লাইফস্টাইল ডেস্ক:
প্রাচীনকাল থেকে শুঁটকি মাছ খাওয়া হয়। এর স্বাদ ও গন্ধ অতুলনীয়। প্রায় সব মাছই শুঁটকি করে খাওয়া যায়। তবে ইলিশ মাছের শুঁটকি সবার কাছে লোভোনীয়।
ইলিশ মাছের স্বাদ অসাধারণ। সকলের পছন্দের মাছ ইলিশ। সাধারণত ইলিশ মাছ সারা বছর পাওয়া যায় না। এসব কারণে সারা বছর ইলিশ মাছের স্বাদ পেতে অনেকেই ইলিশ ফ্রিজে রেখে দেন। অনেকে স্বাদ পরিবর্তনের জন্য ইলিশে লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করেন। ইলিশ মাছ দিয়ে নানা রকম পদ রান্না করা যায়। কেউ পছন্দ করেন নতুন মূলা দিয়ে, আবার কারো পছন্দ নোনা ইলিশে বেগুন।
লবণ ইলিশ শুঁটকির উপকারিতার দিক দিয়ে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন। শুঁটকি মাছের আমিষ, প্রোটিন বা ক্যালসিয়াম তাজা মাছের আমিষ, প্রোটিন ও খনিজ লবণের পরিমাণ থেকে অনেক বেশি আছে । ক্যালসিয়াম ও লৌহের বেলায়ও পরিমাণটা অনেক বেশি। যারা গরুর দুধ খেতে পারেননা অথবা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে, তারা বিকল্প উৎস হিসেবে মাঝে মাঝে প্রোটিন হিসেবে শুঁটকি খেতে পারেন। শরীরের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে শুঁটকি কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
সম্প্রতি গবেষণায় জানা গেছে, নিয়মিত শুঁটকি মাছ খায় এমন ব্যক্তিদের ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বর, যক্ষ্মা এই অসুখগুলো সহজে হয় না। এতে আয়রণ, আয়োডিনের মাত্রা বেশি থাকার জন্য দেহে রক্ত বাড়ায়, দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে করে শক্তিশালী, শরীরের হরমোনজনিত সমস্যাকে রাখে দূরে। শুঁটকি মাছ দেহে লবণের ঘাটতিও পূরণ করে।
এখন ইলিশ মাছে ভরা মৌসুম। বাজারে সস্তায় প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছ পাওয়া যাচ্ছে। তাই ইলিশ মাছ শুঁটকি সংরক্ষণ করার উপযুক্ত সময়।
কীভাবে লবণ দিয়ে ইলিশ মাছের শুঁটকি তৈরি করবেন চলুন দেখা যাক।
প্রথমে ইলিশের আঁশ ছাড়িয়ে মাছের ভেতরের কানকো বা ফুলকা বের করে নিন। পাখনা ছেঁটে শুধু লেজটুকু রাখুন। এবার পুরো মাছটাকে খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ১ ঘণ্টার জন্য পানি ঝরতে দিন।
কিচেন টিস্যু দিয়ে বাড়তি পানি শুষে নিন। খেয়াল রাখবেন ইলিশ মাছে কোন পানি থাকা চলবে না। চিপে চিপে পানি বের করে নিতে পারেন।
একটি পাত্রে হলুদের গুঁড়া এবং সবটুকু সামুদ্রিক লবণ মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। পানি ঝরানো হয়ে গেলে মাছের গায়ে খুব ভালোভাবে হলুদ-লবণের মিশ্রণটি মেশান।
মাছের জায়গায় লবণ মাখাতে হবে। যে কৌটায় মাছ সংরক্ষণ করবেন সেই কৌটার নিচে লবণ দিয়ে একটা প্রলেপ তৈরি করুন। যথেষ্ট পরিমাণ লবণ দিয়ে দিন।
তারপর এক লেয়ার মাছ দিয়ে দিন। মাছ দেওয়া হয়ে গেলে আবার এক লেয়ার লবণ দিয়ে দিন। মনে রাখবেন লবণ বেশি পরিমাণে দিতে হবে, না হলে মাছ নষ্ট হয়ে যাবে। এভাবে একদম শেষ লেয়ার মাছ দেওয়ার পরে উপরে লবণ দিয়ে দিন।
এবার কৌটার মুখ ভালো করে সিল করে দিন, যাতে বাতাস ঢুকতে না পারে। এই পাত্র ঘরের অন্ধকার ও ঠান্ডা জায়গায় সংরক্ষণ করুন। মাছ ভালো থাকবে অনেক দিন। তবে লবণ দেওয়া মাছ এক মাসের পর থেকে খেতে ভালো লাগে।
যখন দেখবেন বেশির ভাগ লবণ পানি হয়ে গেছে তখন লবণের পানিটা ছেঁকে মাছটিকে তুলে আরও একবার পানি ঝরতে দিন ২ ঘণ্টার জন্য। এরপর পানি ঝরে গেলে মাছটিকে একটা বেতের ডালায় রেখে দুই দিন খুব কড়া রোদে শুকাতে দিতে হবে।
শুকাতে দেওয়ার প্রক্রিয়াটা একটু জটিল। ঘরের পুরোনো মশারি বা নেট দিয়ে পাত্রটিকে ভালোভাবে ঢেকে রশি পাকিয়ে মুখটা বেঁধে দিতে হবে। এবার ৪ থেকে ৫টি কালো মুরগির পালক মাছ শুকানোর স্থানে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে দিন। এতে করে কাক বা পাখিরা কাছে আসবে না। ২ বা ৩ দিন রোদে দেওয়ার পর একটা পুরোনো মাটির পাত্রে নোনা মাছ রেখে মুখটা পরিচ্ছন্ন কাপড় দিয়ে বেঁধে ঘরের যে স্থানে রোদ আসে এমন শুকনো কোনায় রেখে দিতে হবে।
সারা বছর সংরক্ষণ করতে চাইলে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। সে ক্ষেত্রে বাদামি রঙের কাগজের ঠোঙাতে পেঁচিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হবে। প্লাস্টিক বা পলিথিনে সংরক্ষিত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আর এভাবে সংরক্ষণ করলে ফ্রিজের অন্য উপাদানে নোনা ইলিশের গন্ধ ছড়াবে না।
ইলিশ শুঁটকি মাছ রান্না করার আগে হালকা গরমপানিতে ক্ষানিকক্ষণ ভিজিয়ে রেখে বারবার পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে ঝুঁকি কমে। যদি আপনি বাড়িতে শুঁটকি মাছ সংরক্ষণ করতে চান, তাহলে মাঝে মাঝে কড়া রোদে দিয়ে তারপরে সংরক্ষণ করবেন।
সেরা নিউজ/আকিব