ফুটবল মাঠে বাংলাদেশের লড়াইয়ের অবস্থা করুণ। তবে মাঠের বাইরের আলোচনায় এবং ‘খেলায়’ দেশের ফুটবল এখন প্রতিদিনই গরমা গরম! এই ‘খেলার’ নাম দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) এর চেয়ারে বসার লড়াই। নির্বাচনের লড়াই। যে জিতবে সামনের চারবছর বাফুফের চেয়ার তার। বিভিন্ন পদে বাফুফের নির্বাচনী লড়াইয়ে এবার অনেকেই লড়ছেন। সভাপতি থেকে সদস্যপদ-সবমিলিয়ে বাফুফের ক্ষমতার চেয়ার সংখ্যা ২১ টি। আর এই ২১ টি চেয়ারের জন্য লড়াইয়ে নেমেছেন সবশুদ্ধ ৪২ জন! প্রতি পদেই দুজন করে প্রার্থী আর সভাপতি পদে আছেন সবচেয়ে বেশি তিনজন।
শনিবার, ৩ অক্টোবর দুপুরে ভোটের এই লড়াইয়ে সব আর্কষণের কেন্দ্রবিন্দু সভাপতির চেয়ারকে ঘিরেই। বাফুফে সভাপতি পদে আনুষ্ঠানিকভাবে লড়াইয়ে আছে তিনজনের নাম। কাজী সালাউদ্দিন, শফিুকল ইসলাম মানিক ও বাদল রায়। তবে বাদল রায় এই নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। সরে দাড়ানোর এই ঘোষণা একটু দেরিতে দিয়েছেন বাদল রায়। আর তাই ভোটার প্রার্থী তালিকায় তার নামটা থাকছেই। ওভাকওভারের ঘোষণা দিলেও বাদল রায় ঠিকই আছেন এই ‘ম্যাচে’। ভোট আসলে এমনই এক ‘ম্যাচ’- যেখানে আগেভাগে কাউকে বিজয়ী বলার উপায় নেই! আর তাই শনিবারের এই লড়াইয়ে সালাউদ্দিন বা মানিককে হারিয়ে বাদল রায় ২-০ গোলে ‘ম্যাচ’ জিতে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই!
সালাউদ্দিন ভোটের লড়াইয়ের এই ‘ম্যাচে’ নিজেকে ফেভারিট জেনেই নামছেন। তবে ফুটবলে ফেভারিটরা প্রতিদিন জিতে না। যদি জিততো তাহলে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলই প্রতিবার বিশ^কাপ জিততো!
সালাউদ্দিনের পুরো প্যানেলের বিরুদ্ধে ভোটের লড়াইয়ে আছে সমন্বয় পরিষদ। সিনিয়র সহসভাপতি পদে প্রার্থী শেখ মোহাম্মদ আসলামের নেতৃত্বাধীন এই সমন্বয় পরিষদ সব পদে প্রার্থী দিলেও সভাপতি পদে সালাউদ্দিনকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো কাউকে খুঁজে পায়নি! শফিকুল ইসলাম মানিক এককভাবেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন সালাউদ্দিনকে। তিনি কোন প্যানেলের নন।
বাফুফে সভাপতি পদে সালাউদ্দিন ক্ষমতায় আছেন ১২ বছর ধরে। পেছনের তিনটি নির্বাচনে জিতেছেন তিনি। এত দীর্ঘ সময় বাংলাদেশের আর কেউ বাফুফের সভাপতি পদে বসার সুযোগ পাননি। সালাউদ্দিন পেয়েছিলেন। কিন্তু পেছনের তিনবার নির্বাচনী ‘ম্যাচ’ জেতা কাজী সালাউদ্দিন কি দেশের ফুটবলে প্রকৃত উন্নয়ন বা সমস্যার সমাধান দিতে পেরেছেন?
এই প্রশ্নের উত্তরে সালাউদ্দিনের খুব ঘনিষ্ঠজনরাও সম্ভবত তাকে পাস মার্ক দেবেন না। আর বাকিরা তো নয়-ই!
পেছনের দুই তিন বছর ধরে বাফুফের শীর্ষপদে ভোটের লড়াইয়ে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ফুটবল সংগঠক এবং ব্যবসায়ী রুহুল আমিন তরফদারের নাম শোনা যাচ্ছিল। নির্বাচনী মাঠে নামার জন্য পারিপাশির্^ক যে পরিস্থিতির প্রয়োজন তার প্রায় সবকিছুই তৈরি করছিলেন রুহুল আমিন তরফদার। ফুটবলের স্পন্সরে বিপুল টাকা ব্যয় করেন তিনি। নিজের একটি ফুটবল ক্লাবও প্রতিষ্ঠা করেন। সাংগঠনিক দক্ষতাও দেখাচ্ছিলেন বেশ। কিন্তু ফুটবল নির্বাচন যখন কাছাকাছি এলো তখন রহস্যজনক কারণে নিজেকে ভোটের দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে নিলেন তিনি।
ঠিক কেন এবং কোন চাপের কাছে ভোটের লড়াইয়ে নামার আগেই মাঠ ছাড়লেন রুহুল আমিন তরফদার- সেই প্রসঙ্গে তিনি যে ব্যাখা দিচ্ছেন সেটা নেহাতই শিশুতোষ এবং ছেলে ভুলানো উপমা সদৃশ!
বাফুফের ১৩৯ জন ডেলিগেট শনিবার সকালে এজিএমের পর দুপুরে হোটেল সোনারগাঁওয়ে সামনের চার বছরের জন্য বাফুফের নতুন কমিটি নির্বাচন করবেন।
নতুন কমিটিতে সভাপতিও কি নতুন? “সালাউদ্দিনকে এই লড়াইয়ে হারাতে হলে মানিক অথবা বাদল রায়কে তাদের জীবনের সেরা ‘খেলা’ খেলতে হবে!
এই তিনজনই ফুটবলার হিসেবে ফুটবল মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়েছেন; এখন লড়ছেন ভোটের মাঠে!
সেরা নিউজ/আকিব