ভয়াবহ দরপতন শেয়ারবাজারে - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
ভয়াবহ দরপতন শেয়ারবাজারে - Shera TV
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৫৬ অপরাহ্ন

ভয়াবহ দরপতন শেয়ারবাজারে

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

অর্থ বাণিজ্য ডেস্ক:

টানা দু’দিন ভয়াবহ দরপতনে শেয়ারবাজারে আতঙ্ক বিরাজ করছে। দিশেহারা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। যৌক্তিক কারণ না থাকলেও দেশের দুই শেয়ারবাজারে গত দুই দিনে দুই-তৃতীয়াংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। যেসব শেয়ারের দরপতন হয়নি, তার সিংহভাগের দরপতনের কোনো সুযোগই ছিল না। কারণ সেগুলোতে ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া আছে।

গত দু’দিনই নয়, গত এক মাস ধরে কমবেশি দরপতন চলছে। তবে মাত্রা কম থাকায় বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হননি। গত দু’দিনে নির্বিচার পতনের কারণে সবাই হতবাক হয়ে গেছেন। এ দু’দিনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স হারিয়েছে পৌনে ৫ শতাংশ। বেঞ্চমার্ক সূচক ডিএস-৩০ এর পতন হয়েছে আরও বেশি, প্রায় ৭ শতাংশ।

চলতি দরপতনকে অনেকে তুলনা করছেন গত বছরের করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে। করোনা মহামারির শুরুর পর অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়ে। ধসে পড়ে শেয়ারবাজার। অবশেষে ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণ ও বাজারে লেনদেন স্থগিত রাখা হয়। এখন সেই ভয়াবহ পরিস্থিতির সঙ্গে বাজারকে অনেকে তুলনা করছেন।

যদিও এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। করোনার টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধে দৃশ্যমান অগ্রগতি আছে এবং অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে দরপতনের যৌক্তিক কোনো কারণই কেউ খুঁজে পাচ্ছেন না, তাই মেনেও নিতে পারছেন না।

নিয়ন্ত্রক সংস্থায় নতুন চেয়ারম্যান আসায় বাজারে গতি এসেছিল। অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন। এ সময় অনেকে বুঝে বা না বুঝে, উচ্চ মূল্যের শেয়ার কিনেছেন। আইপিও শেয়ারের দর আকাশচুম্বি হয়। বীমা খাতের কিছু শেয়ারের দর রাতারাতি ১০-১৫ গুণ হয়। পরবর্তী সময়ে মিউচুয়াল ফান্ডও একই ধারায় চলে। সর্বশেষ বৃহৎ মূলধনি কোম্পানির বেশ কিছু শেয়ারকে ঘিরে নানা গুজব ও গুঞ্জনে ওইসব শেয়ারও রাতারাতি ৫-৬ গুণ দর বেড়ে যায়। এখন রাতারাতি এসব শেয়ারের দাম পড়ে যাচ্ছে। আর নিস্ব হচ্ছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা।

ভয়াবহ এই পতনের জন্য কয়েকটি কারণ রয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। চলতি বছরের শুরুতে করোনাভাইরাসের টিকা বাংলাদেশ কবে পাচ্ছে- এ নিয়ে একের পর এক বিভ্রান্তিকর খবর ও গুজবে ছন্দপতন হয় শেয়ারবাজারে। তারপর একে একে নানা নেতিবাচক ইস্যু তৈরি হতে থাকে। মার্জিন ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়া, নতুন ব্রোকারেজ লাইসেন্স ইস্যুর ঘোষণাসহ নানা ইস্যুর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে তারা মনে করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ থেকে বিরত আছেন। অর্থাৎ পতন ঠেকাতে দৃশ্যমান বাস্তব উদ্যোগ নেই। এমনকি সাধারণত দরপতনের সময় বিনিয়োগ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা থাকলেও এখন রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আইসিবিসহ সরকারি ব্যাংক সে ভূমিকায় নেই।

জানা গেছে, রোববারের বড় দরপতনের পর সোমবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি ছিল শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। উভয় প্রতিষ্ঠানের সার্ভিল্যান্স বিভাগ এবং মার্কেট মনিটরিং দল সকাল ১০টায় লেনদেন শুরুর আগে থেকেই তৎপর হয়। তাতে কোনো লাভ হয়নি। মাত্র ২৩টি শেয়ারের দরবৃদ্ধির বিপরীতে ২৩৬টিরই দরপতন হয়েছে গতকাল। যে ৯১টির দর অপরিবর্তিত ছিল, তার ৮২টিরই ফ্লোর প্রাইসের কারণে দরপতনের সুযোগ ছিল না।

বাজার-সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গুজব আছে- আলজাজিরায় প্রচারিত বাংলাদেশ সম্পর্কিত সিরিজ তথ্যচিত্র পরের পর্বটি আর্থিক খাতে অনিয়ম দুর্নীতিসহ শেয়ারবাজার নিয়ে। সেখানে সরকারের প্রভাবশালী দু’একজন ব্যবসায়ীর প্রসঙ্গও আসতে পারে। এ গুজবকে কেন্দ্র করে অনেকে শেয়ার বিক্রি করছেন।

মার্জিন ঋণের সুদহার বেঁধে দেওয়াকেও বড় কারণ বলে মনে করেন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তা জানান, মার্জিন ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ১২ শতাংশ বেঁধে দিয়ে নির্দেশনা জারির পর গত জানুয়ারিতেই অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মার্জিন ঋণ প্রদান বন্ধ করে দিয়েছিল। এর প্রভাবে বাজারে তারল্য প্রবাহে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কারণ, ব্যক্তি শ্রেণির প্রায় সব বড় বিনিয়োগকারী মার্জিন ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনাবেচা করেন। তাদের শেয়ার কেনাবেচা বাজারকে বেশি প্রভাবিত করে। মার্জিন না পাওয়ায়, তাদের বিনিয়োগ সীমিত হয়ে পড়েছে।

অবশ্য সংশ্নিষ্টদের দাবির মুখে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঋণের সুদহার কার্যকরের সময়সীমা পিছিয়ে আগামী জুলাইতে কার্যকর করেছে।

এদিকে ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন অনুযায়ী নতুন করে ব্রোকারেজ হাউসের লাইসেন্স বিক্রির বিষয়ে অগ্রগতি জানতে বিএসইসি থেকে স্টক এক্সচেঞ্জকে চিঠি দেওয়ার পর সম্প্রতি ডিএসই এ লাইসেন্স বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। এ খবরে কিছুটা অসন্তোষ আছে বর্তমান ব্রোকারেজ হাউসের মালিকদের। তাদের ভাষ্য, দেশের শেয়ারবাজারের আকারের তুলনায় ব্রোকারেজ হাউস কয়েক গুণ। নতুন ব্রোকারেজ হাউস হলে ব্যবসা কমবে। গুজব আছে, এ প্রক্রিয়া বন্ধ করতে চাপ দেওয়ার অংশ হিসেবে দরপতনকে উসকে দিচ্ছেন কেউ কেউ।

চলতি দরপতন বিষয়ে এর বাইরে বড় যুক্তি হলো- সাম্প্রতিক সময়ে শেয়ারবাজারের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধি। সংশ্নিষ্টদের ভাষ্য, বাজার সূচক কয়েক মাসের মধ্যে ৪০০০ পয়েন্ট থেকে বেড়ে ৬০০০ পয়েন্টে উঠেছিল। গত ২১ জুন যেখানে ডিএসইতে একদিনে মাত্র ৩৮ কোটি টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল, এর মাত্র ছয় মাস পর গত ৫ জানুয়ারি এ বাজারে একদিনের শেয়ার কেনাবেচা দুই হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়, যা ছিল এর আগের প্রায় ১০ বছরের সর্বোচ্চ। কিছু শেয়ারের বাজারদর রাতারাতি লাগামহীন হয়, বেড়ে হয় ৫ থেকে ১৫ গুণ। মুনাফা নিতে কৌশলী ও বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করলে দরপতন শুরু হয়। এতে সূচকও ক্রমাগত কমতে থাকে। আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা দরপতনের ভীতি থেকে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।

জানতে চাইলে শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, এটা ঠিক বাজার থেকে ‘স্মার্ট মানি’ বের হয়ে যাচ্ছে, অর্থাৎ মুনাফা নিতে কৌশলী বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রি করছেন, তারা অনেক কম দামে শেয়ার কিনেছিলেন। এ কারণে বড় শেয়ারের দরপতনের কারণ এটা হতে পারে। তবে সার্বিকভাবে সোমবারের বড় দরপতনের যুক্তি নেই, এটা অপ্রত্যাশিত।

তবে বাজার সূচক ৫৯০০ পয়েন্টে যাওয়ার পর কিছুটা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এখন যা হচ্ছে তা বেশিই হচ্ছে। যেসব বিনিয়োগকারী কোনো যুক্তি ছাড়া আইপিও শেয়ার এবং গুজবে কান দিয়ে ৫ গুণ ৭ গুণ বেশি দরে শেয়ার কিনেছিলেন, তারা এখনই মাথা চাপড়াচ্ছেন।

চলতি দরপতনকে ‘ইচ্ছাকৃত দরপতন’ বলেও মনে করেন কেউ কেউ। দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে শেয়ারবাজার আরও ভালো করার কথা। এ অবস্থায় প্রভাবশালীদের অনেকে বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছেন। কিন্তু শেয়ারদর অনেকটা বাড়তি থাকায় তারা সুযোগ পাচ্ছেন না। এজন্য কৌশলে দরপতনকে উসকে দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিবিএ সভাপতি বলেন, অতীতে এমনটা হয়েছে। হয়তো তার কারণে মানুষ এমনটা ভাবছে। তিনি আরও বলেন, সুশাসন ফেরানোর আশ্বাসে বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারে এসেছিলেন। এখন কেউ টাকা লুটের ব্যবস্থা করলে এবং সার্ভিল্যান্স বিভাগ তা না ধরলে মানুষ আবার মুখ ফিরিয়ে নেবে। বিনিয়োগকারীদের টানতে এবং বাজারকে সক্রিয় রাখতে শেয়ারবাজার লেনদেনে সত্যিকারের নজরদারি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা পতন অব্যাহত থাকবে।

সেরা টিভি/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360