সেরা নিউজ ডেস্ক:
সৌদি আরব সম্পর্কে নিজের অবস্থান এরইমধ্যে স্পষ্ট করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী জো বাইডেন। এরমধ্যে সবথেকে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ইয়েমেন যুদ্ধের বিষয়টি। জো বাইডেন মনে করেন, ইয়েমেনে সৌদি আরব শিশু ও নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করছে। এ প্রসঙ্গে গত অক্টোবরে তিনি জানান, বাইডেন-হ্যারিস প্রশাসন সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুননির্মাণ করবে। একইসঙ্গে, ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদিকে সমর্থন দেয়া বন্ধ করা হবে এবং নিশ্চিত করা হবে অস্ত্র বিক্রি ও তেল ক্রয় করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার নীতি বিসর্জন না দেয়।
ডেমোক্রেট দল থেকেও একইধরণের বার্তা পাওয়া গেছে। গত সপ্তাহেই মার্কিন রিপ্রেজেন্টেটিভ রো খান্না টুইট করে জানিয়েছেন, ডেমোক্রেট দল ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদিকে সমর্থন দেয়া বন্ধ করছে। সৌদি আরবকে শাস্তি দিতে ডেমোক্রেটদের এমন প্রচেষ্টার কারণ স্পষ্ট।
ইয়েমেন যুদ্ধে ব্যাপক সংখ্যক মানুষকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে। ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যাও বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন এসব ইস্যুতে সৌদিকে সমর্থন দিয়ে যায়। ইরানের বিরুদ্ধে লড়তে একতরফাভাবে সমর্থন পেয়ে যায় সৌদি আরব। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সফরেই সৌদি আরবে যান ডনাল্ড ট্রাম্প। খাশোগি হত্যাকাণ্ডের জন্য তিনি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) দায়মুক্তি দিয়েছেন। অপরদিকে ডেমোক্রেট নেতারা প্রথম থেকেই এর পেছনে এমবিএস জড়িত বলে দাবি করে এসেছেন।
যদিও নির্বাচনি প্রচারণায় দেয়া প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবেই সৌদি আরবের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাইডেন তার সময়ে এসে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি মধ্যম রাস্তা অবলম্বন করবেন। রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রফেসর ক্রিস্টিয়ান উলরিকসেন বলেন, বাইডেন ক্ষমতায় এসে এমন একটা অবস্থা গ্রহণ করবে যেখানে সৌদি আরব আর পূর্বের মতো দায়মুক্তি পেয়ে যাবে না। এই কারণেই ইয়েমেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রকে আর সঙ্গে পাবেনা সৌদি আরব। তবে সৌদি আরবে অস্ত্রের যে বিরাট বাজার রয়েছে তাও হারাতে চাইবেনা যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসন নিশ্চিত করবে, সৌদি আরব যেনো অস্ত্র শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্যই ব্যবহার করে।
ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি আরবকে আনুষাঙ্গিক অস্ত্র ও গোয়েন্দা সমর্থন দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এটি বন্ধে সমর্থন দিয়েছিল কংগ্রেসের দুইটি হাউজই। তবে ট্রাম্পের ভেটোতে এই প্রস্তাব শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। তবে বাইডেন প্রশাসন এসে এই যুদ্ধ বন্ধে ইতিবাচকভাবে কাজ করবে বলে মনে করেন মার্কিন সিকিউরিটি কাউন্সিল প্যানেল অফ এক্সপার্টস অন ইয়েমেনের সাবেক সদস্য গ্রেজরি জনসেন। তিনি বলেন, হয়ত তখন যুক্তরাষ্ট্রই হবে একমাত্র রাষ্ট্র যে ইয়েমেন যুদ্ধ বন্ধে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করবে।
মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের একজন নন-রেসিডেন্ট স্কলার নাদোয়া দাওসারি। তিনি বলেন, ইয়েমেন যুদ্ধ নিয়ে বাইডেন প্রশাসন যা করবে তা নিয়ে এতো ইতিবাচক হওয়ার কিছু নেই। এখন ইয়েমেনে যে অবস্থা চলছে তাতে যে কোনো রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুতি ও ইরানের হাতেই নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে। ট্রাম্প সৌদি ও আরব আমিরাতের হাতে ইয়েমেনের ভাগ্য তুলে দিয়েছিলেন। আমি আশা করবো, বাইডেন প্রশাসন ঠিক তার উল্টোটা করতে গিয়ে ইরানের হাতে ইয়েমেনকে তুলে দেবে না।
সেরা নিউজ/আকিব