স্পোর্টস ডেস্ক:
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা ১৯ ম্যাচ জিতে দলটিকে আরেকবার হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা। আজ তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডেতে ৪৮ ওভারে ৫ উইকেটে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। অনেকগুলো রেকর্ডের এই সিরিজের পুরো ৩০ পয়েন্টে আরও এগিয়ে গেল টাইগাররা। এই পয়েন্টে সুপার লিগের টেবিলের শীর্ষ দল ইংল্যান্ডের (৯৫ পয়েন্ট) সঙ্গে টাইগারদের ব্যবধান কমে দাঁড়ালো ১৫ পয়েন্ট।
জিম্বাবুয়ের দেওয়া ২৯৯ রানের বড় টার্গেট তাড়ায় ভালো শুরু পায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম ও লিটনের জুটিতে আসে ৮৮ রান। ৪৬ বলে তামিম দেখা পান ফিফটির। লিটনও ছুটছিলেন ফিফটির দিকে। কিন্তু ওয়েসলি মাধেভেরের বলে সুইপ শট খেলতে গিয়ে স্কয়ার লেগে থাকা মারুমানির হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই ডানহাতি।
Bangladesh Pratidin
লিটনের বিদায়ের পর তিনে নামা সাকিবও দারুণ শুরু করেছিলেন। তামিমের সঙ্গে গড়েছিলেন ৫৯ রানের জুটি। তবে আগের ম্যাচে অপরাজিত ৯৬ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলা সাকিব এই ম্যাচে পারেননি। ব্যক্তিগত ৩০ রানে লুক জঙওয়ের বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক চাকাভার হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৪২ বলে খেলে ১টি চার ও ১ টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।
সাকিব বিদায় নেওয়ার আগেই আগ্রাসী ব্যাটিং করে তামিম তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৪তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। মাত্র ৮৭ বল খেলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় তিন অংকে পৌঁছান তিনি। তবে এরপর বেশিদূর যেতে পারেননি তামিম। তিরিপানোর বলে কাট করতে গিয়ে উইকেটরক্ষক চাকাভার হাতে ক্যাচ দিলে শেষ হয় তার ৯৭ বলে ১১২ রানের ইনিংস, যেখানে ৮টি চার ও ৩টি ছক্কার মারও আছে। তারপরের বলেই মাহমুদউল্লাহ হাঁটেন ড্রেসিং রুমের পথে।
চাপে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশকে পথ দেখাচ্ছিলেন মোহাম্মদ মিঠুন ও দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা নুরুল হক সোহান। একদিকে সোহান আগ্রাসী ব্যাটিং করলেও মিঠুন খেলছিলেন দেখেশুনে। আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিও স্পষ্ট হয়ে উঠছিল মিঠুনের ব্যাটিংয়ে। শেষ পর্যন্ত দলকে ২৬৮ রানে রেখে মাধেভেরের বলে চাতারার হাতে ক্যাচ তুলে দিলে শেষ হয় তার ৫৭ বলে মাত্র ১ চারে সাজানো ৩০ রানের ইনিংস।
মিঠুন ফিরলেও অপরপ্রান্তে রানের চাকা সচল রাখেন নুরুল হাসান। তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যটা বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে ছুটে যেতে পারেনি। শেষ ৩ ওভারে জিততে দরকার ছিল মাত্র ১৩ রান। আফিফ হোসেন ধ্রুবকে নিয়ে যা দেখেশুনে খেলে পেরিয়ে যান সোহান। আফিফ ১৭ বলে ২৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন আফিফ। অন্যদিকে সোহান অপরাজিত থাকেন ৩৯ বলে ৪৫ রান নিয়ে।
এর আগে, মঙ্গলবার হারারেতে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে সবকটি উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ৪৯.৩ ওভার শেষে ২৯৮ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ে জিম্বাবুয়ে। এদিন জিম্বাবুয়ের ইনিংসে ফিফটি হাঁকান তিন ব্যাটসম্যান। সর্বোচ্চ ৮৪ রান আসে প্রমোশন নিয়ে ওপেনিংয়ে খেলতে নামা রেজিস চাকাভার ব্যাট থেকে। ছয় ও ৭ নম্বরে ব্যাট হাতে যথাক্রমে ৫৭ ও ৫৯ রানের ইনিংস খেলেন সিকান্দার রাজা-রায়ান বার্ল।
বাংলাদেশের বল হাতে সর্বোচ্চ তিন উইকেট নেন পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান। টস হেরে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। বিনা উইকেটেই তুলে ফেলেছিল তারা ৩৬ রান। এরপরই ঘটে ছন্দপতন। স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইন-আপে প্রথম আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান।
অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলর আজও বড় রান করতে পারেননি। ২৮ রান করে মাহমুদউল্লাহর বলে তামিম ইকবালের তালুবন্দি হন। ডিওন মেয়ার্সকেও (৩৪) প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান মাহমুদউল্লাহ। আরেক ওপেনার চাকাভা একপ্রান্ত আগলে ছিলেন। ছোট ছোট জুটিতে এগিয়ে যেতে থাকে জিম্বাবুয়ে।
তৃতীয় উইকেটে ৭১ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেন চাকাভা এবং মেয়ার্স। মেয়ার্স আউট হওয়ার পর ছোট্ট একটা ধস। ৯১ বলে ৮৪ রান করা চাকাভাকে বোল্ড করে থামান তাসকিন। এরপর ৬ষ্ঠ উইকেটে ১১২ রানের দুর্দান্ত জুটি উপহার দেন সিকান্দার রাজা এবং রায়ান বার্ল। রাজা ৫৪ বলে ৫৭ আর বার্ল ৪৩ বলে ৪টি করে চার-ছক্কায় ৫৯ রানে আউট হন। শেষ তিন ওভারে দ্রুত উইকেট হারতে থাকে জিম্বাবুয়ে। বেদম মার খেয়ে ৮ ওভারে ৮৭ রান দেওয়া সাইফউদ্দিন শেষের দিকে নেন ৩ উইকেট। চোট কাটিয়ে ফেরা মুস্তাফিজ ৯.৩ ওভারে ৫৭ রানে নেন ৩ উইকেট। মাহমুদউল্লাহ নেন ২টি। ৪৯.৩ ওভারে ২৯৮ রানে অল-আউট হয় জিম্বাবুয়ে।
উল্লেখ্য, এর আগে বিদেশের মাটিতে ৩৪ সিরিজের বিপরীতে জয় ৫টিতে। এরমধ্যে কোনো দলকে হোয়াইটওয়াশ করে জয়ের রেকর্ড দু’টি। দেশের বাইরে এমন অর্জন ২০০৬ এ কেনিয়ার বিপক্ষে প্রথম। আর শেষটি ২০০৯ এ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তার মানে ১২ বছর পর ফের বিদেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ করে সিরিজ জিতলো টাইগাররা।
সেরা টিভি/আকিব