অনলাইন ডেস্ক:
আলোচিত-সমালোচিত মডেল ও অভিনেত্রী নায়লা নাঈমের বাসায় পাঁচ শতাধিক বিড়াল নিয়ে বিপাকে প্রতিবেশীরা। বিড়ালের দুর্গন্ধে প্রতিবাদ করে প্রতিবেশীরা চরম অপমানের শিকার হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সবশেষ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিড়াল সরিয়ে নেয়া হবে বলে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নায়লা নাঈম।
জানা গেছে, নায়লা নাঈম প্রায় চার বছর ধরে বসবাস করেন রাজধানীর আফতাবনগরে। নগরের বি-ব্লকের-২ নং রোডের – নং বাসার ৭ম তলার দুইটি ফ্ল্যাট তার মালিকানায়। ওই ফ্ল্যাটের একটি তিনি বিড়াল পালছেন। এছাড়া ভবনের নিচ তলায় তার একটি অফিস কক্ষ রয়েছে। অফিস কক্ষটি ডেন্টাল ডাক্তার হিসেবে ভাড়া নিলেও কখনোই সেখানে কোনো রোগী দেখার কাজ হয় না।
এর আগে নায়লা নাঈম খিঁলগাওয়ে ৪ বছর বসবাস করেছেন। সেখানে বিড়াল পালন নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান তিনি। পরে সেখান থেকে বাসা স্থানান্তর করে আফতাবনগরে বসবাস শুরু করেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৭ম তলার দুইটি ফ্লোরের একটি বিড়াল পালনের কাজেই ব্যবহার করেন নায়লা। এসব বিড়ালের বিষ্ঠা লিফটে করে নামানো হয়। লিফটে বিড়ালও উঠা-নামা করান কর্মচারীরা। ফলে লিফট ও অন্যান্য ফ্লোরে ব্যাপক দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় চার বছর ধরে এই সমস্যা সইতে হচ্ছে প্রতিবেশীদের।
বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেশীদের দীর্ঘদিনের আপত্তি ও অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে বাড্ডা থানায় একাধিকবার অভিযোগ করেছে ফ্ল্যাট মালিক সমিতি। সমিতির পক্ষ থেকে বাড্ডা থানায় অভিযোগও দেয়া হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা কোনো সুরাহা পায় না।
করোনায় সংক্রমণ শুরু হলে নায়লার বাসার ৫ শতাধিক বিড়াল নিয়ে শঙ্কায় পড়েন স্থানীয়রা। তাদের আশঙ্কা, বিড়ালের মাধ্যমে করোনার সংক্রমণ শুরু হলে ভবনের সব ফ্ল্যাটে করোনা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এজন্য বিষয়টি নিয়ে নায়লার সঙ্গে কথা বলে এক প্রতিবেশী। এর জের ধরে বাইরে থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা গিয়ে তাদেরকে চরম অপমান করেন।
ওই ঘটনার পর স্থানীয়রা নায়লা নাঈমকে নিয়ে কথা বলতে ভয় পান। এই প্রতিবেদকের সঙ্গেও কথা বলতে গিয়ে তারা নায়লা নাঈমের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার জন্য বারবার অনুরোধ জানান।
বিষয়টি নিয়ে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সদস্যদের কাছে জানতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হননি। তবে প্রাপ্ত সূত্র থেকে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে একটি সুরাহা হচ্ছে। বিড়াল সরিয়ে নেয়ার জন্য পুলিশের বাড্ডা জোনে উনি (নায়লা নাঈম) একটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ফ্ল্যাট মালিক সমিতির এক সদস্য জানান, পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে বিষয়টি পুলিশের বাড্ডা জোনের এক সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনারের ওপর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি তাঁর কার্যালয়ে গিয়ে নায়লা নাঈম আগামী ৩০ তারিখের মধ্যে বিড়াল সরিয়ে নেয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ উদ্যোগ নেয়ায় ফ্ল্যাট মালিকরা সন্তুষ্ট এবং তারা পুলিশ কমিশনারের ওপর আস্থা রাখছেন বলে জানিয়েছেন।
একাধিক প্রতিবেশীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চার বছর ধরে এই সমস্যা হচ্ছে। তিনি বাণিজ্যিকভাবে বিড়ালের খামার হিসেবে আবাসিক এলাকার ফ্ল্যাট ব্যবহার করছেন। ফ্ল্যাটের পরিবেশও খুব অস্বাস্থ্যকর। বিড়াল পালনের জন্য তিনি স্থানীয় আবাসিক সমিতি থেকে কোনো অনুমতি নেননি।
তারা জানান, বিড়ালের দুর্গন্ধে এই ভবনের বাসিন্দাদের মধ্যে সব সময় অসুখ লেগে থাকে। বিশেষ করে সব বর্জ্য লিফটে আনা-নেয়া করায় সমস্যাটা বেশি হয়ে থাকে। তাছাড়া বিড়ালের খামারে ব্যবহৃত ময়লা-অস্বাস্থ্যকর কাপড় ও অন্যান্য দ্রব্য ছাদে নিয়ে পরিস্কার করা হয়। ফলে অন্যরা ছাদে গেলে বিপাকে পড়েন।
প্রতিবেশীরা জানান, ২০১৮ সাল থেকে বিড়াল সরিয়ে নেয়ার জন্য এ পর্যন্ত একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রথমে ১ বছর সময় চেয়েছিলেন। এক বছর শেষ হওয়ার পর ৬ মাস এবং পরে আরও ৬ মাস সময় দেয়া হয়। কিন্তু তিনি প্রতিশ্রুতি রাখেননি।
বিষয়টি নিয়ে ফ্ল্যাট মালিক সমিতির পক্ষ থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশ, স্থানীয় কাউন্সিলর, সিটি করপোরেশন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুতেই নায়লা নাঈমের বিড়াল সরানোর ব্যবস্থা হয়নি।
এ বিষয়ে নায়লা নাঈমের বক্তব্য নেয়ার জন্য সময় নিউজের পক্ষ থেকে শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে চারবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে তাকে এসএমএস পাঠানো হয়। এ খবর লেখা পর্যন্ত তিনি কোনো সাড়া দেননি।
নায়লা নাঈমের বাণিজ্যিকভাবে বিড়াল পালনের অনুমতি রয়েছে তা জানা যায়নি। তবে বন বিভাগের ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজল তালুকদার সময় নিউজকে জানান, বন বিভাগ থেকে এখনো পর্যন্ত হরিণ পালন ও বিদেশি পশু-পাখি যারা দেশে এনে পালন করে তাদের অনুমোদন দেয়া হয়। কুকুর বা বিড়াল বাণিজ্যিকভাবে পালনের বিষয়টি আমাদের নীতিমালাভুক্ত নয়।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. শেখ আজিজুর রহমান সময় নিউজকে বলেন, নায়লা নাঈম নামে কারো বিড়াল বা কুকুর পালনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানা নেই। তবে বাণিজ্যিকভাবে এভাবে কুকুর, বিড়াল বা এ জাতীয় প্রাণি পালন করতে হলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সেরা নিউজ/আকিব