সেরা নিউজ ডেস্ক:
মার্কিন নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয়ে পর বুধবার প্রথম প্রকাশ্যে আসেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের সরকারি কাজেরসূচি ইঙ্গিত করে বলা হচ্ছে, তিনি ছুটি ছাড়াই কাজে অনুপস্থিত থাকছেন। কাজকর্মে তার আগ্রহ খুবই কম। খবর এপি ও সিএনএনের।
সদ্যসমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তা মেনে নিতে নারাজ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে আরেক দফায় ক্ষমতায় থাকতে তিনি এখনও মরিয়া। এ জন্য ভোট নিয়ে আইনি লড়াইয়ের কথা তিনি বারবার বলে চলেছেন। নির্বাচনের পরপরই তিনি ভোট গণনা নিয়ে সুপ্রিমকোর্টে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এরপর বেশ কিছুদিন কেটে গেছে। প্রেসিডেন্টের সরকারি কাজের প্রতিও তার আগ্রহ নেই। এ সময়কালে তিনি এমন কোনো কাজ করেননি, যাতে মনে হয় তিনি এখনও যুক্তরাষ্ট্র চালাচ্ছেন।
সরকারি কাজে মনোযোগী হওয়ার পরিবর্তে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক ভিত্তিহীন দাবি করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া তাকে গলফের মাঠেও সময় কাটাতে দেখা গেছে। হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র অবশ্য ট্রাম্পের ঢিলেঢালা সরকারি কার্যসূচির পক্ষে সাফাই করেছেন। তার দাবি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সব দায়িত্বই পালন করছেন। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি জাড ডিয়ার বলেন, প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য কঠোর সংগ্রাম করছেন। একইসঙ্গে তিনি আমেরিকা ফার্স্ট নীতি বজায় রাখতে সব ধরনের দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে ট্রাম্প পরাজয় স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানানোয় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে এমন ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে যে, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করা একটা নিষিদ্ধ কাজ।
বাইডেনের কাছে পরাজয়ের পর প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে আসেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ‘ভেটেরানস ডে’ উপলক্ষে আর্লিংটন ন্যাশনাল সিমেট্রিতে যান তিনি। এ সময় তার পাশে ছিলেন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। এ অনুষ্ঠানে কোনো কথা বলেননি ট্রাম্প। নির্বাচনের ফলের দিন থেকে লোকচক্ষুর অনেকটা আড়ালেই ছিলেন তিনি। তবে বিভিন্ন টুইটবার্তায় তিনি এখনও দাবি করছেন, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য নির্বাচনে জয়-পরাজয়ই শেষ কথা নয়, তার জন্য দুঃসংবাদ তাড়া করছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাকে বেশ কিছু মামলা মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে বেশ কিছু ফৌজদারি মামলার সঙ্গে অপরাধজনিত মামলাও রয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাওয়া আইনি সুবিধা হারানোর পর ট্রাম্পের নাজুক ভবিষ্যৎ নিয়ে এর মধ্যেই কথা উঠেছে। ট্রাম্পের মামলাগুলোর মধ্যে উলেখযোগ্য একটি হল ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’ নিয়ে নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের তদন্ত। ব্যক্তি ট্রাম্পের ব্যবসার আড়ালে আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং কর ফাঁকি দেয়ার তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে এ তদন্তে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ডিসি এবং মেরিল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেলরা ব্যক্তিগত স্বার্থে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারের অভিযোগ করে আসছেন। এসব নিয়েও তদন্ত শুরু হবে। তার বিরুদ্ধে একাধিক নারীর ক্ষতিপূরণ মামলাও চাঙ্গা হয়ে উঠবে। এ ছাড়া ট্রাম্পের ভাইয়ের মেয়ে মেরি ট্রাম্পের একটি মামলাও ঝুলে আছে। জালিয়াতি করে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করে আসছেন মেরি।
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ক্ষমতা ছাড়ার আগে ট্রাম্প নিজেকে নিজেই ক্ষমা করার নির্দেশনায় স্বাক্ষর করতে পারেন। নিজেকে এমন ক্ষমা করার নির্দেশনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করতে পারেন কি না, এ নিয়েও সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই বা ইতিহাসে এমন কোনো নজিরও নেই। কোনো কোনো মার্কিন সংবাদমাধ্যমে বলা হচ্ছে, ২০ জানুয়ারির আগের দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। এ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবেই মাইক পেন্স ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়মুক্তি দিয়ে আদেশে স্বাক্ষর করবেন।
বুধবার ট্রাম্প তাঁর রাজনৈতিক ও হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার এ বৈঠকের উদ্দেশ্য- আইনগত কৌশলের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত এক ব্যক্তি জানান, পরাজয় স্বীকার করার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত দেননি ট্রাম্প। ট্রাম্পের শীর্ষ উপদেষ্টাদের সভায় ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, প্রচার ব্যবস্থাপক বিল স্টিফেন এবং উপদেষ্টা জেসন মিলার উপস্থিত ছিলেন।
সেরা নিউজ/আকিব