স্পোর্টস ডেস্ক:
পিএসজি বড় কোনো শিরোপা জিতে গেল নাকি! চ্যাম্পিয়নস লিগ! স্টেডিয়ামের বাইরে এমন উন্মত্ত সমর্থকের স্রোত বড় কোনো ট্রফি জয় ছাড়া হয় নাকি। মেসি, মেসি বলে প্যারিসের দুপুর, বিকেল, রাত একাকার করে ফেলছে তারা। নাচছে, গাইছে, উৎসবের আগুন জ্বালাচ্ছে। একজন ফুটবলারের দলবদলে এমন আবেগ ডিয়েগো ম্যারাডোনার নাপোলিতে যোগ দেওয়ার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে যেন।
ম্যারাডোনারও বার্সা অধ্যায় শেষ হয়েছিল তিক্ততায়। পার্থক্য লিওনেল মেসি বার্সেলোনাতেই থাকতে চেয়েছিলেন। যেকোনোভাবেই সেটি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই এত দিন দূরতম কল্পনা হয়ে ছিল যা, কাল তা দিনের আলোর মতোই সত্যি হয়ে এলো। লিওনেল মেসিকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো প্যারিস সেন্ত জার্মেইয়ের খেলোয়াড় হিসেবে। মেসিও প্রতিশ্রুতি দিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে ক্লাবের স্বপ্নপূরণের। ম্যারাডোনার সেই নাপোলির কিছুই ছিল না। মেসি পার্ক দ্য প্রিন্সেসের প্রথম সংবাদ সম্মেলনেই জানিয়ে দিয়েছেন, ‘মৌসুমের প্রতিটি ট্রফি জয়ের জন্যই এই ক্লাবের সব কিছুই আছে। আমিও সেই ক্যারিয়ারের শুরুর দিন থেকে শুধু জিততেই চেয়েছি। এখানেও তার কিছুই বদলাবে না। ক্লাবের যে স্বপ্ন চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়, এই জার্সিতে আমি আবারও জিততে চাই সেটি।’ অর্থাৎ মেসির আরো একটি (পঞ্চম) চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের মিশন শুরু হচ্ছে এই প্রথমবারের মতো বার্সেলোনা ছাড়া আর কোনো ক্লাবে। সেই আসরে মুখোমুখি হয়েও যেতে পারেন তিনি কাতালানদের। আশৈশবের সেই ক্লাবের বিপক্ষে খেলাটা কেমন হবে, এখনো ঠিক ভেবে উঠতে পারেননি তিনি। সংবাদ সম্মেলনে জানালেন ‘অদ্ভুত’ কিছুই হবে তা।
তবে মেসি মানেও আর সবাই যা নয় তা। পিএসজির প্রেসিডেন্ট নাসের আল খেলাইফি প্রথম দিন আর্জেন্টাইন তারকাকে ঠিক সেভাবেই উত্থাপন করেছেন, ‘মেসি মানে জাদু, ফুটবলের সৌন্দর্য—তাঁকেই আজ আমাদের মাঝে পেয়েছি।’ প্যারিস সুন্দরের শহর, শিল্প আর কবিতার শহর। ফুটবলের কবিই পা রেখেছেন সেখানে। এই মর্তে সুন্দর ফুটবল এখনো যাঁর পায়ে সবচেয়ে সুরভিত, প্যারিস এত দিনে পেল যেন তাঁকেই। মেসি নিজে অবশ্য ভীষণ রোমাঞ্চিত বন্ধু নেইমার আর এমবাপ্পের মতো ফুটবলারদের পাশে খেলার অপেক্ষায়, ‘এটা ভীষণ অন্য রকম কিছু হবে। ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক রকম চাওয়া ছিল। এখন আমি বিশ্বসেরা ফুটবলারদের সঙ্গে খেলতে যাচ্ছি, এটা দারুণ ব্যাপার সব সময়ই।’ মেসির চুক্তি সইয়ের খবরে নেইমার তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, দুজনের জড়িয়ে ধরা একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘আবার এক হলাম।’
মেসির বিচ্ছেদ ব্যথা অবশ্য টাটকা। তবে প্যারিসে পা রাখার মুহূর্ত থেকে তার উপশমও তিনি খুঁজে পেয়েছেন—এমনটাই বলেছেন সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে, ‘বার্সেলোনার সঙ্গে এত দিনের সম্পর্ক ছিঁড়ে বেরিয়ে আসাটা কঠিন ছিল। কিন্তু প্যারিসে পা রাখার প্রথম মুহূর্ত থেকে নিজেকে আবার সুখী মনে হচ্ছে। সবাই আমাকে যেভাবে বরণ করেছে, ক্লাব যেভাবে সব কিছুর ব্যবস্থা করেছে একেবারে শুরু থেকে—চুক্তির খুঁটিনাটি খুব দ্রুত ও সহজভাবে চূড়ান্ত করেছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। এখন শুধু মাঠে নামার জন্য মুখিয়ে আছি।’ ফরাসি লিগ শুরু হয়ে গেছে এরই মধ্যে। পিএসজি তাদের প্রথম ম্যাচে জয়ও পেয়েছে ট্রয়েসের বিপক্ষে। আগামী শনিবার তাদের পরের ম্যাচ স্ট্রসবুর্গের বিপক্ষে। মেসির সেদিনই মাঠে নামা হবে কি না, এখনো অবশ্য নিশ্চিত নয়। মেসি জানিয়েছেন তাঁর প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি হয়নি ছুটিতে থাকায়, ম্যাচে নামার আগে সেই প্রস্তুতির সময় তিনি নেবেন। এরপর আরো অবিশ্বাস্য সেই ছবি, নীল-মেরুনের বদলে পিএসজির গাঢ় নীলে আর্জেন্টাইন খুদে জাদুকর মাঠে বল নিয়ে ছুটবেন। ফুটবলের রোমাঞ্চপিয়াসীদের জন্য সেও এক অনন্য দিন।
সেরা টিভি/আকিব