মসজিদের সাবমার্সিবল কিনতে ভিক্ষার জমানো টাকা দান করলেন ভিক্ষুক - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
মসজিদের সাবমার্সিবল কিনতে ভিক্ষার জমানো টাকা দান করলেন ভিক্ষুক - Shera TV
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৪১ অপরাহ্ন

মসজিদের সাবমার্সিবল কিনতে ভিক্ষার জমানো টাকা দান করলেন ভিক্ষুক

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:

জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই পা ও হাতের তালুতে ভর করে সরীসৃপ প্রাণীর মতো ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন উপজেলায়। ভিক্ষা করেই চলে জীবন। আর তার এই ভিক্ষার জমানো টাকা মসজিদে দান করা হয়েছে সাবমার্সিবল পাম্প কেনার জন্য। গত একমাস ধরে মুসল্লিরা সাবমার্সিবলের পানিতে ওজু করে মসজিদে নামাজ আদায় করছেন। যার কথা বলা হচ্ছিল তিনি হলেন- প্রতিবন্ধী মোজাম হোসেন। বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার মান্দা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম বাদলঘাটা মৎস্যজীবীপাড়ায়।

মোজাম হোসেন পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড়। তারা মৎস্যজীবী নিম্নবৃত্ত পরিবার। মাছ শিকার করেই চলে তাদের সংসার। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী তিনি। মেরুদণ্ড সোজা না হওয়ায় দুই পা ও হাতের তালুতে ভর চলে চলেন। ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। একসময় ভিক্ষাবৃত্তকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। একটি থলি কখনো গলায় ঝুঁলিয়ে বা কোমরে বেঁধে ভিক্ষা করে থাকেন।

সংসারে তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম মাছ শিকারসহ বিভিন্ন পেশা এবং ছোট ছেলে বাবু অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালান। তারা স্ত্রীসহ আলাদা সংসারে থাকেন। মেয়েকেও বিয়ে দিয়েছেন। প্রায় আট বছর আগে স্ত্রী সুফিয়ার সঙ্গে বনিবনা না হওয়া তাকে তালাক দিয়ে অন্যত্র চলে যান।

এরপর মোজাম হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে একটি টিনের ছাপড়া ঘরে বসবাস শুরু করেন। স্ত্রীকে নিয়েও মাঝেমধ্যে ভিক্ষা করেন। প্রতিদিন ভিক্ষা করে তার যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে হয়। আর ভিক্ষার থলিতে একটু একটু করে জমিয়েছেন টাকা। তা দিয়ে একমাস আগে বাড়ির পাশে পাড়ার মসজিদে মুসল্লিদের ওজুর কষ্ট দূর করতে সাবমার্সিবল পাম্প কিনে দিয়েছেন।

স্থানীয় প্রসাদপুর বাজারের বাসিন্দা আল ইমরান বলেন, মোজাম হোসেনকে অনেক আগে থেকেই দেখে আসছি ভিক্ষা করেন। কিছুদিন আগে বাজারে গিয়ে দেখি তিনি সাবমার্সিবল পাম্প কিনছেন। কেন কিনছেন- জানতে চাইলে বলেন মসজিদে দেয়ার জন্য। গরিব মানুষ মহৎ কাজ করেছেন। যুগযুগ বেঁচে থাক এমন মানুষ।

মোজাম হোসেনের বড় ছেলে শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মৎস্যজীবী গরিব মানুষ। সংসার চালাতে বিভিন্ন পেশার কাজ করতে হয়। বাবা ভিক্ষা করে সংসার চালান। টিনের একটা ছাপড়া ঘরে আলাদা থাকেন। বলতে গেলে কষ্ট করেই বাবা থাকেন।

মৎস্যজীবীপাড়ার প্রধান কামাল হোসেন বলেন, মসজিদের একটি নলকূপ আছে যা মাঝেমধ্যেই নষ্ট হয়। এতে মুসল্লিদের ওজু করতে সমস্যায় পড়তে হতো। অনেক আগে থেকেই তার ইচ্ছে ছিল মসজিদের জন্য কিছু একটা করার। সে ইচ্ছে থেকেই তিনি মর্টার কেনার জন্য প্রায় ১৬ হাজার টাকা দিয়েছেন। তার সঙ্গে আরও সাড়ে ১১ হাজার টাকা যোগ করে মর্টার বসানোর কাজটি সম্পন্ন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মসজিদে ৮০-৯০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে মসজিদে জায়গা সংকুলন হয় না। এ জন্য বাইরে মুসল্লিদের নামাজ আদায় করতে হয়। আমাদের ইচ্ছে আছে মসজিদ ভেঙে বড় পরিসরে করার। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকট থাকায় তা আর সম্ভব হচ্ছে না।

মান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, মোজাম হোসেন ভিক্ষা করেই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এলাকায় অনেক বিত্তবান আছেন যারা ইচ্ছে করলেই মসজিদের জন্য একটি সাবমার্সিবল দিতে পারতেন। আমি জনপ্রতিনিধি হয়েও সহযোগিতা করতে পারিনি। একজন প্রতিবন্ধী এবং ভিক্ষুক মসজিদের জন্য পূর্ণাঙ্গ পানির ব্যবস্থা করে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া অন্য কোনো সুবিধা তিনি পান না। এছাড়া যদি বসতবাড়ির প্রয়োজন হয়ে থাকে আমরা আগামী বরাদ্দে দেখব।

 

সেরা নিউজ/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360