ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের মধ্যে প্রায়ই সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা গেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এর বিপরীত চিত্র। সেখানে দু’দেশের লোকজন নিজেদের একই দক্ষিণ এশীয় প্রবাসীর অংশ মনে করেন।
তাই রাজনৈতিক প্রচারণার সময় প্রায়ই তাদের একসঙ্গে কাজ করতে দেখা যায়। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়। যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে বসবাস করেন এমন ভারতীয় ও পাকিস্তানিদের বেশিরভাগই এবার ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে জেতাতে এক ছাতার নিচে এসেছেন।
বিবিসি জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে এশিয়ান আমেরিকান এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের অভিবাসীর সংখ্যা ২ কোটির বেশি। তবে তাদের সবার ভোটার নিবন্ধন নেই। যুক্তরাষ্ট্রে বৈধ ভারতীয়র সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ এবং পাকিস্তানিদের সংখ্যা এর চেয়েও বেশি। তাদের অধিকাংশেরই বাস নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো ডেমোক্রেটিক-প্রধান অঙ্গরাজ্যগুলোয়।
পাকিস্তান ও ভারতীয় আমেরিকানদের ঝোঁক বরাবরই ডেমোক্র্যাটদের দিকে। ২০১৬ সালের এক জরিপে দেখা যায়, ৮৮ ভাগ পাকিস্তানি আমেরিকান এবং ৭৭ ভাগ ভারতীয় আমেরিকান ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিয়েছেন। আর মাত্র ৫ ভাগ পাকিস্তানি এবং ১৬ ভাগ ভারতীয় ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন।
এ বছরও উভয় দেশের অভিবাসীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন বাড়াতে একসঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। এটা শুধু প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নয়, সিনেট ও কংগ্রেসের আসন নিয়েও কাজ করছেন তারা। টেক্সাসে কংগ্রেসনাল জেলায় প্রতিনিধিত্ব করতে ভারতীয় আমেরিকান মানু ম্যাথিউজ এবং তার পাকিস্তানি আমেরিকান বন্ধু রাও কামরান আলী তাদের স্থানীয় গণতান্ত্রিক প্রার্থী ক্যান্ডেস ভ্যালেনজুয়েলার পক্ষে সমর্থন দিয়ে আসছেন। তাদের মধ্যে বন্ধুত্বের প্রসঙ্গে ম্যাথিউজ বিবিসিকে বলেন, আমরা চেষ্টা করি, যেসব বিষয়ে আমরা একমত হতে পারব না, সেসব বিষয়ে আলোচনা না করতে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ব্যক্তিগত সখ্য থাকলেও ট্রাম্পের অভিবাসী নীতির কারণে ভারতীয়সহ বেশিরভাগ প্রবাসীই তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া সম্প্রতি ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, ফ্যামিলি রিইউনিয়ন বা পারিবারিক পুনর্মিলন কর্মসূচি বাতিল করে মেধাভিত্তিক অভিবাসনব্যবস্থা চালু করবেন তিনি।
এর ফলে বিপুলসংখ্যক দক্ষিণ এশীয় অভিবাসী তাদের মা-বাবা ও সন্তানদের বাইরে অন্য নিকটাত্মীয়দের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন না। বারাক ওবামার আমলে ভারতীয় ও অন্যান্য দক্ষিণ এশীয়র জন্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে চাকরিপ্রাপ্তির যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল, ট্রাম্প তাতেও নিয়ন্ত্রণ এনেছেন। ভারতের সঙ্গে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্যব্যবস্থার একটি কর্মসূচিও ট্রাম্প বাতিল করেছেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারদের কাছে টানতে উঠেপড়ে লেগেছেন বাইডেনও। সম্প্রতি তিনি এক ভাষণে ভারতীয়-আমেরিকানদের উদ্দেশে বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী নীতির জেরেই মার্কিন মুলুকে ভারতীয়দের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে। এদিকে নির্বাচনী প্রচারে নামার আগেই অভিবাসী নীতি নিয়ে বড় ধাক্কা খান ট্রাম্প। এই ইস্যুতে সুপ্রিমকোর্টের কাছে মাথা নোয়াতে হয় তার প্রশাসনকে।
সুপ্রিমকোর্ট জানান, যেসব অভিবাসী ডিএসিএ-তে নিবন্ধিত রয়েছেন, তাদেরকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যাবে না। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পরিসংখ্যান অনুসারে, ডিএসিএ-এর আওতাভুক্তদের মধ্যে ভারতের ২ হাজার ৬৪০, বাংলাদেশের ৪৯০ ও পাকিস্তানের ১ হাজার ৩৪০ জন রয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে ভিজিট ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন।
পরাজন মানবেন না ট্রাম্প-বাইডেন সমর্থকরা : বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও ইপসোসের জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প ও বাইডেন সমর্থকদের প্রতি ১০ জনে ৪ জন বলেছেন, তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীর পরাজয় মেনে নেবেন না। ১৩-২০ অক্টোবর পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ৪৩ ভাগ বাইডেন সমর্থক ট্রাম্পের বিজয়কে মেনে নেবেন না।
অন্যদিকে ট্রাম্প যদি বাইডেনের বিজয় না মেনে নেন, তাহলে পুনরায় নির্বাচন চান ৪১ ভাগ আমেরিকান।
এদিকে ২২ শতাংশ বাইডেন সমর্থক এবং ১৬ শতাংশ ট্রাম্প সমর্থক বলেছেন, তারা তাদের পছন্দের প্রার্থী হারলে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করবেন। এমনকি সহিংসতায়ও লিপ্ত হতে পারেন তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন কর্মকর্তারা এই বছর এমন কয়েকটি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন, যা ফলাফলের প্রতি জনগণের আস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে।
সেরা নিউজ/আকিব