য বলতেন
নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন মতে, বল্টন একবার ট্রাম্পের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছ থেকে একটি নোট পেয়েছিলেন। ২০১৮ সালে ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ওই সাক্ষাৎ শেষে পম্পেও তাকে লিখে পাঠান, ‘তার ভেতর শুধু ** আছে!’ পম্পেও এক মাস পর তাকে আরও বলেছিলেন যে, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের কূটনৈতিক সমঝোতার চেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা শূন্য।
৭. ট্রাম্প ভেবেছিলেন ফিনল্যান্ড হলো রাশিয়ার অংশ
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত জ্ঞান যে কত অসার, তার কিছুটা ফুটে উঠেছে বল্টনের বইয়ে। বল্টন বলেন, যুক্তরাজ্য সম্পর্কেও একেবারে মৌলিক তথ্য তার নেই। একবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘ওহ তোমরা তাহলে পারমাণবিক শক্তির অধিকারী?’ আরেকবার ট্রাম্প জিজ্ঞেস করেছিলেন ফিনল্যান্ড কি রাশিয়ার অংশবিশেষ কিনা! আফগানিস্তানের সাবেক ও বর্তমান প্রেসিডেন্টের নামও গুলিয়ে ফেলেছিলেন তিনি।
৮. ভেনেজুয়েলা দখল করাটা দারুণ হবে, ভেবেছিলেন ট্রাম্প
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বল্টন তার বইয়ে লিখেছেন ভেনেজুয়েলা দখল করাটা দারুণ হবে। তিনি আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা আসলেই যুক্তরাষ্ট্রের অংশ!
সেরা নিউজ/আকিব