অনলাইন ডেস্ক:
পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে কোনভাবেই ইউরোপকে বাদ দিয়ে তা সম্ভব নয়। নয়নাভিরাম এবং নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হাজার হাজার বছরের ঐতিহাসিক নিদর্শন, এছাড়া পৃথিবীর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতার সৃষ্টির গুরুত্বপূর্ণ ধারক এবং আধুনিক পৃথিবী গঠনে ইউরোপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সে কারণেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সারা বছরই পর্যটকদের আনাগোনা ইউরোপের প্রতিটি অঞ্চলে, একটি গড় হিসাব করলে প্রতিবছর ভ্রমণকারীর ৪০% ইউরোপে ভ্রমণ করে এবং ইউরোপের অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের প্রায় ৮৫% ভ্রমণকারী ইউরোপের অভ্যন্তরে কোন কোন দেশে অবকাশ যাপন করে।
সঙ্গত কারণেই পর্যটন তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই মহামারীর প্রেক্ষাপটে ধাপে ধাপে তারা লকডাউন তুলে নিয়েছে এবং পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। সে কারণে পর্যটকদের আস্থা বাড়াতে এবং তাদের সহযোগিতার জন্য হালনাগাদ তথ্য নিয়ে একটি ওয়েবসাইট চালু করেছে যার নাম হচ্ছে রি-ওপেন।
কিন্তু শুধুই যে পর্যটক আকৃষ্ট করার জন্য তা নয়, এ বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এর সকল সদস্য রাষ্ট্র নিরাপদে খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। জনগণের স্বাস্থ্য রক্ষা হচ্ছে আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার, আমরা চাই সবাই তাদের ছুটি উপভোগ করুক, পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব একসাথে মিলিত হোক এবং যেকোন কারণেই ভ্রমণ করুক।
এই ইন্টারেক্টিভ টুলটি আপনাকে সে সকল তথ্য সরবরাহ করবে যার দ্বারা আপনি আপনার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনার ইউরোপ ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারবেন এবং ভ্রমণকালীন সময়ে সুস্বাস্থ্য এবং নিরাপদ থাকবেন। আপনার সুবিধার্থে প্রতিনিয়ত তথ্য হালনাগাদ করা হবে এবং ২৪টি ভাষায় পাওয়া যাবে।
উদাহরণস্বরূপ আপনি যদি পর্তুগাল ভ্রমণ করতে চান তাহলে আপনি যে তথ্যগুলো পাবেন – প্রথমত সাধারণ তথ্য যেমন পর্তুগালের ট্যুরিজম সম্পর্কিত তথ্য, অঞ্চল ভিত্তিক তথ্য, কোভিড-১৯ সংক্রমণের বিস্তারিত তথ্য এবং জরুরি ফোন নাম্বার।
দ্বিতীয়ত ভ্রমণ: দেশের অভ্যন্তরে অবাধ চলাচলের বিষয়ে বিধি নিষেধ, ইউরোপের অন্য দেশ থেকে ভ্রমণের আসা যাবে কিনা, ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কিনা, সড়ক যোগে এবং নৌপথে প্রবেশ করা যাবে কিনা, অন্য দেশের উদ্দেশ্যে আকাশপথে ভ্রমণ করা যাবে কিনা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে তৃতীয় দেশ থেকে ভ্রমণ করা যাবে কিনা, আগমনের পর বাধ্যতামূলক ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইন, মেডিকেল সার্টিফিকেট বিহীন দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা ইত্যাদি বিষয়ে কি ধরনের বিধিনিষেধ বজায় থাকবে এবং কত তারিখ পর্যন্ত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা-ব্যবস্থা পর্যায় থাকবে।
তৃতীয়ত সেবা: হোটেল, রেস্টুরেন্ট, বার, সমুদ্র সৈকত, ব্যক্তিগত সেবা, মিউজিয়াম এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা খোলা আছে কিনা এবং খোলা থাকলে কি ধরনের বিধিনিষেধ বজায় থাকবে এবং কত তারিখ পর্যন্ত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যায় থাকবে।
চতুর্থ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা: ঝুঁকি যুক্ত কোন অঞ্চল আছে কিনা, ফেস মাস্ক প্রয়োজন কিনা, সামাজিক দূরত্ব, অনেক মানুষের জড়ো হওয়া, পর্যটকদের জন্য স্বাস্থ্য নির্দেশিকা, গণপরিবহনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কোভিড-১৯ নেগেটিভ টেস্ট, ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়গুলোর বিস্তারিত তথ্য।
উপরোক্ত বিষয়গুলো পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং পরিবর্তনশীলতার ওপর ভিত্তি করে হালনাগাদ করা হবে এতে পর্যটকগণ খুব সহজেই তার পরবর্তী গন্তব্য সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানতে পারবে এবং সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারবে।
এই রি-ওপেন প্রকল্পটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের গত মে মাসে হাতে নেওয়া কমিশন্স ট্যুরিজম এন্ড ট্রান্সপোর্ট প্যাকেজের অন্তর্গত। গত ফেব্রুয়ারি মাস ২০২০ থেকে ইউরোপে কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হয়, প্রথমেই ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স জার্মানি দেশগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা খুব বেশি হলেও একে একে ইউরোপের সবগুলো দেশেই আক্রান্ত হয় এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইউরোপ আক্রমণের পরই একে মহামারীর ঘোষণা দেয়।
গত মার্চে ইউরোপকে মহামারী অঞ্চল হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। তবে ইউরোপীয় নেতাদের চৌকস নেতৃত্ব এবং জনগণের সহযোগিতায় খুব সহজেই তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় এবং এই অঞ্চল স্বাভাবিক জীবনযাত্রার দিকে ধাবিত হয়।
সেরা নিউজ/আকিব