স্টাফ রিপোর্টার:
পদ্মা সেতুতে ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ার বা খুঁটির ওপর বসানো হলো ৪১ তম স্প্যান। বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের পূর্ণাঙ্গ অবয়বে মাথা তুলে দাঁড়ালো। আর এর সঙ্গে সঙ্গে প্রমত্তা পদ্মার বুকে বিজয়ের মাসে লেখা হয়ে গেলো আরেকটি ‘ঐতিহাসিক জয়ের আখ্যান’।
দুপুর ১২টা ২মিনিট, ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার; দিনটাকে ঐতিহাসিক না বলে পারা যাচ্ছে না। পদ্মার ওপর এই জয়ের আখ্যান লেখা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালের ১০ জুলাই। বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগে পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এদিন ‘কার কাছে হাত পেয়ে সহায়তা নয়, নিজস্ব অর্থায়নে’ পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এরপর কত সমালোচনা, গুজব, বাধা বিপত্তি, সর্বগ্রাসী পদ্মাকে বাগে আনার সাফল্যসহ মহাকাব্য রচনা করে আজকের এই সাফল্যের দিনটি এলো।
পদ্মা সেতুতে প্রথম স্প্যান বসানো শুরু হয় ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর। তিন বছরে বসলো ৪১টি স্প্যান। সবশেষ ৪১ তম স্প্যানটি বসানোকে ঘিরে পদ্মা পাড়ে আজ ছিলো উচ্ছ্বাসের আমেজ। উচ্ছ্বাস তো হবে, তীরবর্তী এসব মানুষের কেউ কেউ বছরের পর বছর পদ্মার কড়ালগ্রাসে হারিয়েছেন সর্বস্ব। আজ তারাই দেখছেন উত্তাল পদ্মাকে হারিয়ে স্থাপন হয়েছে ‘এক জয়ের নিশান’।
তবে পদ্মার পাড়ের মানুষের এ উচ্ছ্বাস শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর। ওইদিন নির্মাণে কাজের উদ্বোধনের পর থেকেই সেতুর নির্মাণ কাজ নিয়ে আগ্রহ উত্তেজনা ছিল মানুষের মধ্যে। সেই থেকে সেতুকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছে পদ্মার পাড়সহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। তো আজকের দিনটা তাদের কাছে শুধু ঐতিহাসিক না, নানা দিক থেকে গুরত্বপূর্ণও বটে!
তবে এই সাফল্যের কর্তৃত্ব যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের উপর। প্রধানমন্ত্রীর এই দৃঢ় অঙ্গীকারের ফলে নানা সমালোচনা ও দুর্গম পথ অতিক্রম করে আজ বিশাল কর্মযজ্ঞের শেষ প্রান্তে বাংলাদেশ। জয় করেছেন দুর্নীতির অপবাদ ঘুচিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ভৌগলিক বিভেদ।
‘পদ্মা সেতু আমাগো গর্বের সেতু। সরকার বিরাট কাম ঘটাইছে। ভাবা যায়না সেতু বাস্তব হচ্ছে। আমরা ১৫ বছর ধরে মাওয়া ঘাটে ফল বিক্রি করি। সেতু হলে হয়ত এখানে থাকতে পারব না। কিন্তু পদ্মা সেতু যে দ্যাশের অহংকার। কত মানুষের উপকার হবে। আমি একটা করে খাওয়ার ধান্দা ঠিক করে নিবোনে। সেতু হওয়াতে বলে বোঝাতে পারবনা কতটা খুশি।’
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজের সরজমিনে রিপোর্ট করতে গিয়ে প্রতিবেদকের কাছে এভাবে নিজের ভাব প্রকাশ করলেন মাওয়া ঘাটের ফল বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন। আজকে হয়ত আনোয়ার হোসেনের মতো অনেকের দূর থেকে বিশাল পদ্মার বুকে দুই পার জুড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে গর্বে বুকে ছাতিটা বড় হচ্ছে। আচ্ছা এই স্বপ্ন জয় কি শুধুই গর্বের, নাকি দীর্ঘ যাত্রার এই গল্পটা বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের মাথা আরেকবার উঁচু করলো। গোটা দুনিয়াকে জানান দিলো-১৬ কোটি মানুষের দেশটি শুধু স্বপ্ন দেখেই না, মাথা উঁচু করে সেই পূরণ করতেও পারে।
সেরা টিভি/আকিব