ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
কোভিড-১৯ ভাইরাসে টালমাটাল গোটা পৃথিবী। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে পারেনি কোনো বিজ্ঞানী। এমনকি ভাইরাসটির বিরুদ্ধে শতভাগ কাজ করে এমন কোনো ওষুধের কথা বলতে পারেনি কেউ। কাজ করা ওষুধের নাম উত্থাপিত হলেও এ নিয়ে অনেক মত বিরোধ রয়েছে।
করোনায় কাজ করা ওষুধের মধ্যে প্রথমে নাম আসবে রেমিডিসিভিরের। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রাগ লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদিত করোনার চিকিৎসায় প্রথম ওষুধ এটি। আর এই ওষুধটি তৈরি করছে মার্কিন ওষুধ প্রস্ততকারক গিলিয়াড। রেমিডিসিভির আক্রান্তদের মাঝে প্রয়োগে ভালো ফলাফল পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। এমনকি আক্রান্তরা খুব দ্রুত সেরে উঠছে বলে জানান তারা।
এদিকে বিশ্বে স্টকে থাকা সব রেমিডিসিভির কেনার কথা বলছে মার্কিন সরকার। এমনকি পরবর্তী তিন মাসে উৎপাদিত ওষুধগুলো শুধুমাত্র তারা কিনবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। এর ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাদে ওষুধটি যুক্তরাজ্য, ইউরোপ বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশই কিনতে পারবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের একচেটিয়া এই ঘোষণায় উদ্বেগ জানিয়েছে বিশেষজ্ঞরা। ভ্যাক্সিন তৈরির আগেই যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্ত সবাইকে হুমকিতে ফেলার শঙ্কা জানিয়েছেন তারা।
মার্কিনীদের সুরক্ষায় আগে থেকেই চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি নিয়ে সচেতন রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। অন্যান্য দেশের তুলনায় অধিক দাম দিয়ে চিকিৎসা সরঞ্জাম ক্রয় করছে তারা। আবার বিভিন্ন দেশকে চাপে ফেলে ওষুধও ক্রয় করছে তারা।
এ বিষয়ে লিভারপুল ইউনিভার্সিটি সিনিয়র গবেষক ড. এন্ড্রু হিল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বেশিরভাগ ওষুধ নিজদের জন্য নিচ্ছে। যার মধ্যে রেমিডিসিভিরও রয়েছে। ফলে ইউরোপের জন্য আর কিছুই থাকছে না।’
রেমিডিসভির পরীক্ষা করার জন্য প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার ডোজ বিশ্বব্যাপী সাপ্লাই করা হয়। যার অধিকাংশই ব্যবহার করা হয়েছে। আর বর্তমানে ট্রাম্প প্রশাসন আরও ৫০ লাখ ডোজ ক্রয় করেছে। যা গিলিয়াডের জুলাইয়ের ১০০ শতাংশ এবং আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের ৯০ শতাংশ উৎপাদন।
রেমিডিসিভির ক্রয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য ও মানব সেবা সম্পাদক আলেক্স আজার বলেন, ‘মার্কিনীদের সুরক্ষায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম করোনার ওষুধ নিয়ে একটি চমৎকার চুক্তি করছেন। আক্রান্ত মার্কিনী যাদের রেমিডিসিভিরের প্রয়োজন তাদের ওষুধটি নিশ্চিত করতে আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা করছি। মার্কিনীদের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন ক্ষমতার সব দিক চেষ্টা করছে।’
মার্কিন সরকারি কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, করোনা আক্রান্তদের চিকিসায় রেমিডিসিভিরের ছয়টি ডোজ দিতে হবে। আর প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে ৩ হাজার ২০০ মার্কিন ডলার।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে করোনার অবস্থা ভয়াবহ। আক্রান্তের দিক থেকে দেশটি সবার উপরে রয়েছে। আর এই চুক্তি এটাই বোঝায়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
এদিকে দেশটির শীর্ষস্থানীয় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যান্টনি ফৌউসি সিনেটকে বলেন, ‘মহামারি নিয়ন্ত্রণে আমেরিকা পেছনের দিকে যাচ্ছে। আমরা ভুল পথে যাচ্ছি। যদি একদিনে ১ লাখ লোকও আক্রান্ত হয় তাও আমি বিস্মিত হব না।’
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ২৭ লাখ ছাড়িয়েছে করোনাভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্তের সংখ্যা। দেশটিতে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ১ লাখ ৩০ হাজার ১২২ জন। এছাড়া সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩৪ জন।
সেরা নিউজ/আকিব