অনলাইন ডেস্ক:
বিনামূল্যে পাঠ্যবই বিতরণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। প্রতি বছর গড়ে ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছেপে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে দেশে নিরক্ষরতা কমেছে আশানুরূপ গতিতে। বিজ্ঞান শিক্ষায় আগ্রহী শিক্ষার্থী এখন বাড়ছে। প্রাথমিক স্তরে প্রায় শতভাগ এনরোলমেন্ট, ঝরে পড়ার হার দিন দিন হ্রাস, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পাওয়া, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে লিঙ্গ সমতা অর্জন, উচ্চশিক্ষা স্তরে নারী শিক্ষার্থীর হার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়া, কারিগরি শিক্ষার হার ১৪ শতাংশে উন্নীত হওয়া, ব্যাপকভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মাদ্রাসা শিক্ষাধারার আধুনিকায়নসহ গত অর্ধশতকে শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে। তবে শিক্ষার মানের প্রশ্নে শিক্ষাবিদদের অতৃপ্তি রয়েই গেছে। সংখ্যাগত দিক থেকে শিক্ষায় ব্যাপক অগ্রগতি হলেও মানের দিক থেকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এখনও পৌঁছানো যায়নি বলে মনে করেন তারা।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, গত ৫০ বছরে শিক্ষার বিস্তার বেড়েছে, তবে মানের আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। মানের দিকে আরও নজর দিতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষার মানের সঙ্গে শিখন পদ্ধতি, পাঠ্যক্রম, পাঠ্যবই, শিক্ষক সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের মননশীলতা জাগিয়ে তুলতে না পারলে ফলসর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে মানের উন্নয়ন ঘটবে না। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে আমরা পা বাড়াচ্ছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর ক্ষণে দাঁড়িয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন প্রসঙ্গে আমি বলব, যা হয়েছে তা ভালোই হয়েছে। ভবিষ্যতে শিক্ষার বাজেটের দিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে শিক্ষায় জিডিপির ৪ শতাংশ অর্থ ব্যবহারের কথা বলেছিলেন। স্বাধীনতার পর প্রণীত ড. কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষানীতিতে জিডিপির ৫ থেকে ৭ শতাংশ অর্থ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছিল। ৫০ বছর পর এখন এসে আমরা মাত্র ২ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছি। এ দিয়ে আন্তর্জাতিক মানে শিক্ষাকে উন্নীত করা তো দূরের কথা, দেশীয় মানটাও আমরা ধরে রাখতে পারব না। তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের জীবনমান উন্নত করতে তাদের বেতনভাতা বাড়াতে হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সেন্টার অব এক্সিলেন্সে পরিণত করতে হবে। শিক্ষা খাতে এগুলোই আমার প্রত্যাশা।
গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশ হিসেবে ৫০ বছরে আমাদের অনেক অর্জন রয়েছে। সামরিক সরকারের আমলে কিছুটা আমরা হোঁচট খেয়েছি। গণতান্ত্রিক আমলে অর্থনীতি, দারিদ্র্য বিমোচন ও নারীর অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আমরা বড় ধরনের সাফল্য পেয়েছি। শিক্ষা খাত নিয়ে আমি বলব, প্রত্যাশিত মান আজও আমরা অর্জন করতে পারিনি। শিক্ষা ব্যবস্থা এখনও পরীক্ষানির্ভর, সনদসর্বস্ব। শিক্ষা খাতে বৈষম্যের লাগাম আমরা আজও টানতে পারিনি। এগুলোই এখন শিক্ষা খাতের বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, প্রত্যাশা থাকবে- আগামী দিনগুলোতে শিক্ষার মান বাড়বে, বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন ঘটবে।
সেরা টিভি/আকিব