ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের উপকূল এবং জলসীমার দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে অস্ট্রেলিয়া। এর মধ্যদিয়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনায় ওয়াশিংটনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা আরো বাড়ালো ক্যানবেরা।
জাতিসংঘে জমা দেয়া ঘোষণাপত্রে অস্ট্রেলিয়া জানায়, সাগরের অধিকাংশ অংশে চীনের দাবির কোনো ভিত্তি নেই। সাগরে চীনের কিছু কর্মকাণ্ড বেআইনি- যুক্তরাষ্ট্রের এমন ঘোষণার পর অস্ট্রেলিয়া আনুষ্ঠানিক এ প্রতিক্রিয়া জানালো।
তবে ক্যানবেরার বক্তব্যের এখনো কোনা প্রতিক্রিয়া জানায়নি বেইজিং।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাগরে কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করে সেগুলোতে বেশকিছু সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে চীন। বেইজিং বলছে, তারা তাদের শতাব্দী পুরানো অধিকার পুনরুদ্ধার করতে চায়।
ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ফিলিপিন্স তাইওয়ান এবং ভিয়েতনাম চীনের দাবির বিরোধিতা করে আসছে। দেশগুলোর মধ্যকার কয়েক দশকের বিবাদ সাম্প্রতিক বছরে ক্রমান্বয়ে তীব্র হচ্ছে। সাগরের কিছু কিছু এলাকায় মুখোমুখি অবস্থান নেয়ার ঘটনাও ঘটছে।
চীনের দাবি করা বিশাল এলাকা ‘নাইন ড্যাশ লাইন’ নামে পরিচিত। ওইসব এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় কৃত্রিম দ্বীপ তৈরির পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে সামরিক টহল। বানানো হয়েছে উল্লেখযোগ্য সামরিক স্থাপনা। যদিও এ প্রক্রিয়াকে শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করে আসছে বেইজিং।
প্যারাসেলস এবং স্প্রেটলাইস নামে দ্বীপ দুটি জনবসতিহীন হলেও প্রাকৃতিক সম্পদের বিশাল মজুদ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। অঞ্চলটি নৌ চলাচলের অন্যতম প্রধান রুট। একইসঙ্গে মাছ ধরার প্রধান ক্ষেত্র।
২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক একটি আদালত চীনের দাবির বিপক্ষে রায় দেন। বলেন, জলসীমা বা সমুদ্র সম্পদে চীনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের পক্ষে ঐতিহাসিক কোনো প্রমাণ নেই। আদালতের ওই রায় প্রত্যাখ্যান করে চীন।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘে দেয়া অস্ট্রেলিয়ার ঘোষণাপত্রে বলা হয় , ঐতিহাসিক ক্ষমতাবলে দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের প্রতিষ্ঠা করা ঐতিহাসিক অধিকার, অথবা জলসীমা এবং তাদের স্বার্থের দাবি প্রত্যাখ্যান করছে ক্যানবেরা।
ঘোষণায়, ২০১৬ সালে সালিশি আদালতের রায়ের উদ্ধৃতি দেয়া হয়। বলা হয়, দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের দাবি করা দূরবর্তী জলসীমা বা দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে যোগাযোগ তৈরির কোনো আইনি অধিকার নেই চীনের।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত প্যারাসেলস এবং স্প্রেটলাইস দ্বীপে চীনের সার্বভৌমত্ব মেনে না নেয়ারও ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব সম্প্রদায় স্বীকৃতি দিলেও দ্বীপ দুটিতে চীনা নিয়ন্ত্রণে আপত্তি রয়েছে ভিয়েতনাম ও ফিলিপিন্সের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, অস্ট্রেলিয়ার ঘোষণা দেশটির নাটকীয় পরিবর্তনের চিহ্ন। কারণ ক্যানবেরা অতীতে প্রত্যেকের দাবিদাওয়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সমাধানের দাবি জানিয়ে আসছিল।
বেশ কয়েকটি কারণে চীন-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতি চলছে। এরমধ্যে, গেলো বছর চীনের উহানে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসের উৎসের খুঁজে অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি অন্তর্ভুক্ত।
অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার চারদিন আগে ঘোষণাপত্রটি জাতিসংঘে পাঠানো হলো। মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে দু’পক্ষের বৈঠকের কথা রয়েছে। দু’দেশই একে অপরের পুরানো মিত্র।
যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে চীনের সামরিকীকরণের সমালোচনা করে আসছে। ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি ওই অঞ্চলে কারো পক্ষ না নেয়ার নীতি থেকে সরে এসেছে। সমর্থন জানিয়েছে চীনের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোকে।
গেলো মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, চীনের কিছু কাজকর্ম সম্পূর্ণভাবে বেআইনি। নিন্দা জানান ওই অঞ্চলে বেইজিংয়ের জবরদখল নীতির। জবাবে, ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে সত্য বিকৃতি এবং আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলে বেইজিং।
মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে চীনের দমনপীড়ন, হংকংয়ে চীনা নিরাপত্তা আইন বাস্তবায়ন এবং করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় বেইজিংয়ের দায়িত্ববোধ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যেও সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটছে।
গেলো সপ্তাহে হিউস্টনের টেক্সাসে থাকা চীনা কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে মেধাস্বত্ত্ব চুরির অভিযোগ তুলেন পম্পেও। প্রতিবাদে চেঙডুতে মার্কিন কনস্যুলেট বন্ধের নির্দেশ দেয় চীন।
সেরা নিউজ/আকিব