লাইফস্টাইল ডেস্ক:
বিশ্বাস ও ভালোবাসা মানব সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দুটি শব্দ/উপাদান। সম্পর্কে ভালোবাসা ও বিশ্বাস জীবনের জন্য অপরিহার্য। এগুলো দেখা বা ছোঁয়া যায় না। অনুভব করা যায় মাত্র। এরূপ অনুভূতির যেমন ইতিবাচক দিক রয়েছে, তেমনি এর নেতিবাচক বা বিরূপ প্রভাবও ডিজিটাল জীবনযাত্রায় কম লক্ষণীয় বিষয় নয়। আপেক্ষিক এসব বিষয় মানুষের জীবনের সুখ-দুঃখ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। মূলকথা হল, আপেক্ষিক এসব বিষয়ের ঘনত্ব বা স্থায়িত্ব কতটা। মনস্তাত্ত্বিক এসব বিষয় সমাজের নিু শ্রেণির মানুষের মধ্যে অনেকটা কম পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। কারণ তারা তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত থাকেন।
মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে করতে তারা ক্লান্ত। শান্তির ঘুম তাদের ঘুমের রাজ্যে নিয়ে যায়। স্বপ্নের রাজ্যের কথা তাদের ক্ষেত্রে কমই প্রযোজ্য হয়।
কারণ জীবন তাদের ‘স্বপ্ন’ শব্দটার সঙ্গে পরিচয় হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হতে দেয় না। বিশ্বাস-ভালোবাসা তাদের মধ্যেও রয়েছে। তবে এসব বিষয় তারা অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন মেটাতে ব্যবহার করে থাকে। যদিও এরূপ সবার ক্ষেত্রে ঘটে না। তাহলে ভিন্ন প্রেক্ষাপটের উদ্ভব হতো।
বর্তমান ডিজিটাল সমাজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সহজতর হওয়ায় এসব বিষয় এখন প্রতারণার নতুন ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার হতে দেখা যাচ্ছে।
একশ্রেণির প্রতারক চক্র ফেসবুকে সুন্দরী মেয়ে সেজে ছদ্মনামে অনেককে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। কেউ কেউ এসব ফাঁদে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ধরনের কিছু ঘটনা প্রকাশও পাচ্ছে।
বাবা-মা সন্তানকে ভালোবাসেন, এটাই চিরন্তন সত্য। তথাপি ব্যতিক্রম রয়েছে। দরিদ্র শ্রেণির বাবা-মা সন্তান একটু চলতে শিখলে তাদের কাজে লাগান নিজেদের চাহিদা মেটাতে। বাসাবাড়িতে কাজে পাঠান। সেখানে নির্যাতিত হন শিশুরা। তবুও এসব বাবা-মা সন্তানের কাজের বিনিময় অর্থপ্রাপ্তির যোগ চলমান রাখছেন।
ছিনতাই, পকেটমারের মতো ভয়ংকর পেশাতেও সন্তানদের ঠেলে দিচ্ছেন কিছু বাবা-মা। আবার প্রতিষ্ঠিত সন্তানরা ব্যস্ত নিজেদের নিয়ে। মা-বাবাকে দেয়ার মতো সময় বা গুরুত্ব কোনোটাই থাকছে না অনেক সন্তানের কাছে।
দীর্ঘদিন সংসার করার পর বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন করে শুরু করছেন অনেকেই। বিশ্বাসে টানাপোড়েন তাদের নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বিচ্ছিন্ন এমন কিছু ঘটনা ঘটলেও বাঙালি পরিবার ভালোবাসার বন্ধনেই গড়ে উঠেছে। চলছে ভালোবাসা আর বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করেই।
ধর্মীয় ও সামাজিক বন্ধন গড়ে ওঠা পরিবার-সমাজে বিশ্বাস-ভালোবাসার উপস্থিতি দৃশ্যমান। মানুষের কষ্টে কেঁদে ওঠে মানুষের মন; আনন্দে হাসেন।
দুঃখ ভাগাভাগি করছেন অনেকেই। এতিম-অসহায় দুস্থদের কল্যাণে কাজ করছেন অনেকে। কিছু মানুষ লোক দেখানো বা সমাজসেবার মুখোশে থাকলেও অনেকে ভালোবেসেই করছেন।
সন্তানদের ভালোবেসে ঘুষ-দুর্নীতি করে ইমারত গড়ছেন অনেকেই। স্ত্রী-সন্তানের পাবলিক যানবাহনে কষ্ট হবে বলে ধান্দাবাজি করে গাড়ি কিনছেন।
ভালো ভালো খাবারের ব্যবস্থা করছেন স্ত্রী-সন্তানের জন্য। এরূপ নজির প্রচুর রয়েছে। মিডিয়ার সুবাদে এসব এখন দৃশ্যমান। মানবপ্রেম সেখানে মুখ থুবড়ে পড়ছে; আত্মকেন্দ্রিক ভালোবাসার প্রেক্ষাপট সমাজে চলমান। এটিও এক ধরনের ভালোবাসা। পরিবারকেন্দ্রিক ভালোবাসায় পারিবারিক বিশ্বাসের ভিত্তি অনেকটাই মজবুত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।
গবেষণায় দেখা যায়, ভালোবাসা, বিশ্বাস- এসব আপেক্ষিক বিষয়কে কমান্ড করছে ব্রেন। আবেগঘন ব্রেনের কমান্ডের ফলে সৃষ্টি হয় ভালোবাসা বা বিশ্বাস।
অনেক ক্ষেত্রে ব্রেনের সক্ষমতা কম থাকলেও এসব উপাদান মাথাচাড়া দিয়ে থাকে। মানুষের মধ্যে এডিকশন (নেশা) আকারে বিরাজ করে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মেয়েদের ব্রেন এরূপ কমান্ডে আবদ্ধ থাকে বেশি। পুরুষরা নানা কাজের মাঝে থাকায় এ ধরনের বিষয়ে লেগে থাকা তাদের ঠিক হয়ে ওঠে না।
নারী-পুরুষ প্রেমের ক্ষেত্রে যা দৃশ্যমান হয়ে ফুটে ওঠে- মেয়েরা যাকে ভালোবাসে তাদের মঙ্গল কামনায় ব্রত রাখতে শুরু করে।
পুরুষের মতো তাদের মাথা থেকেও ভালোবাসার মানুষগুলোর বিস্মৃতি ঘটে; কিন্তু সেই বিস্মৃতিকে গুরুত্ব না দিয়ে প্রিয়জনের কষ্টের কথা চিন্তা করে নিজের পছন্দ-অপছন্দ বিসর্জন দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে পুরুষরা সেটি মেয়েদের দুর্বলতা ভেবে নিজেদের পৌরুষত্বের দাম্ভিকতার পরিচয় দিতে শুরু করেন।
সম্পর্কের স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়জনের অহঙ্কারী মনোভাব নারীর মনের ব্যথার কারণ। আর ব্যথা থেকে বিচ্ছেদ। এ বিষয়ে বাস্তবমুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে সম্পর্কের স্থায়ী রূপ দেয়া সম্ভব।
সম্পর্কের স্কেল কথাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মগ্রন্থ, আইন বা সমাজ নির্ধারিত একটি নির্দিষ্ট স্কেলেই পরিচালিত হয় এসব সম্পর্ক। তাই সম্পর্কে বিশ্বাস রাখা জরুরি। তাছাড়া অর্জন কথাটা সম্পর্ক, বিশ্বাস বা ভালোবাসার ক্ষেত্রে অনস্বীকার্য। প্রত্যেক মানুষ তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে অন্যের মনে জায়গা করে নেয়। সম্পর্কে বিশ্বাস ও ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের নিজস্ব অর্জন।
আপনি যখন সবাইকে ভালোবাসবেন, মানুষের কল্যাণে কাজ করবেন; তখন মানুষের কাছ থেকে তেমনটাই ফেরত পাবেন। যোগ হবে ঈশ্বরের সন্তুষ্টি, সঙ্গে ঈশ্বর প্রেমও।
আফরোজা আঁখি : প্রাবন্ধিক
সেরা টিভি/আকিব