নিউজ ডেস্ক:
রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনায় অনাগ্রহ দেখিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গত শনিবার দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে তিনি এমন মনোভাব ব্যক্ত করেন। বিএনপির একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি নেতারা বলেন, সরকারের নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ রয়েছে দুই মাসেরও কম। শিগগিরই পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁর মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোসহ বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের কাছে আবেদন করা হবে। সম্ভবত এ কারণে রাজনৈতিক বিতর্কে জড়াতে চাইছেন না তিনি।
জানা গেছে, শনিবারের আলোচনায় করোনার রিপোর্ট নিয়ে প্রতারণা, দুর্নীতিসহ নানা বিষয়ে আলোচনা উঠলেও খালেদা জিয়া নিজে খুব স্বাভাবিকভাবে অন্য নেতাদের মতো মতামত ব্যক্ত করেন; কিন্তু কোন ইস্যুতে বিএনপির কী করা উচিত, সে বিষয়ে তিনি কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। আলোচনায় একজন নেতা আদালত খোলার বিষয়ে আইনজীবীদের আন্দোলন নিয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনারা আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিন।’
বিএনপি এখন পুরোপুরিভাবে পরিচালনা করছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব ছাড়াও দলটির সাংগঠনিক সব সিদ্ধান্ত এখন তিনিই দিচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতির সঙ্গে আপাতত খালেদা জিয়া সম্পৃক্ত হতে চাইছেন না বলে মনে করা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এখন তাঁর স্বাস্থ্যগত বিষয় নিয়ে বেশি কনসার্ন। তাঁর উন্নত চিকিৎসা দরকার। তাই সে বিষয়ে তিনি বেশি মনোযাগী। তা ছাড়া রাজনৈতিক ইস্যু আলোচনা করতে আমি বসিওনি।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ গতকাল মঙ্গলবার বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি, কবে কে কোথায় মারা গেলেন এবং চেয়ারপারসনের স্বাস্থ্য বিষয় নিয়ে আমরা ঈদের দিন পরস্পরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। ম্যাডামও অতীত ও বর্তমানের অনেক ঘটনার ম্মৃতিচারণা করেছেন। সংগত কারণেই রাজনীতি নিয়ে তিনি কথা বলেননি।’ তা ছাড়া ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বেশ ভালোভাবেই দল পরিচালনা করছেন বলে মন্তব্য করেন মওদুদ।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘চেয়ারপারসন আমাদের ঐক্যবদ্ধ থেকে সবাইকে মিলেমিশে দলের সিদ্ধান্ত নিতে বলেছেন। তা ছাড়া দুই বছর ধরে তো তাঁর মতামত ছাড়াই সম্মিলিত সিদ্ধান্ত হচ্ছে।’
গত ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাবন্দি ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি ছয় মাসের জন্য মুক্তি পেয়েছেন। মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হলে পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করতে হবে।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, মুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আবেদন করা হবে। আবেদনে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার সুযোগ চাওয়া হবে।
জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘উন্নত চিকিৎসা অবশ্যই আমার বোনের দরকার, কিন্তু সময় যেহেতু আছে, তাই চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বলেন, খালেদা জিয়া বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন, সেই অপেক্ষায় আছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারামুক্তিতে বিদেশে না যাওয়ার শর্ত থাকলেও স্বাস্থ্যগত কারণে সরকার নতুন করে এই বিষয়ে চিন্তা করবে বলে তাঁরা আশা করেন।
সেরা নিউজ/আকিব