শোকে স্তব্ধ নারায়নগঞ্জ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ - Shera TV
  1. [email protected] : sheraint :
  2. [email protected] : theophil :
শোকে স্তব্ধ নারায়নগঞ্জ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০ - Shera TV
সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ০২:৩২ পূর্বাহ্ন

শোকে স্তব্ধ নারায়নগঞ্জ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

স্টাফ রিপোর্টার:
কেউ শোকে স্তব্ধ, কেউ চিৎকার করে কাঁদছেন, কারও চোখে জল টলমল। প্রিয়জনের লাশের জন্য অপেক্ষায় কেউ, কারও আবার সংকটাপন্ন স্বজনকে নিয়ে উৎকণ্ঠা। এর মধ্যে স্বামী ইব্রাহিম বিশ্বাসের মৃত্যুর খবর শুনে অচেতন হয়ে পড়লেন নাসরীন আক্তার। আরেক মা বিলাপ করছিলেন তার সাত বছরের ছেলে জুবায়ের ফরাজীর জন্য। টিভি দেখতে থাকা ছোট্ট ছেলেটিকে তিনি একরকম জোর করে স্বামীর সঙ্গে নামাজে পাঠান। ছেলে আর ফিরে আসেনি মায়ের বুকে, স্বামীও সংকটাপন্ন।

এমন অনেক বেদনাবিধুর দৃশ্য দেখা যায় শনিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। শুক্রবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের তল্লা এলাকার মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এই হাসপাতালে। শনিবার রাত পর্যন্ত সেখানে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসাধীন আছেন ১৭ জন। তাদের কেউই শঙ্কামুক্ত নয়।

এদিকে মসজিদে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না কেউ। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা নামাজ পড়তে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে পাড়ি জমালেন পরপারে। স্বজনরা বলছেন, কিছু সময় পরই তাদের বাসায় ফেরার কথা ছিল। অনেকে বাসা থেকেই মসজিদে গিয়েছিলেন। আবার কেউ বাইরের কাজ সেরে যান মসজিদে। ফোনে স্বজনকে জানান, নামাজ পড়েই ফিরবেন বাসায়। তাদের আর ফেরা হয়নি। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মৃত্যুর পর তাদের ঠাঁই হয়েছে কবরে।

অভিযোগ উঠেছে, তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষকে মসজিদের নিচের গ্যাসের পাইপলাইনে সমস্যার কথা জানানোর পরও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ পরিস্থিতিতে বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও তিতাস গ্যাসের পক্ষ থেকে ঘটনার নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধানে এসব কমিটি গঠন করা হয়।

অগ্নিকাণ্ডে প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি এক শোকবার্তায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। আহতদের আশু আরোগ্য কামনা করেন রাষ্ট্রপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্বক্ষণিক এ ঘটনার খবর রাখছেন এবং আহতদের সর্বোচ্চ সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন ও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

মৃতদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জের তল্লার বাসিন্দা নূর উদ্দিনের বড় ছেলে সাব্বির (২১) ও মেজো ছেলে তুলারাম ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র জোবায়ের (১৮), পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন দেলোয়ার হোসেন (৪৫) ও তার ছেলে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বাসিন্দা জুনায়েদ হোসেন (১৬), মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার হাটবুকদিয়া গ্রামের কুদ্দুস ব্যাপারী (৭২), চাঁদপুর সদর উপজেলার করিম মিজির ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৪), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পোশাক শ্রমিক জুলহাস ফরাজীর ছেলে জুবায়ের ফরাজী (৭), পটুয়াখালীর গলাচিপার আবদুল খালেক হাওলাদারের ছেলে পোশাক শ্রমিক মো. রাশেদ (৩০), পশ্চিম তল্লার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির (৭২), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার কাউখালী গ্রামের জামাল আবেদিন (৪০), পোশাক শ্রমিক ইব্রাহিম বিশ্বাস (৪৩), নারায়ণগঞ্জ কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী রিফাত (১৮), চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইন উদ্দিন (১২), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার মো. জয়নাল (৩৮), লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার তালুকপলাশী গ্রামের মেহের আলীর ছেলে পোশাক শ্রমিক মো. নয়ন (২৭), ফতুল্লার ওয়ার্কশপের শ্রমিক কাঞ্চন হাওলাদার (৫০), শ্রমিক মো. রাসেল (৩৪), বাহার উদ্দিন (৫৫), ইমাম আবদুল মালেক (৬০) ও নিজাম ওরফে মিজান (৪০)। এর মধ্যে ১৬ জনের লাশ স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিদের লাশও হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।

জানা যায়, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকার বাইতুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজ শেষ হওয়ার পর ঘটে গ্যাস-বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড। এতে মসজিদে নামাজ আদায়রত সবাই দগ্ধ হন। তাদের উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা জানান, মসজিদটির নিচ দিয়ে গ্যাস সরবরাহের পাইপ ছিল। সেই পাইপের ছিদ্র থেকে কয়েকদিন ধরেই গ্যাস নির্গত হচ্ছিল। মসজিদ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সব জানালা বন্ধ থাকত। এ কারণে গ্যাস বাইরে যেতে পারেনি। এর মধ্যেই শুক্রবার রাতে মসজিদের এসি বা ফ্যানের সুইচ বন্ধ করার সময় সৃষ্ট ছোট্ট স্ফুলিঙ্গ থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মোহাম্মদ রাসেল নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী শনিবার বার্ন ইনস্টিটিউটে জানান, শুক্রবার মসজিদে মুসল্লির উপস্থিতি ছিল কম। কারণ মসজিদের সামনে পানি জমে থাকায় যাতায়াত কষ্টকর ছিল। তবু তিনি মসজিদে যান। নামাজ পড়ে মসজিদের সামনে এসে দাঁড়ান। তখনই হঠাৎ বিস্ম্ফোরণের মতো শব্দ ও আগুনের হলকা দেখতে পান। প্রথমে বুঝতে পারেননি কী ঘটেছে। পরে মুসল্লিদের চিৎকার শুনে তিনি ও আশপাশের লোকজন এগিয়ে যান এবং উদ্ধার তৎপরতা চালান।

নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার পর সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ব্যবস্থাপনায় লাশ তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার যেভাবে চাইবে সেভাবেই লাশ হস্তান্তর করা হবে। স্বজনরা চাইলে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হবে। তবে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে ময়নাতদন্ত করা হবে।

তিনি আর বলেন, আগুনে মসজিদের ছয়টি এসি বিস্ফোরিত হয়েছে। এতে সব জানালার কাচ ভেঙে যায়। আগুনে সিলিং ফ্যানগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনাস্থলে মানুষের রক্ত-মাংস-চামড়া লেগে থাকতে দেখা গেছে।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360