সেরা টেক ডেস্ক:
চীনের মালিকানাধীন ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটক কিনতে তৎফর হয়ে উঠেছে কয়েকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কেভিন মেয়ার পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রতিদিন অবণতি হওয়ার জেরে তিনি নিজেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন। যুক্তরাষ্ট্র থেকে জনপ্রিয় সামাজিক ভিডিওমাধ্যমটি নিজেদের গুটিয়ে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে বলে শুক্রবার (২৮ আগস্ট) জানিয়েছে রয়টার্স। টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্স ইঞ্জিনিয়ারদের নির্দেশনা দিয়েছেন এ বিষয়ে। টিকটক-এর মার্কিন শাখাটিকে কেনার প্রতিযোগিতায় নাম লিখিয়েছে রিটেইল জায়ান্ট ওয়ালমার্ট।
টিকটকের বিক্রি নিয়ে আলোচনা চলছে একথা নিশ্চিত করে ওয়ালমার্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন: “আমাদের বিশ্বাস ওয়ালমার্ট এবং মাইক্রোসফটের মধ্যে পার্টনারশিপ হলে একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ব্যবহারকারীদের যেমন আশা পূরণ হবে তেমনি মার্কিন সরকারকেও সন্তুষ্ট করা যাবে।”
টিকটকের বিশ্বব্যাপী ব্যবসার সূচনা ২০১৮ সালে। তারপর থেকে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত হারে বেড়েছে। যাদের বয়স ২৫-বছরের নিচে তাদের মধ্যে টিকটক-এর বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। মার্কিন সরকার বলছে, টিকটক-এর মালিক চীনা প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্স যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটা বড় হুমকি। অভিযোগ, টিকটক ৮০ কোটি মার্কিন ব্যবহারকারীর কাছ থেকে নানা ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক-র গ্রাহক রয়েছে ১০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, চীন সরকার এসব তথ্য হীন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে পারে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ঘণিষ্ঠ বনে যাওয়া ভারতও টিকটক নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার কথা বলছে। চীন-ভারত উত্তেজনার মধ্যে দেশটিতে মোদি সরকার নিষিদ্ধ করে টিকটক।
তবে তা অস্বীকার করে আসছে চীন ও টিকটক। বেইজিং সরকার সব অভিযোগ অস্বীকার করে এবং বলে যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণ রাজনৈতিক বলেও অভিহিত করে। অন্যদিকে মার্কিন কোম্পানির কাছে ব্যবসার একাংশ বিক্রির প্রশ্নে বাইটড্যান্সের প্রতিষ্ঠাতা ঝাং ইমিন নিজেও সমালোচনার শিকার হয়েছেন। কোম্পানির চীনা স্টাফদের কাছে এক চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক-এর ব্যবসা ধরে রাখতে হলে এছাড়া আর কোন উপায় ছিল না।
হেইলি অরনা নামের যুক্তরাষ্ট্রের একজন টিকটক ব্যবহারকারী বলেন, ‘এটি যদি বন্ধ হয়ে যায় তবে আমার অন্য পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামে টিকটকের মতোই ভিডিও শেয়ার করা যাচ্ছে। কারণ ইউটিউব অনেক পুরাতন একটি কোম্পানি। এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ যুক্ত থাকছে। তাই বাজারটিও বড়। টিকটক বন্ধ হয়ে গেলে আমি সেদিকেই যাব। আপনি যদি ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে ভিডিও শেয়ার করেন তখন এটি আপনার বন্ধুরা প্রথমে দেখবে। এর রিচও অনেক কম। আর টিকটকে ভালো কন্টেন্ট তৈরি করলে সেটি সবার মাঝে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে কোনো বাধা থাকে না।’
কিডস নেক্সট ডোর নামের একটি টিকটক চ্যানেলের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করেন অ্যাডাম মিগুয়েস্ট। তিনি বলেন, ‘এটা অনেক বড় ক্ষতি করবে টিকটকের সঙ্গে যুক্ত সবার। আমি মনে করি এটি সরকারের ভুল সিদ্ধান্ত।’
টিকটকের ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর অ্যাডাম মিজেস্ট বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারকারীদের জন্য টিকটক ব্যবহারের একটি বিকল্প রয়েছে। তারা যদি তাদের অবস্থান গোপন করতে কোনো অ্যাপ ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ভিপিএন-এর মতো তাহলে নির্বিঘনে টিকটক চালাতে পারবে। কেউ যদি তার অবস্থান কানাডা সেট করে তখন সে অনায়াসেই টিকটকে ভিডিও শেয়ার করতে পারবে।’
মার্কিন সরকার টিকটিক-এর যুক্তরাষ্ট্র শাখাটিকে আমেরিকান-মালিকানায় থাকা কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করার জন্য ৯০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে। এরই মধ্যে মাইক্রোসফট এবং ওয়ালমার্ট এক হয়ে টিকটক কেনার জন্য আরেকটি প্রযুক্তি কোম্পানি ওরাকলের সাথে প্রতিযোগিতা করছে। ওয়ালমার্টের কর্মকর্তারা বলছেন, টিকটক-এর সাথে যুক্ত হতে পারলে তাদের ব্যবসা বাড়বে। ওদিকে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল পত্রিকা খবর দিয়েছে যে সোশাল মিডিয়া জায়ান্ট টুইটারও টিকটক কেনার চিন্তাভাবনা করছে। যতদূর জানা যাচ্ছে, টিকটকের মার্কিন শাখার দাম তিন হাজার কোটি ডলার উঠতে পারে।
সেরা নিউজ/আকিব