করোনায় সর্বশান্ত হয়ে ঢাকা ছাড়ছেন মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
করোনায় সর্বশান্ত হয়ে ঢাকা ছাড়ছেন মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা - Shera TV
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৯ অপরাহ্ন

করোনায় সর্বশান্ত হয়ে ঢাকা ছাড়ছেন মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তরা

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক:

স্ত্রী সালমা ও তিন সন্তান নিয়ে ১৮ বছর ধরে ঢাকার মিরপুরে বসবাস করতেন ময়মনসিংহের নান্দাইলের বাসিন্দা আব্দুল আউয়াল (ছদ্মনাম)। রাজধানীর গুলশানে ছিল তার ব্রেড ও বিস্কুট তৈরির (বেকারি) কারখানা। মিরপুরের বাসা আর গুলশানের কারখানা দুটোই ছিল ভাড়া নেওয়া। সর্বশেষ কারখানার ভাড়া ছিল মাসে ৯০ হাজার টাকা আর বাড়ির ভাড়া ছিল ১৫ হাজার টাকা। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্ত্রী সালমা ও সন্তানদের তিন মাস আগেই গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন ৫৫ বছর বয়সি আউয়াল।

অন্যদিকে করোনার কারণে পর্যুদস্ত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় নিজের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু কোনোমতেই ব্যবসা ঠেকাতে পারলেন না। আবার ব্যবসা না টিকলে কি হবে, মাস শেষে তাকে ঠিকই গুনতে হয় বাড়ি ভাড়ার ১৫ হাজার টাকা আর কারখানার ভাড়া ৯০ হাজার টাকা। এ তো গেলো শুধু ঘর ভাড়ার খরচ। তার বাইরে আছে কারখানার কারিগরদের বেতন, সংসারের মাসিক খরচ।

ব্যবসা টেকাতে না পেরে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর এক মাস পরই কারখানার কারিগরদের বিদায় করে দিতে বাধ্য হন তিনি। আশায় ছিলেন পরিস্থিতির উন্নতি হলে আবার পুরোদমে ব্যবসা শুরু করবেন। কিন্তু আয়-উপার্জন শূন্যের কোঠায় নেমে যাওয়ায় কারখানা ধরে রাখা তো দূরের কথা, মিরপুরের বাসাটাও ছেড়ে দিতে বাধ্য হন আউয়াল। সর্বশেষ তিনিও চরম অনিশ্চয়তা নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে ফিরে গেছেন নিজ ভিটায়। আর কিছু না হোক, অন্তত বাসা ভাড়াটা তো আর দিতে হবে না, এই ভরসায়।

আউয়াল সাহেবের মতো এমন অনেক মানুষ, যারা কি না বহুদিন ধরে জীবনের প্রয়োজনে, জীবিকার প্রয়োজনে ঢাকায় বসবাস করছিলেন পরিবার-পরিজন নিয়ে, তারা এরই মধ্যে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা শহরের অনেক বাড়িতেই বেড়ে গেছে ঝুলে থাকা টু-লেট-এর বিজ্ঞাপন। অনেক বাড়িতেই ভাড়াটিয়া নেই বলে একাধিক ফ্ল্যাট খালি আছে।

করোনার কারণে নিম্নআয়ের মানুষ যতটা বিপদে পড়েছে, তার চেয়ে বেশি বিপদে ও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। সরকারের করোনাকালীন নানা সহায়তা কর্মসূচির তালিকায় নিম্নআয়ের মানুষ নাম ওঠাতে পারলেও নিম্ন-মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত শ্রেণি কোনো তালিকায় নেই। তারা না পারছে নিজেদের সামাজিক অবস্থান ধরে রাখতে, না পারছে কারো কাছে হাত পাততে। তাদের অনেকেরই এখন ভেতরে ভেতরে গুমরে মরার দশা।

পরিসংখ্যান মতে, দেড় হাজার বর্গকিলোমিটারের এ নগরীতে প্রায় ২ কোটি মানুষ বসবাস করে যাদের প্রায় ৮০ শতাংশই ভাড়া বাসার বাসিন্দা। কিন্তু গত মার্চে দেশে করোনা ভাইরাস হানা দেওয়ার পর খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির স্বপ্ন ভাঙতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ব্র্যাকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ৩৬ শতাংশ মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। তিন শতাংশের চাকরি থাকলেও বেতন পান না। দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে যারা কাজ করেন তাদের ৬২ শতাংশই কাজের সুযোগ হারিয়েছে। সে সঙ্গে ঢাকা জেলার মানুষের আয় কমেছে ৬০ শতাংশ।

রাজধানীর কাঁঠালবাগানের ২১০ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয়তলায় সপরিবারে ভাড়া থাকতেন অ্যাডভোকেট আব্দুল জলিল। দুই সন্তানের মধ্যে বড়টি তৃতীয় শ্রেণিতে ও ছোটটি প্লে-তে পড়াশোনা করছে। করোনার মহামারিতে নিম্ন-আদালতের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে তার রোজগার থেমে যায়। মাসের ১৫ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া ও সংসারের খরচ চালাতে গিয়ে তিনি অন্ধকারে পড়ে যান। টানা তিন মাস রোজগারহীন অবস্থায় সংসার চালানোর পর ২০ জুন তিনি ঢাকা ছেড়ে বাড়িতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ির মালিককে তিনি তার ভাড়া প্রদানের অপারগতা জানিয়ে পরদিনই চলে যান কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিজ বাড়িতে। অনলাইনে স্কুলের পড়াশোনা হচ্ছে বলে তার কোনো সমস্যা নেই। গ্রামের বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা চালাবে। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার ঢাকায় আসবেন সপরিবারে।

করোনার এই পরিস্থিতিতে ভাড়াটিয়াদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শান্তা ফারজানা বলেন, করোনা ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের মানুষ একদিকে যেমন নিরন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে অন্যদিকে বাড়ি ভাড়া সংকটে ভুক্তভোগী। এমতাবস্থায় নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির চেয়ারম্যান মোমিন মেহেদীর নেতৃত্বে নেতৃবৃন্দ অনশন করেছিলেন। তাতেও সরকারের টনক না নড়ায়, রোড মার্চ করে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে গিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। নতুনধারার চারটি দাবির অন্যতম দাবি ছিল গ্যাস-বিদ্যুত্-পানির বিল মওকুফ করে বাড়িওয়ালাদের সহযোগিতার মাধ্যমে ভাড়াটিয়াদের সমস্যা সমাধান করা। প্রধানমন্ত্রী চাইলেই সরকারি ভর্তুকির মধ্যদিয়ে এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য ভুক্তভোগী ভাড়াটিয়া বিশেষ করে মধ্যবিত্ত আর নিম্নবিত্তদের সহযোগিতা করতে পারেন।

ব্র্যাকের গবেষণা রিপোর্ট অনুযায়ী চাকরি হারানো ৩৬ শতাংশ ব্যক্তির বেশিরভাগ অংশই ঢাকার ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে চলে যেতে শুরু করেছেন। চলতি জুন মাসে গোটা রাজধানী জুড়ে ভাড়াটিয়াদের বাড়ি ছেড়ে দেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ছে। পিকআপ, ভ্যানগাড়ি বা ট্রাকে করে মালামাল ভরে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছেন এসব পরিবার। আবার অনেকেই বেশি টাকায় ভাড়া নেওয়া বড় ফ্ল্যাট ছেড়ে দিয়ে ছোট ফ্ল্যাট বা সাবলেটে ভাড়ায় উঠছেন। আবার কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের মালামালসহ গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে নিজে মেসে উঠছেন খরচ কমানোর জন্য।

ব্যাচেলর ভাড়াটিয়াদের সংগঠন বাংলাদেশ মেস সংঘের মহাসচিব আয়াতুল্লাহ আখতার বলেন, বর্তমান শোচনীয় পরিস্থিতিটা রাষ্ট্র থেকে শুরু করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক সবাই ভুক্তভোগী। একে তো ব্যাচেলরদের অর্থ সংকট সবসময় থাকে। করোনার এই পরিস্থিতিতে ব্যাচেলরদের দুর্বিষহ দিন কাটাতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে বাড়ির মালিক ও ভাড়াটিয়া উভয়কে বিবেকবোধ জাগ্রত করতে হবে। উভয়পক্ষকে সহনশীল হতে হবে। বাড়ির মালিকরা মানবিক দিক বিবেচনা করে ভাড়া কম নিলে ব্যাচেলর, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা ঢাকায় থাকতে পারবেন।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360