হোসেনী দালান থেকে সড়কে বের হবে না ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
হোসেনী দালান থেকে সড়কে বের হবে না ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল - Shera TV
বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫১ অপরাহ্ন

হোসেনী দালান থেকে সড়কে বের হবে না ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার:

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারির মধ্যে এবার আশুরার দিন হোসেনী দালান থেকে সড়কে বের হবে না শিয়াদের ঐতিহ্যবাহী তাজিয়া মিছিল। ইতোমধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকেও তাজিয়া মিছিল ও সমাবেশ না করার জন্য বলা হয়েছে।

রোববার (৩০ আগস্ট) আশুরার দিন পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের হোসেনী দালান চত্বরেই তাজিয়া মিছিল হবে। সকাল ১০টায় এই মিছিল শুরু হবে। একই সঙ্গে আশুরার অন্যান্য কার্যক্রমও অন্য সময়ের মতো হবে বলে জানিয়েছেন হোসেনী দালান ইমামবাড়ার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা।

গত ২৩ আগস্ট আশুরা উদযাপন উপলক্ষে ডিএমপি সদরদফতরে ঢাকা মহানগরের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সমন্বয় সভা শেষে ঢাকার পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘খোলা স্থানে তাজিয়া মিছিল ও সমাবেশ না করার বিষয়ে সবাই উদ্যোগ নেবেন।’

jagonews24

স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে ঘরোয়াভাবে ধর্মীয় অন্যান্য অনুষ্ঠান পালন করা যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ঘরোয়া আয়োজনেও সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে ইমামবাড়াগুলোতে সবাইকে একসঙ্গে না ঢুকিয়ে খণ্ড খণ্ড দলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবস্থানের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার।

শনিবার বিকেলে হোসেনী দালান ইমামবাড়ার তত্ত্বাবধায়ক এম এম ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘আশুরার দিন যে প্রোগ্রাম বাইরে হয় অর্থাৎ মিছিল, সেটি ভেতরেই হবে। মিছিল আমরা ভেতরে করব সকাল ১০টায়। আমরা রাস্তায় আসব না। অন্যান্য সময় যে উপকরণগুলো মিছিলে থাকে এবারও সবই থাকবে। দুলদুল ঘোড়াও মুভ করবে। আলাম, ভেস্তা দল সব থাকবে।’

শৃঙ্খলা রক্ষা ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবকরা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘হয়তো খুব বেশি মানুষকে স্থান দেয়া যাবে না। আমাদের চত্বর পূর্ণ হয়ে যাওয়া পর আমরা আর কাউকে অ্যালাউ করব না। মিছিলের পর যে পর্বগুলো হোসেনী দালানে হয়ে থাকে সেগুলোও যথারীতি হবে।’

jagonews24

‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যতটুকু সম্ভব এর মধ্যেই আমরা সবকিছুই করব। এটা ধর্মীয় আকিদার বিষয়। আমরা কাউকে আসতে নিরুৎসাহিতও করছি না, আবার কাউকে আসতেও বলছি না। আমরা আমাদের ব্যবস্থা রাখছি।’

ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘এটা (তাজিয়া মিছিল) আমাদের ৪০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। এর আগে মিছিল বন্ধ ছিল বলে আমার জানা নেই। কারফিউ ছিল, বড় বড় ঝড়-তুফান হয়েছে, কখনো আমাদের মিছিল বন্ধ ছিল না। বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী সবার দিকে খেয়াল রেখে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী এবার মিছিল রাস্তায় নামবে না।’

তিনি বলেন, ‘অন্যান্য সময়ের মতো আজ (আশুরার আগের রাতে) রাত দেড়টায় ভেতরে মিছিল হবে। বোমা বিস্ফোরণের আগে এটা রাত ২টায় বের হতো। সেখানে দুলদুল থাকবে, মাতম হবে।’

তাজিয়া কারবালার যুদ্ধে নিহত ইমাম হোসেনের (রা.) (হজরত মুহাম্মদের (স.) দৌহিত্র) সমাধির প্রতিকৃতি। মহররমের দশম দিন বা আশুরার দিন ইমাম হোসেনের (রা.) সমাধির প্রতিকৃতি নিয়ে শিয়াদের মিছিল করাই হচ্ছে তাজিয়া মিছিল। কারণ এ দিনই ইমাম হোসেন (রা.) এজিদ বাহিনীর হাতে কারবালায় শাহাদাতবরণ করেন।

jagonews24

ঢাকায় আশুরার দিনে তাজিয়া মিছিল শুরুর সঠিক ইতিহাস না পাওয়া গেলেও মনে করা হয় ১৬৪২ সালে সুলতান সুজার শাসনামলে মীর মুরাদ হুসেনী দালান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এ শোক উৎসবের সূচনা করেন।

কালো-লাল-সবুজ নিশান উড়িয়ে, কারবালার শোকের মাতম ওঠে হাজার হাজার মানুষের তাজিয়া মিছিলে। বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম ধ্বনি তুলে এগিয়ে যায় মিছিল, সবার পা থাকে খালি। মিছিলে থাকে ‘বৈল দল (ঘণ্টা পড়া তরুণ)’, কেউ বা এগিয়ে যায় নওহা (শোকগীতি) পড়তে পড়তে।

মিছিলে থাকে কালো কাপড়ের ইমাম হোসেনের (র.) তাজিয়া (প্রতীকী কবর)। তরুণদের (ভেস্তা) হাতে হাতে থাকে বিচিত্র আলাম (দীর্ঘ লাঠির মাথায় পতাকা)। একটি ঘোড়াকে ইমাম হোসেনকে বহনকারী ঘোড়া দুলদুলের প্রতীক হিসেবে সাজানো হয়। মিছিলে যাত্রার আগেই দুধ-ছোলা দিয়ে পা ধোয়ানো হয় ঘোড়ার, পরানো হয় সুদৃশ্য জিন (বসার আসন) ও মাথার খাপ। পথে পথেই চলে দুধ দিয়ে ঘোড়ার পা ধোয়ানো। শিয়া ধর্মাবলম্বীরা ঘোড়ার পা ধোয়ানো দুধ পবিত্র হিসেবে আরোগ্য কামনায় শরীরে মাখে ও ব্যবহার করে।

jagonews24

তাজিয়া মিছিল বকশিবাজার, উর্দ্দুরোড, লালবাগ চৌরাস্তা, ঘোড়া শহীদের মাজার, আজিমপুর, নিউমার্কেট হয়ে জিগাতলা (ধানমন্ডি লেকের কাছে) গিয়ে শেষ হয়। সেখানেই ডোবানো হয় তাজিয়া।

তাজিয়া মিছিলের পর হয় ফাকা শিকানী। সকাল থেকে অনাহারী থাকার পর এর মাধ্যমে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষ খাওয়া-দাওয়া করেন। রাতে কারবালা প্রান্তরের নারী ও শিশুদের অসহায় অবস্থার স্মৃতিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর হোসেনী দালানে হয় শামে গরিবা (অসহায়দের সন্ধ্যা)। শামে গরিবার সময় দালানের সব সাজসজ্জা সরিয়ে ফেলা হয়। নিভিয়ে দেয়া হয় আলো, মেঝেতে থাকে না কোনো বিছানা বা ফরাশ। এ অবস্থায় চলে বয়ান ও মাতম।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360