করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, কোরবানির হাট জমবে এবার অনলাইনে - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, কোরবানির হাট জমবে এবার অনলাইনে - Shera TV
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৭ অপরাহ্ন

করোনাভাইরাস বদলে দিয়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, কোরবানির হাট জমবে এবার অনলাইনে

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০

ডেস্ক রিপোর্ট:

অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনা অনেক আগে থেকেই শুরু হলেও এবার অনলাইনে বেচাকেনা জমবে ভালো। কারণ করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বদলে দিয়েছে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সচেতন মানুষ এখন ভিড় এড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই দৈনন্দিন কাজকর্ম করছেন। ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে মানুষ এখন অফিস, ব্যবসা-বাণিজ্য, নিত্যপণ্য কেনাকাটা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবকিছুতেই ব্যবহার করছেন অনলাইন প্লাটফর্ম। রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষিরা যখন তাদের উৎপাদিত আমের বিক্রি নিয়ে হতাশ ছিলেন এই অনলাইন মার্কেটিং তাদের সে হতাশা দূর করেছে।

অনলাইনের বদৌলতে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশালসহ বিভিন্ন শহরে বসে অর্ডার দিয়ে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম, দিনাজপুর-ঈশ্বরদীর লিচু ঘরে বসে খেয়েছে মানুষ। তেমনিভাবে এবারের ঈদে অনলাইনে গরু ক্রয়, জবাই করে বাসায় মাংস পৌঁছে দিতেও প্রস্তুত রয়েছে অনেক সংগঠন।

করোনা আক্রান্ত কিংবা উপসর্গ নিয়ে যারা কোরবানির হাটে যাবেন তারা করোনার জন্য সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ করবেন বলছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। তারা বলছেন, গরুর হাটে গিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে গরু কিনে বাড়ি নিয়ে আসা এটা একটা অলীক স্বপ্ন। হাট-বাজার মানেই সেখানে প্রচুর লোকের সমাগম হবে। এটা কেউ ঠেকাতে পারবে না। কোনো সিটি করপোরেশনের মেয়রের কথায় হাটের নিয়ম মানবে না সাধারণ মানুষ। হাট বসালে সেটা হাটই হবে। সেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হবে না।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও প্রিভেনটিভ মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘ধর্মীয় ও অর্থনৈতিক কারণে কোরবানি ও কোরাবানির পশু বিক্রি বাদ দেয়া যাবে না। কিন্তু হাট বসিয়ে পশু বিক্রির ব্যবস্থা করে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সোনার পাথর বাটি (অসম্ভব বস্তু)। এটা যদি করা হয় তাহলে আমি এই করোনায় পশুর হাটেই সর্বনাশের ষোলকলা পূর্ণ হবে বলে মনে করছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গরু-ছাগলসহ কোরবানির পশু বিক্রির জন্য প্রস্তুত রয়েছেন অসংখ্য কৃষক, খামারি ও ব্যবসায়ী। গ্রামের অনেক খামারিও এখন অনলাইনে বেচাকেনা করছেন। অনেকে ফেসবুক পেজের মাধ্যমে গ্রুপ করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। অপেক্ষা এখন ক্রেতাদের জন্য।

বিভিন্ন খামারির ব্যক্তিগত উদ্যোগে চলছে ই-হাট, কোরবানির গরুর মেলা। আবার ই-কমার্স সাইটগুলো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন ডিজিটাল হাট করার। যদিও বিগত কয়েক বছর ধরেই অন্যান্য পণ্যের পাশপাশি কোরবানির পশু কেনাবেচা হচ্ছে। বিক্রির সংখ্যা ও পরিমাণ প্রতিবছরই বাড়ছে আগের বছরের তুলনায়। তবে এবার এই চিত্র ব্যাপক পরিবর্তনের আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আশা জোগাচ্ছে কৃষক, খামারি ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোকে।

অনেকেই নিজের খামারের নামে ফেসবুকে পেজ খুলে সেখানে পশুর ছবি, ভিডিও, বিবরণ, দামসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্যই তুলে ধরছেন। সঙ্গে থাকছে ফ্রি হোম ডেলিভারি। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো খামারি ও অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পশু কোরবানি ও মাংস প্রক্রিয়াজাত করে ক্রেতার বাসায় পৌঁছে দেয়ারও অফার দিচ্ছেন। ‌‘বিক্রয় ডট কম’ গরু-ছাগলের অনলাইন হাট বসিয়েছে। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যেমন-ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী, বগুড়া, কুমিল্লার খামারের গরু-ছাগলের ছবি, তার বিবরণ, মূল্য সবই তুলে দেয়া হয়েছে। ক্রেতারা চাইলে এসব পশুর মধ্য থেকে পছন্দ করে অর্ডার করলেই তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হবে সেই পশু। ঈদ উপলক্ষে অনলাইনে কোরবানির পশু কেনা যাবে অথবা ডটকমেও।

করোনাভাইরাসের এই সংকটের মাঝে ঘরে বসে সামাজিক দূরত্ব অনুশীলনকালীন ভোক্তাদের কোরবানির পশু কেনাকাটার সুবিধার্থে আলিবাবা গ্রুপের অঙ্গসংগঠন দারাজ বাংলাদেশ তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করেছে অনলাইন গরুর হাট। এই হাটের বিশেষত্ব হলো প্রতিটি গরু শতভাগ অর্গানিক এবং গরুগুলো লালন-পালন করেছেন শেরপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের খামারি, উদ্যোক্তারা। ক্রেতারা খুব সহজেই কোরবানির পশুর সকল বিস্তারিত বিষয় জেনে ও ভিডিও দেখে দারাজ অ্যাপে কোরবানির গরু অর্ডার করতে পারবেন। ৩৫০টি গরুর সমারোহে সাজানো এই হাটে রয়েছে ৭২ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩ লাখ ৯৬ হাজার টাকার গরু। সাশ্রয়ী মূল্যের পাশাপাশি ক্রেতাদের জন্য থাকছে অন্যান্য আকর্ষণ।

গত ৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া দারাজ অনলাইন গরুর হাটে প্রি-পেমেন্টের মাধ্যমে অর্ডার নেয়া হবে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। সেগুলো ক্রেতাদের বাড়িতে ডেলিভারি দেয়া শুরু হবে ২৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে (শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামবাসীদের জন্য প্রযোজ্য)।

দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সৈয়দ মোস্তাহিদাল হক বলেন, ‘বিগত সময়ের চেয়ে এই বছরের ঈদগুলো খুবই আলাদা। কোভিড-১৯ চলাকালীন আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি ক্রেতাদের সুরক্ষিত রেখে তাদের চাহিদা মেটাবার। আর এজন্যই অনলাইন গরুর হাটের আয়োজন। আশা করছি, সবাই নিরাপদে ঘরে বসে আমাদের অর্গানিক গরুর হাট থেকে কোরবানির পশু কিনে উপকৃত হবেন।’

বাংলাদেশ ডেইরি ডেভেলপমেন্ট ফোরামের (বিডিডিএফ) সাধারণ সম্পাদক ও দেশের বৃহত্তম এগ্রো ফার্ম সাদিক এগ্রো লিমিটেডের মালিক ইমরান হোসেন বলেন, ‘এবারের ঈদে পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে হাট বসানোর চিন্তা না করে অনলাইন হাটটাকে আরও বেশি কীভাবে শক্তিশালী করা যায় সেটা নিয়ে ভাবা উচিত। এজন্য সরকার হেল্পলাইন দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে। অর্থাৎ অনলাইন ব্যবসার নামে কেউ যেন কোনো গরু ক্রেতার টাকা মেরে দিতে না পারে বা ঠকাতে না পারে সেটা দেখভাল করা। এ বিষয়য়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের একটা হটলাইন থাকতে পারে। এর মাধ্যমে তারাও তদারকি করতে পারে।’

অনলাইন সিকিউরিটি থাকলে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নোংরা পরিবেশে কাদা মেড়ে গলদ ঘর্ম হওয়ার জন্য কেউ আর গরুর হাটে যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ফার্মের কোনো গরু হাটে নেয়া হয় না। এবার ঢাকাসহ সারাদেশের আটটি শাখায় প্রায় এক হাজার ৬০০ গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সব গরুই ফার্ম থেকে বিক্রি হবে অনলাইনের মাধ্যমে। ইতোমধ্যে বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। ঈদের দু-একদিন আগে সব গ্রাহকের বাসায় পৌঁছে যাবে গরু।’

ঢাকার অদূরে বসিলা গার্ডেন সিটির পাশে অবস্থিতি বিশাল গরুর ফার্ম ‘মেঘডুবি এগ্রো-৪’। সারাদেশে তাদের ১৪টি শাখা রয়েছে। এই খামারে তিন হাজার গরু মোটাতাজাকরণ হচ্ছে। এই খামারের কর্ণধার নাহিনুর রহমান নাহিন বলেন, ‘শুধু কোরবানিতে নয়, সারাবছরই এখান থেকে গরু বিক্রি করা হয়। ২০১৪ সালে এই খামার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে আমরা কখনও হাটে গরু বিক্রি করিনি। অনলাইনে ছাড়াও অনেক ক্রেতা পরিবারের লোকজন নিয়ে গরু কিনতে আসে। ফার্মের গরু দেখার জন্য একটা গ্যালারি করা হয়েছে। গ্যালারিতে বসে ক্রেতারা সব গরুই দেখতে পারবেন। যে গরুটি পছন্দ হবে তা তাদের সামনে এনে দেখানো হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘যেহেতু এবার দেশের পরিস্থিতিটা অস্বাভাবিক, সে কারণে অনলাইনে বিক্রির পরিমাণটা অন্য বছরগুলোর তুলনায় বাড়বে। কারণ এই পরিস্থিতিতে ভিড় ঠেলে অনেকে বাজারে যেতে চাইবে না। তাছাড়া এখন অনলাইনে গরুর চেহারা দেখা যায়, ওজন জানা যায়, এমনকি একটি পশুর মাংস কতখানি হবে সেটাও জানা সম্ভব।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেখানে অনলাইনে এবং ক্রেতারা পরিবারের লোকজনকে সঙ্গে নিয়েও পশু কিনতে পারেন। সেখান থেকে কোরবানির পশু কিনলে ঠকবে না। এর আগে যেসব ক্রেতা ওই প্রতিষ্ঠান থেকে গরু কিনেছেন তারা নিজেরাও যাচ্ছেন এবং অন্যদেরকেও উদ্বুদ্ধ করছেন।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360