ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের কারণে জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করে থাইল্যান্ডের ক্ষমতাসীন সরকারের ও রাজতন্ত্রের অবসানের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ। শনিবার রাতভর রাজধানী ব্যাংককের এই বিক্ষোভ থেকে সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি উঠেছে।
২০১৪ সালে দেশটিতে সামরিক অভ্যুত্থানের পর এটাই সর্ববৃহৎ সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। ছয় বছর আগে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির ক্ষমতায় আসেন সাবেক সেনাপ্রধান প্রায়ূত চান ওচা। শনিবার শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে ব্যাংককের গণতন্ত্র স্মৃতিসৌধে বিক্ষোভে অংশ নেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ। তারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত চান ওচা সরকারের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ তুলে ধরেন।
এসময় বিক্ষোভকারীরা সরকারের কাছে তিনটি দাবি জানান: সংসদ ভেঙে দেয়া, সরকারের সমালোচকদের হয়রানির অবসান এবং সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধানে সংশোধন আনা। সমালোচকরা বলছেন, সেনা-সমর্থিত এই সংবিধানেই গত বছরের নির্বাচনে প্রায়ূত চান ওচার দলের জয়ের নিশ্চয়তা দেয়া হয়।
বিক্ষুব্ধ জনতার উদ্দেশে দেশটির ছাত্রনেতা তাতেপ রুয়াংপ্রাপাইকিত বলেন, এ ধরনের গণতন্ত্রহীনতার মাঝে আমরা কীভাবে ঠিক থাকতে পারি?
দেশটির রাজার সমালোচনা নিষিদ্ধে আইন থাকলেও শক্তিশালী থাই রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন এবং প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। যদিও রাজতন্ত্রবিরোধী এ ধরনের প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন দেশটিতে অতীতে অকল্পনীয় ছিল।
বিক্ষোভকারীদের পাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও কোনও ধরনের ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ব্যাংককের ‘গণতন্ত্র স্মৃতিসৌধ’ চারদিক দিয়ে ঘিরে রাখেন। ‘অনুমতি ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ। সংস্কার কাজ চলছে’ লেখা ব্যানারে স্মৃতিসৌধটি ঘিরে রাখেন বিক্ষোভকারীরা।
শিক্ষার্থীরা সরকারবিরোধী এই বিক্ষোভ শুরু করলেও সময় গড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে হাজারও সাধারণ মানুষ যোগ দেন। বিক্ষোভকারীরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে এই বিক্ষোভের প্রায় আড়াই হাজার মানুষ অংশ নিয়েছেন। মাঝরাতের দিকে এই বিক্ষোভ শেষ হলেও আয়োজকরা বলেছেন, দাবি পূরণ না হলে তারা আবারও দুই সপ্তাহের মধ্যে রাস্তায় নামবেন।
জার্মানিতে কার বাড়ি?
দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত চান ওচার বিরুদ্ধে সম্প্রতি জনরোষ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের নির্বাচনের পর দেশটির একটি আদালতে থাইল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তম একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে প্রায়ূত চান ওচা নেতৃত্বাধীন জোটের অবস্থান সংসদে আরও জোরাল হয়।
এদিকে, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বৃহস্পতিবার প্রায়ূত চান ওচা নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার বেশ কয়েকজন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। রাজা মহা বাজিরালংকর্নের আনুগত্য এবং ঐতিহ্যবাহী থাই সংস্কৃতির রূপকল্প নিয়ে প্রায়ূতের রাজনৈতিক দল পালাং প্রাচারাত পার্টি সম্প্রতি একটি প্রচারণা শুরু করেছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ থাইল্যান্ড। দেশটির রাজার সমালোচনা কিংবা মানহানি হয়; এমন কিছু করা হলে সেজন্য ১৫ বছরের কারাদণ্ড ভোগের বিধান রয়েছে। অনেক রক্ষণশীল দেশটির রাজতন্ত্রকে অলঙ্ঘনীয় হিসেবে দেখে থাকেন।
তবে শনিবারের বিক্ষোভে রাজতন্ত্রবিরোধী বেশ কিছু স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড দেখা গেছে। রাস্তায় ছোট করে বানানো বিক্ষোভ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে এক ছাত্রনেতা বলেন, এটা আমাদের দেশ, কিন্তু জার্মানিতে কার বাড়ি? জার্মানিতে রাজা মহা বাজিরালংকর্নের বিশাল বাসভবন রয়েছে। বছরের বেশিরভাগ সময় তিনি সেখানে কাটিয়ে দেন।
এরআগে শুক্রবার দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলের একটি শহরে পৃথক বিক্ষোভের সময় এক ব্যক্তির টি শার্টে লেখা দেখা যায়, বিশ্বাস হারানো নিশ্চয় কোনও অপরাধ নয়। থাই রাজতন্ত্রের দিকে ইঙ্গিত করে টি-শার্টে হ্যাশট্যাগে লেখা ছিল#থাইওয়াকর্ন। পরে এই ব্যক্তিকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।
১৯৩২ সালে দেশটির একটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে রাজশাসনের অবসান ঘটে। সেই দলটির কথা উল্লেখ করে অন্য একটি ব্যানারে লেখা দেখা যায়, জনগণের পার্টি মরে যায়নি।
রাজতন্ত্রের সমালোচনা করে ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মধ্যে না ফেলতে গতমাসে দেশটির রাজনীতিকদের সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত চান ওচা। এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে দেশটির একটি বিরোধী দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর এ ধরনের বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। গণতন্ত্রের পক্ষে অবস্থান ধরে রেখে সেই সময় দেশটিতে তরুণদের মাঝে ব্যাপক সমর্থন পায় দলটি।
সূত্র: এএফপি, আলজাজিরা।
সেরা নিউজ/আকিব