ধ্বংসস্তূপে দাড়িয়ে স্বজন হারানোর বিলাপ - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
ধ্বংসস্তূপে দাড়িয়ে স্বজন হারানোর বিলাপ - Shera TV
রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫০ পূর্বাহ্ন

ধ্বংসস্তূপে দাড়িয়ে স্বজন হারানোর বিলাপ

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২০

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
রোববার বিকেল। আকাশে ঝলমল করছিল সূর্যের উজ্জ্বল আলো। ৪১ বছর বয়সী আজারবাইজানের নাগরিক রোভশান আসগারোভ তখন দাঁড়িয়ে আছেন ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়ির সামনে।

তার চাপাশে শুধুই ধ্বংসস্তূপ। নিজেদের বাড়ি, প্রতিবেশীদের বাড়ি, পুরা পাড়া সবই ধ্বংস হয়ে গেছে আর্মেনিয়ার হামলায়। ইট, তার, কাঠ এবং অন্যান্য ধাতব পদার্থ, যার ওপর ভিত্তি করে একদিন তাদের প্রিয় আবাস গড়ে উঠেছিল। এখন সবকিছুই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।

ধুলোয় ঢেকে গেছে পছন্দের বাড়ি। বুকে লুকানো নীল কষ্ট। পরিত্যক্ত খেলনা, প্লাস্টিকের গাড়ি পড়ে আছে। যা এক সময় বাচ্চাদের ভীষণ আনন্দ দিত।

১৭ অক্টোবর রাত ১ টায় আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর সেন্ট্রাল গানজায় অবস্থিত তার বাড়িসহ আশপাশে গোলা হামলা চালানো হয়।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, আমিসহ পরিবারের সবাই ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ি। উচ্চস্বরে চিৎকার করছিলাম। যেন আমার আওয়াজ কেউ শুনতে পায়। প্রতিবেশীদের সহায়তায় আমি বেরিয়ে আসতে সক্ষম হই।

আর্মেনিয়ার বাহিনী যখন ওই এলাকায় হামলা চালায় তখন আসগারোভ পরিবারের ৮ সদস্য ঘরের মধ্যে ছিলেন।

তার বাবা সালিউদ্দিন, ছোট ভাই বাখতিয়ার, বোন সেভিল এবং তার ১০ মাস বয়সী কন্যা নারিন এবং আরেক ভাতিজি নিগার এবং  তার বড় বোনের মেয়েসহ মোট ৫ জন মারা যায়।

সুভাগ্যক্রমে তার স্ত্রী এবং ছোট ছেলে বাড়িতে ছিল না। কিন্তু তার বড় ছেলে ১৫ বছর বয়সী আমিন তখন বাড়ি ছিল।

‘আমি এখনো শুনতে পাচ্ছি, আমার ছেলে বলছে, বাবা আমাকে সহায়তা কর। আমাদের ছেলে আহত হয়েছে। সে এখন হাসপাতালে ভর্তি।’ বলেন রোভশান।

আমার মা সিলদুজ হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। মা এবং ছেলে এখনো জানে না পরিবারের ৫ সদস্যকে আমরা হারিয়েছে। আমার মায়ের স্বাস্থ্যের অবস্থা খুব একটা ভালো না। তাকে এ দুঃসংবাদ কিভাবে দেবো, জানি না।

গাজার স্থানীয় রাজনৈতিক মুশফিগ জাফারোভ জানান, ওই হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়। আহত হয় আরো ৫০ জন। হামলার জন্য আর্মেনিয়ার সমর্থিত বাহিনীকে দায়ী করেছে আজারবাইজান।

ইসলামে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী মৃত্যুর দিনই আসগোরোভ পরিবারের নিহত সদস্যদের দাফন করা হয়।

রোভমানের ভাই তৈমুর। ১৯ মাস বয়সী নারিনকে কবরে নামানোর আগে শক্ত করে বুকের সঙ্গে ধরে রেখেছিলেন তিনি।

সাদা কাফনে মোড়ানো ক্ষুদ্র শরীরটাকে ধরে তিনি তখন অঝোরে কাঁদছিলেন, শেষ সময় পর্যন্ত। ছবিটি ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যা যুদ্ধে জীবনের মূল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে।

তৈমুর আল জাজিরাকে বলেন, মা এবং বাচ্চাদের এক কবরে দাফন করা হয়েছে। আমার বড়বোনের মেয়ে নিগার যাকে আমরা হারিয়েছে, ১৮ অক্টোবর তার ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাকেও এ দিন দাফন করা হয়েছে।

তৈমুর গানজা শহরের অন্য পাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। বলেন, দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেক দূরে আমাদের বাড়ি। আর্মেনিয়ার রকেট হামলার শব্দে আমার ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছেলে হতবাক হয়ে পড়ে। এখনো সে ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না।

২৭ সেপ্টেম্বর আজারবাইজানের বসতি এবং সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায় আর্মেনিয়া। তারপর দু’পক্ষের মধ্যে নার্গোনো-কারাবাখ নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। নার্গোনো কারাবাখ আন্তর্জাতিকভাবে আজারবাইজানের ভূখণ্ড। কিন্তু আর্মেনিয়ার সহায়তায় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অঞ্চলটি দখল করে আছে।

রাশিয়ার মধ্যস্থতায় সংঘাত বন্ধে দুটি যুদ্ধবিরতি ব্যর্থ হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় তৃতীয় যুদ্ধবিরতি সোমবার রাত থেকে কার্যকর হয়। এটিও আগের দুটির মতো কার্যকরের কিছুক্ষণ পরই ভেস্তে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আজারবাইজানের বার্তা সংস্থা এপিএ জানিয়েছে, ১৭ অক্টোবর দেশটির গানজা শহরে হামলার দায়ে আর্মেনিয়ার সামরিক এবং রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বাকুর প্রসিকিউশন দফতর।

চলতি মাসে এ পর্যন্ত গানজা শহরে তিনবার হামলা চালিয়েছে আর্মেনিয়া। নিহত হয় ২৬ জন। এর মধ্যে ৬ শিশু এবং ১০ নারী রয়েছে।

১৭ অক্টোবরের হামলায় ৪১ বছর বয়সী রামিন গাহরামানোভ পরিবারের ৪ সদস্যকে হারিয়েছেন। তার মেয়ে লামান, বোন এবং তার দুই সন্তান এতে নিহত হয়।

চলতি বছর লামানের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হওয়ার কথা ছিল। স্নাতক সম্পূর্ণ করার আগেই আর্মেনিয়ার হামলায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে।

গাহরামানোভ জানান, দ্রুতগতির একটি রকেট তাদের বাড়িতে এসে আঘাত করে।

একদিন পর তার আত্মীয় স্বজন এসে ধ্বংসস্তূপ থেকে তাদের উদ্ধার করে। নিহতদের মরদেহ শনাক্তের মতো চিহ্নিও ছিল না।

বেঁচে যাওয়া কয়েকজন বাসিন্দা তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘর দেখতে এসেছেন। খুঁজছেন প্রয়োজনীয় কোনো জিনিসপত্র অক্ষত আছে কি না। এছাড়া প্রিয়জনের ব্যবহৃত কাপড়চোপড়, খেলনা সংগ্রহ করছেন। যা প্রিয়জনের স্মৃতির স্মারক হিসেবে জমিয়ে রাখবেন।

৪৫ বছর বয়সী রামিজ আগায়েভ তার বাবাকে হারিয়েছেন। বলেন, বাবা দ্বিতীয় তলা থেকে আমার উপরে পড়ে। আমি নিচ তলায় ছিলাম।

কয়েকদিন পর তিনি তাদের ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িটি দেখতে আসেন। বলেন, বাচ্চাদের জন্য শীতকালীন কিছু জামাকাপড় কেনা হয়েছিল। এখন সবকিছু ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে। সবকিছুই এখন মূল্যহীন। আমাদের গাড়িটিও। আত্মীয়দের আমি বলেছিল, প্রয়োজন হলে আমার গাড়িটি ব্যবহার করতে পারেন।

যারা ঘর হারিয়েছে তাদের জন্য নতুন বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আজারবাইজানের সরকার। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ক্ষতিগ্রস্তরা। আল জাজিরাকে ক্ষতিগ্রস্ত জানিয়েছেন, সরকারে তাদের নিশ্চিয়তা দিয়েছে, আরো ভালো উন্নতমানের আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে তাদের জন্য। আক্ষেপ করে তারা বলন, কেউ বলেনি হারিয়ে স্বজনকে পরিবারের কাছে ফেরত দেবে।

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360