সেরা নিউজ ডেস্ক:
আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে ট্রাম্পই আদালতে নিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন নির্বাচনকে। কিন্তু না। এবারই প্রথম নয়, এর আগে আরও দু’বার মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল প্রার্থীদের। দেখে নেয়া যাক সে দুটি নির্বাচনের আদ্যোপান্ত। দ্য কনভারসেশন।
বুশ-আল গোর সুপ্রিমকোর্টে (২০০০) : রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জর্জ ডব্লিউ বুশ ও ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোরের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা হয়। প্রায় সব রাজ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর নির্বাচনের জয়-পরাজয় নিশ্চিত করার জন্য নির্ভরশীল হয়ে ওঠে ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্য। এই অঙ্গরাজ্যে তখন বুশের ভাই জেব বুশ ছিলেন গভর্নর। তখন অনেক রাজ্যে পাঞ্চকার্ড ব্যালটের প্রচলন ছিল। ফ্লোরিডায় এই ভোট গণনা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়।
কিছু ক্ষেত্রে মনে হয় কেউ কেউ পছন্দের প্রার্থীকে না দিয়ে অন্য প্রার্থীকে ভুলে ভোট দিয়ে ফেলেছেন। আবার কেউ দুই প্রার্থীকেও ভোট দিয়েছেন। গণনার এক পর্যায়ে কিছু ভোট অনিষ্পন্ন থাকে এবং সেগুলো বাদ দিয়ে মাত্র ৫৩৭ ভোটের ব্যবধানে বুশ জিতেছেন বলে গভর্নর রায় দিয়ে দেন। শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ভোট গণনার জন্য আদালতে যান গোর।
ফ্লোরিডা সুপ্রিমকোর্ট সব ভোট গণনার পক্ষে রায় দেয়। এ পর্যায়ে এক মাসের বেশি সময় চলে যায় দ্বন্দ্বে। শেষ পর্যন্ত পুনরায় গণনা শুরু হলে কংগ্রেসের বসার দিন চলে আসায় ১২ ডিসেম্বর মার্কিন কেন্দ্রীয় সুপ্রিমকোর্ট ভোট পুনঃগণনা বন্ধের আদেশ দেন। আদালতের আদেশে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও হেরে যান ডেমোক্র্যাট আল গোর। বুশ এসে ইরাক ও আফগানিস্তন যুদ্ধ বাধান।
এবারের (২০২০) নির্বাচনে এমনটি হওয়ার আশঙ্কা নেই। কারণ জয়-পরাজয়ের স্পষ্ট ব্যবধান দেখা যাবে। সব ভোট গণনা হলে অনিষ্পন্ন ভোট ও অনিশ্চিত পরিবেশ থাকার আশঙ্কা নেই।
টিলডেন-হেইসের বহুমূল্যের সমঝোতা (১৮৭৬) : আমেরিকার গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার ১১ বছর পর সবগুলো রাজ্য পুনরায় কেন্দ্রীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়। দেশ পুনর্গঠন পূর্ণ মাত্রা পায়। ওই সময় ইউনিয়নপন্থী উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে রিপাবলিকানদের ঘাঁটি ছিল শক্ত। আর ডেমোক্র্যাটরা শক্তিশালী ছিল দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকান-আমেরিকান অধ্যুষিত রাজ্যগুলোতে। ওই বছর ডেমোক্র্যাটরা ওহাইও’র গভর্নর রুথারফোর্ড বি. হেইসকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী করে। অন্যদিকে ডেমোক্র্যাটরা প্রার্থী করে নিউইয়র্কের গভর্নর স্যামুয়েল টিলডেনকে।
ভোটের দিন দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকান-আমেরিকান অধ্যুষিত রাজ্যগুলোর রিপাবলিকান ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। ফ্লোরিডা, লুইজিয়ানা ও সাউথ ক্যারোলিনার- এই তিনটি দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যের নির্বাচনী বোর্ড আবার ছিল রিপাবলিকান প্রভাবান্বিত। তারা অনেকগুলো ভোট বাতিল করে হেইসকে ইলেক্টোরাল ভোট দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
১৮৫-১৮৪ ভোটে (তখন ইলেক্টোরাল ভোট কম ছিল, বর্তমানে ৫৩৮টি) জয়ী হন। কিন্তু ১৮৭৭ সালের জানুয়ারিতে এই ভোট আবার গণনার জন্য কংগ্রেসে পাঠানো হয়। সেখানে সাতজন করে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট সিনেটর এবং নিরপেক্ষ ইলিনয়সের বিচারপতি ডেভিড ডেভিস মিলে ১৫ জনের বোর্ড বসে।
কিন্তু ডেভিস ডেমোক্র্যাটদের মনোনীত ছিলেন এবং তিনি হঠাৎ পদত্যাগ করেন। তার জায়গায় রিপাবলিকান সমর্থিত বিচারপতি জোসেফ ব্রাডলি আসেন এবং ৮-৭ ভোটে রিপাবলিকান প্রার্থী হেইস প্রেসিডেন্ট হন। তখন দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয় যে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট হবেন এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ইতি টানবেন।
সেরা নিউজ/আকিব