অনলাইন ডেস্ক:
করোনা প্রতিরোধী টিকা নেয়ার পরও কোভিড-১৯’এ আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। টিকা নিয়েও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব মো. মোহাসীন। ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম ও হাসপাতালে ভর্তি। প্রশ্ন উঠেছে – টিকা নেয়ার পরেও কেন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ?
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা অবশ্য খুব একটা অবাক নন। কারণ, এই টিকার প্রকৃতি।
অন্য সব টিকার তুলনায় করোনার টিকার প্রকৃতি ভিন্ন। সুরক্ষার জন্য এই টিকা নিতে হবে দুটি। আর তাতেও শতভাগ সুরক্ষা মিলবে এমন নয়। বাংলাদেশ যে টিকা এনেছে সেটি প্রথম ডোজের পর ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ কার্যকর বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। আর দ্বিতীয় ডোজ দিলে সেটি ৯০ শতাংশ হতে পারে।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি গণটিকা শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৪২ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছে। নিবন্ধন হয়েছে ৫৪ লাখ।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম টিকা দেয়ার আট সপ্তাহ পরে দেয়া হবে দ্বিতীয় টিকা, যে সময় এখনও আসেনি। ফলে এই টিকা থেকে সর্বোচ্চ যে সুরক্ষা পাওয়ার কথা, তা এখনও হয়নি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সায়েদুল রহমান মনে করেন টিকা নিলেও তিন কারণে মানুষ করোনায় আক্রান্ত হতে পারে।
তিনি বলেন,
১. টিকা দেয়ার আগে ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত আছেন কি না সেটা পরীক্ষা করা হচ্ছে না। ফলে অনেক আক্রান্ত ব্যক্তিকেও টিকা দেয়া হচ্ছে।
২. টিকা নিতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে গিয়েও অনেকে আক্রান্ত হচ্ছেন।
৩. যারা টিকা নিচ্ছেন তারা অনেকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন না। যে কারণে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়ার আগেই তারা আক্রান্ত হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাশার খুরশীদ আলম বলেন, ‘করোনাভাইরাসের দুটি ডোজ শেষ হওয়ার পরেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হতে আরো তিন সপ্তাহ সময় লাগে। সে পর্যন্ত সতর্ক না থাকলে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।’
টিকা নিলেও মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘না হলে আক্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এতে মৃত্যুঝুঁকিও রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ বি এম আবদুল্লাহ একটি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনা টিকা নিলে বডিতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। তবে এটি সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় না। ১৪ থেকে ২১ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে যে কেউ টিকা নিলেও করোনায় আক্রান্ত হতে পারে। তাই করোনা টিকা নিলেও এ ভাইরাসে আক্রান্ত হবে না এমনটা বলা যাবে না।’
বিশ্বে যেসব টিকা দেয়া হচ্ছে, সেটির কোনোটিই ১০০ ভাগ সুরক্ষা দেয় না। সর্বোচ্চ ৯৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে ফাইজারের টিকা। সেটিও দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার পরে। তবে এই টিকা রাখার মতো অবকাঠামো বাংলাদেশের নেই। এটি সংরক্ষণ করতে হয় মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
টিকা নিয়েও গুরুত্বসহকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে জানিয়ে এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরে যেতে হবে। বারবার সাবান পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। কিন্তু মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। শারীরিক দূরত্বও মানা হচ্ছে না।’
করোনা নিয়ন্ত্রণে গঠিত কারিগরি কমিটির সদস্য ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি নজরুল ইসলাম একটি অনলাইনকে বলেন, ‘টিকা নেয়ার কতদিন পর করোনা আক্রান্ত হয়েছে এটা আগে জানা দরকার। এ পর্যন্ত যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তারা টিকা নেয়ার ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন। আর আক্রান্ত হওয়ার ১৫ দিন পর এ ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই যারা টিকা নিয়ে করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, এদের শরীরে আগে থেকেই ভাইরাস থাকতে পারে। এ জন্যই অ্যান্টিবডি তৈরি হয়নি।’
সেরা টিভি/আকিব