অনলাইন ডেস্ক:
২০১১ সালের কথা। প্রতিদিনের মতো সেদিনও খবরের কাগজ পড়ছিলেন আনসার সদস্য শফিকুল ইসলাম। হঠাৎ করেই একটি খবরে চোখ আটকে গেল তার। জাপানে প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করেছেন একজন। পড়তে পড়তে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। পানি কিংবা কোমল পানীয় পান করে সবাই তো প্লাস্টিকের বোতলটি সাধারণত ফেলে দেন যেখানে-সেখানে। অথচ সেসব বোতল দিয়ে এমন সুন্দর বাড়িও বানানো যায়!
সেই থেকে অমন একটি বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখতেন কুমিল্লার হোমনা উপজেলার লটিয়া গ্রামের শফিকুল। এতদিনে তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে- পরিত্যক্ত বোতল দিয়েই গ্রামে নিজের দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় বাড়ি বানিয়েছেন তিনি। যেটি দেখার জন্য প্রায় প্রতিদিনই আসেন বিভিন্ন এলাকার মানুষজন।
শফিকুল ইসলাম জানান, শুরুতে অনেককেই তিনি তার চিন্তার কথা বলেছেন। কেউ কোনো উৎসাহ দেননি, বরং হেসে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি হাল ছাড়েননি; বরং ইউটিউব দেখে পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে এই বাড়ি করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছেন। ২০১৮ সালে নিজের মতো করে বাড়ির কাঠামো তৈরিতে নেমে পড়েন। এ জন্য এক লাখ পরিত্যক্ত বোতল সংগ্রহ করেন ঢাকা ও কুমিল্লার বিভিন্ন দোকান থেকে। প্রথম দিকে মানুষ নিরুৎসাহিত করলেও বাড়ির কাঠামো দেওয়াল উঠে যাওয়ার পর সবাই প্রশংসা শুরু করেন। ইতোমধ্যে এর ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে এবং তিনি বসবাসও শুরু করেছেন।
শফিকুল জানান, বাড়িটি তৈরিতে প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ইট দিয়ে এ ধরনের একটি বাড়ি তৈরি করলে তার খরচ হতো ৩০ লাখ টাকা।
ছাদ ছাড়া এ বাড়ির সবখানেই ব্যবহার করা হয়েছে আড়াইশ’ মিলিলিটার থেকে এক লিটার আকৃতির প্লাস্টিকের ছোট-বড় বোতল। ব্যবহারের আগে বোতলগুলো বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। দেওয়াল, বারান্দার নকশা, সামনের নকশাসহ অন্য সব কাজেই ব্যবহার করা হয়েছে এগুলো। একটির সঙ্গে আরেকটির বন্ধন দৃঢ় করতে ব্যবহূত হয়েছে বালু ও সিমেন্ট। একই আকৃতির ও একই ব্র্যান্ডের বোতলগুলো একেকটি ক্ষেত্রে ব্যবহার করায় আলাদা সৌন্দর্য ফুটে উঠেছে। বোতলের আকৃতির মাধ্যমেই নকশাগুলো ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। কিছু জায়গায় বোতলের ওপর প্লাস্টার করে দেওয়া হয়েছে। একতলা বিশিষ্ট ভবনটির নিচতলায় রয়েছে চারটি শয়নকক্ষ, একটি কিচেন ও দুটি বাথরুম।
বর্তমানে রাজারবাগে কর্মরত আনসার সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি শখের মানুষ। স্বপ্নের বাড়িটি করতে পেরে খুব খুশি হয়েছি। পরিত্যক্ত বোতলগুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলে পরিবেশেরও অনেক ক্ষতি হতো। বোতলগুলো ব্যবহারের ফলে তা কিছুটাও হলেও রক্ষা পেয়েছে।
ভবনটির কাজে সম্পৃক্ত রাজমিস্ত্রি আলমগীর জানান, ভবনটিতে কোনো ফাউন্ডেশন দেওয়া হয়নি। ছাদ ছাড়া সব জায়গায় প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করা হয়েছে। বোতলগুলোকে বিভিন্ন রঙের ওপর ভিত্তি করে বসানো হয়েছে, যাতে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।
বাড়িটি দেখতে যাওয়া রফিকুল ইসলাম বলেন, ফেসবুকে এ বাড়ির ছবি দেখে ঢাকা থেকে দেখতে গিয়েছিলাম। খুবই সুন্দর করে বানানো হয়েছে বাড়িটি। তারও ইচ্ছা, ভবিষ্যতে এমন বাড়ি করার।
লটিয়া গ্রামের ইয়াসিন মিয়া বলেন, শফিক ভাই বোতল দিয়ে সুন্দর বাড়ি করে লটিয়া গ্রামের পরিচিতি বাড়িয়ে দিয়েছেন। বাড়িটি দেখতে এখন অনেক মানুষ এই গ্রামে ঘুরতে আসে।
গত রোববার হোমনা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের লটিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের ডান পাশে দৃষ্টিনন্দন প্লাস্টিক বোতলের বাড়িটি। সেখানে ভিড় জমানো কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বাড়িটি দেখতে গেছেন তারা। এ রকম আরও অনেকেই আসছেন এ বাড়ি দেখতে। বাড়ির পাশ দিয়ে চলে যাওয়া সড়কপথে চলাচলকারী অনেকেও বাড়িটি এক পলক দেখার জন্য থামছেন সেখানে। অনেকে ছবি তুলছেন। বাড়ির মালিক শফিকুল ইসলাম তাদের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। কিন্তু মুখে হাসি লেগেই আছে তার।
বাড়িটির কাঠামো, স্থায়িত্ব ও পরিবেশবান্ধব দিক সম্পর্কে হোমনা পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী তোফাজ্জল হোসেন জানান, সাধারণ ভবন তৈরিতে যেসব নিয়ম মানার প্রয়োজন, সেগুলো অনুসরণ করে বানানো হলে এমন বাড়িও একই রকম মজবুত হবে। তবে বোতলগুলোতে ভালোভাবে বালু ভর্তি করতে হবে। এটি পরিবেশবান্ধব হলেও অগ্নিদুর্ঘটনার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
সেরা নিউজ/আকিব