অনলাইন ডেস্ক:
প্রেমিকদের জন্য একটি সুখবর। গবেষকদের মতে, পুরুষের হাড় মজবুতের সঙ্গে প্রেমের এক অদ্ভুত সম্পর্ক রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক পুরুষের হাড় মজবুতে ভূমিকা রাখে।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া লস অ্যাঞ্জেলেসের গবেষকরা তাদের গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন, যেসব পুরুষেরা দীর্ঘসময় প্রেমের সুসম্পর্কে ছিলেন তাদের হাড় তুলনামূলক মজবুত ছিল। গবেষকরা এটা দেখে বেশ অবাক হন যে, দীর্ঘমেয়াদি বন্ধনে একমাত্র সেসব পুরুষদের হাড়ই উপকৃত হয়েছিল যারা সঙ্গীনির কাছ থেকে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও সমর্থন পেয়েছিল। নামমাত্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে পুরুষদের হাড়ে এরকম উপকারী প্রভাব পড়েছে বলে জানা যায়নি।
তবে শুধু এটাই নয়, প্রেমে পড়ার আরও কিছু ইতিবাচক-নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া উঠে এসেছে একাধিক গবেষণায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব তথ্য।
* হার্টের স্বাস্থ্যে উন্নতি আসে
ডিউক ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের একটি গবেষণা বলছে, প্রেমের সম্পর্ক অথবা বৈবাহিক সম্পর্ক স্বাস্থ্যের উন্নয়নসাধনের মাধ্যমে জীবনের আয়ু বাড়াতে পারে। নিউ ইয়র্কে অবস্থিত এনওয়াইইউ ল্যানগোন মেডিক্যাল সেন্টারের গবেষণা মতে, নারী-পুরুষ তথা প্রেমিক-প্রেমিকার সুসম্পর্কে হার্টের কার্যক্ষমতা বাড়ে। গবেষণাটি ধারণা দিয়েছে, প্রেমে সুসম্পর্ক বিরাজমান থাকলে হার্ট ও রক্তনালী সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি ৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তবে এটাও সত্য যে প্রেম করলে ব্রোকেন হার্টেরও ঝুঁকি রয়েছে। ব্রোকেন হার্ট হলে হার্টে স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে।
* ব্যথা কমাতে পারে
নারী-পুরুষের আবেগপূর্ণ সুসম্পর্ক কেবল মনের জ্বালাই দূর করে না, এমনকি শরীরের ব্যথা কমাতে ওষুধের মতো কাজও করতে পারে। স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের গবেষণা বলছে, নারী-পুরুষের ভালো সম্পর্কে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা কিছু না কিছু কমতে পারে। কিভাবে? এ প্রসঙ্গে গবেষকরা জানান, ভালোবাসার পরম অনুভূতি মস্তিষ্কের সেই অংশকে সক্রিয় করে যা ব্যথানাশক ওষুধ সেবন করলে সক্রিয় হয়। তাই বলে আমরা এটা আশা করতে পারি না যে চিকিৎসকেরা ওষুধের পরিবর্তে প্রেমকে প্রেসক্রাইব করবেন। কিন্তু আমরা আশাবাদী হতে পারি যে ভালোবাসায় কিভাবে নিউরাল-রিওয়ার্ড প্যাথওয়ে উদ্দীপ্ত হয় তার বোধগম্যতা শারীরিক ব্যথা উপশমের নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনে সহায়তা করবে।
* সৃজনশীলতা বাড়তে পারে
অনেক বিখ্যাত লেখক অথবা শিল্পী তাদের সফলতার অনুপ্রেরণা হিসেবে প্রেমের ব্যর্থতাকে ক্রেডিট দিয়েছেন। কিন্তু জার্নাল অব ফ্যামিলি ইস্যুতে প্রকাশিত গবেষণা বলছে যে কেবল ব্যর্থতা নয়, প্রেমের সফলতাও সৃজনশীলতাকে প্রজ্বলিত করতে পারে। গবেষকদের মতে, প্রেমে পড়ার পর অনেকে স্বল্পমেয়াদের পরিবর্তে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যের ওপর ফোকাস করেন। ভবিষ্যতে মনের মানুষকে নিয়ে সুখে সংসার করার প্রয়াসে কিছু প্রেমিকের মনে এত শক্তিশালী তাড়না আসে যে জীবনের লক্ষ্য অনুসারে কাজেকর্মে বেশ মনোযোগী হয়ে পড়েন, যা তাদেরকে সফলতার চূড়ায় তুলে দেয়। কোনো কাজে মনোযোগী হলে ওই কাজে সৃজনশীলতা বাড়ে আর সৃজনশীলতায় সফলতার সম্ভাবনা উপরের দিকে ওঠে।
* ওজন বাড়তে পারে
প্রেমের সুখময় সম্পর্কে প্রেমিক-প্রেমিকার ওজন কিছুটা বেড়ে যেতে পারে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে এটার সত্যায়ন বেশি। জার্নাল অব ওবেসিটিতে প্রকাশিত রিভিউতে গবেষকরা বলেছেন, প্রেমের বন্ধনে জড়ালে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সম্পর্কিত অন্যান্য গবেষণাও একথাকে সমর্থন করছে। কিন্তু প্রেমে পড়লে ওজন বাড়ে কেন? এর একটি দৃশ্যমান কারণ হলো- বেশি করে উচ্চ চর্বি, উচ্চ চিনি ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া। প্রেমিক-প্রেমিকা রেস্টুরেন্ট গিয়ে যেসব খাবার খায় তাতে জিহ্বা সন্তুষ্ট হলেও শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এসব খাবারে কেবল স্থূলতার ঝুঁকিই বাড়ে না, বিভিন্ন রোগও সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া গবেষণায় দেখা গেছে, স্থূলতা নিজেই কিছু মারাত্মক রোগের কারণ হতে পারে।
* ঘুমের সমস্যা হতে পারে
প্রেমে পড়ার প্রাথমিক স্তরে ঘুমের চক্র নিদারুণ ব্যাহত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যেসব খাঁটি প্রেমিক-প্রেমিকা জীবনে প্রথমবার একসঙ্গে সময় কাটিয়েছে ওই রাতে তাদের চোখে সহজে ঘুম আসবে বলে মনে হয় না। সুখের স্মৃতিগুলো জাবর কাটতে কাটতে কোনদিকে যে সকাল হয়ে যায় সে খেয়ালও থাকে না। কিশোর-কিশোরীদের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, প্রেমের প্রারম্ভিক পর্যায়ে মনের ভেতর এতবেশি সুখানুভূতির জোয়ার আসে যে সকালে ও বিকালে নিজেকে সচরাচরের চেয়ে বেশি তেজোদীপ্ত ও ইতিবাচক মনে হয় এবং রাতে সুখময় স্মৃতিচারণ ও আকাশ কুসুম কল্পনায় ঘুম আর আসতে চায় না। কারো ক্রাশে পড়ার পর তাকে কিভাবে আপন করে নেয়া যায় তা ভাবতে ভাবতেও অনেকের রাত নির্ঘুমে কেটে যায়।
* ব্রোকেন হার্ট হতে পারে
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ব্রোকেন হার্টে একজন প্রেমিক বা প্রেমিকার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটা কোনো গালগল্প নয়, এর পেছনে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে। ব্রোকেন হার্টের বৈজ্ঞানিক পরিভাষা হলো ‘স্ট্রেস-ইনডিউসড কার্ডিওমায়োপ্যাথি’। সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান মানুষও ব্রোকেন হার্টে মারা যেতে পারেন। আবেগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো মানসিক চাপপূর্ণ ঘটনার (যেমন- প্রিয়জনের মৃত্যু, বিবাহবিচ্ছেদ অথবা ব্রেকআপ) প্রেক্ষিতে স্ট্রেস হরমোন প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হলে ব্রোকেন হার্ট হয়ে থাকে। ব্রোকেন হার্টের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের মতো উপসর্গ প্রকাশ পেতে পারে, যেমন- শ্বাসকষ্ট, অনিয়মিত হৃদস্পন্দন ও বুক ব্যথা। কিছুক্ষেত্রে ব্রোকেন হার্ট থেকে হার্টে স্থায়ী ক্ষতি হলেও অধিকাংশ স্ট্রেস-ইনডিউসড কার্ডিওমায়োপ্যাথির কেসই চিকিৎসাযোগ্য ও কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি নিরাময় সম্ভব।
* সম্পর্কের শুরুতে যৌনকামনা সর্বোচ্চ থাকে
সম্পর্কের প্রারম্ভিক পর্যায়ে প্রেমিক-প্রেমিকারা সংকোচ বা লজ্জায় একে অপরকে স্পর্শ থেকে বিরত থাকে, কিন্তু বাস্তবতা হলো এসময় উভয়ের মধ্যে যৌনাকাঙ্ক্ষা সর্বোচ্চ থাকে। জার্নাল অব সেক্স অ্যান্ড ম্যারিটাল থেরাপিতে প্রকাশিত গবেষণা বলছে, সময়ের আবর্তনে তথা সম্পর্ক পুরোনো হতে থাকলে উভয়েরই যৌনকামনা কমতে থাকে। বিশেষ করে নারীদের পক্ষে দীর্ঘসময় যৌনাকাঙ্ক্ষার ‘সর্বোচ্চ পর্যায়’ ধরে রাখা সম্ভব হয় না। কানাডার অন্টারিওতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব জিউলফের গবেষকরা ১৭০ জন নারী-পুরুষের ওপর জরিপ চালিয়ে জানতে পারেন, সম্পর্কে জড়ানোর পর পুরুষদের তুলনায় নারীদের যৌনকামনা দ্রুত হ্রাস পায়।
সেরা টিভি/আকিব