স্টাফ রিপোর্টার:
করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবরোধে দেশব্যাপী সাতদিন সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হয়েছে। লকডাউনের প্রথম দিনে চেনা রাতের ঢাকার এ এক ভিন্ন চিত্র। কেমন যেন অচেনা। নেই মানুষের কোলাহল, গাড়ীর যানজট, হই-হুল্লোড়। অনেকটাই নীরব-নিস্তব্ধ রাতের ঢাকা।
বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) রাতে রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা যাত্রাবাড়ী, কাজলা, শনিরআখড়া ঘুরে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। রাস্তায় মানুষের ভীড় নেই। মাঝে মধ্যে দু-একটা মালবাহী গাড়ী, প্রাইভেটকার ফাঁকা রাস্তায় সোঁ সোঁ করে ছুটে যাচ্ছে। এরপরও অতি প্রয়োজনে যারা বের হচ্ছেন তাদের কিছু ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গণপরিবহন না থাকায় চলাচলের একমাত্র ভরসা হয়েছে রিকশা। রাজপথও দখলে তাদের। গণপরিবহন না থাকাকে পুঁজি করে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন অনেকে।
রংপুরের আব্দুল লতিফ। ১৫ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান। তবে এমন ঢাকা তিনি কোনোদিন দেখেননি। তিনি বলেন, ‘এতোদিন রিকশা চালায় এরকম ফাঁকা ঢাকা আগে দেখিনি। যাত্রী নাই। সকাল থেকে ৪৫০ টাকা ইনকাম হয়ছে। খাবার বাবদ জমা দিতে হবে ২৫০ টাকা। বাইরে বের হলে তো অন্যান্য খরচ আছেই। কি যে করবো। নিজের পেট চালাবো না বাড়িতে যারা আছে তাদের পেট চালাবো। আল্লাহ যে কবে করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি দিবে।’
আব্দুর রহমান এবং লতিফ কাজলায় থেকে গাড়িতে কাজ করতেন। গণপরিবহন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের কোনো কাজ ছিল না। বসে বসে নিজেদের বাস পাহাড়া দিতেন। এভাবে কি আর সময় যায়। বের হয়েছেন বাড়ির উদ্দেশ্যে। মদনপুর যাবেন। কিন্তু কোনো যানবাহন পাচ্ছেন না। তাই রিকশায় করে যাচ্ছেন। সাইনবোর্ড যেতে ভাড়া দিতে হচ্ছে ১৮০ টাকা।
তারা বলেন, ‘কি আর করবো। কোনো উপায় তো নাই। যেতে তো হবে। বাড়তি ভাড়া দিয়েই যাই।’
একই অবস্থায় পড়েছেন আফরোজা খাতুন। সায়েদবাদ রেলগেইট এলাকায় ভাই থাকেন। তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাই যাচ্ছেন ভাইকে দেখতে। কিন্তু রিকশা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন নেই। তাই বাধ্য হয়ে ৪০ টাকার ভাড়া ৮০ টাকা দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এদিকে বিকেলের পর থেকে পাড়া-মহল্লার অলিগতিতে দোকান বন্ধের তাগিদ দেন অনেক স্বেচ্ছাসেবী। মুদি দোকানগুলো বিকেল ৫টার মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। খাবারের হোটেল চলেছে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রথমদিন যারা একটু বিলম্ব করেছেন তাদের অনুনয়-বিনয় করছেন দোকান বন্ধ করতে। তারা বলছেন, দেশের এই অবস্থায় সরকার যেহেতু সাত দিনের লকডাউন দিছে। আপনারা একটু মেনে চলুন। দেখেন এই কয়টা দিন পর কি হয়। আর আপনাদের একটা নির্দিষ্ট সময় করেই দিয়েছে ব্যবসার জন্য। সবাই আপনারা সরকারকে সহযোগিতা করুন। শুক্রবার থেকে নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ না করলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তারা। তবে খোলা রয়েছে ওষুধের দোকান।
এদিকে সর্বাত্মক লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছে সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনী। প্রধান সড়কে এসব বাহিনী আনাগোনা রয়েছে। তবে পাড়া মহল্লায় কোনো তৎপরতা না থাকায় অনেকে ভীড় করছেন অলি-গলিতে।
সেরা টিভি/আকিব