স্টাফ রিপোর্টার:
পবিত্র আল-আকসা মসজিদ ও হারাম আল শরিফ ঘিরে নতুন করে উত্তেজনার শঙ্কা তৈরি হয়েছে জেরুজালেমে। ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম জায়গাটিতে ঢুকে প্রার্থনা করা শুরু করেছে ইহুদিরা যা আগে কখনও সাহস করেনি তারা। ফিলিস্তিনিদের অভিযোগ, আল-আকসা মসজিদকে ইহুদিকরণের অপচেষ্টা করছে ইসরায়েল। এটি বন্ধ না করলে ধর্মযুদ্ধ শুরুর হুঁশিয়ারিও দিয়েছে ফিলিস্তিনিরা।
জেরুজালেমে মুসলমানদের অন্যতম পবিত্র জায়গা হারাম শরিফ। এখানে গোল্ডেন ডোম অব দ্যা রকে প্রার্থনা শুরু করেছে ইহুদিরা। পুলিশ পাহারায় ছোট ছোট দলে ঢুকছে তারা যা একসময় চিন্তাও করতো না ফিলিস্তিনিরা।
টেম্পল মাউন্টে প্রবেশ করলেও প্রার্থনায় নিষেধ আছে খোদ ইসরায়েলের তরফ থেকে। সে জায়গায় সম্প্রতি ইহুদিদের আনাগোনা বাড়ায় উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। ফিলিস্তিনিদের ভয়, হেবরনের মতো আল-আকসার জায়গাও ভাগ করার পাঁয়তারা করছে ইহুদিরা।
আল-আকসা মসজিদের ইসলামিক ওয়াকফের পরিচালক শেখ ওমর আল কিসওয়ানি বলেন, এটি উস্কানি ছাড়া কিছুই নয়। ধর্ম ও ইতিহাস অস্বীকার করে ইসলামের অবমাননা হচ্ছে। পবিত্র কুরআনের বাণীর ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে ইহুদিরা।
হারাম আল শরিফ নামে পরিচিত পুরো জায়গাটি ইসলাম, খ্রিস্টান ও ইহুদি তিন ধর্মের কাছেই পবিত্র স্থান। ইহুদিদের কাছে জায়গাটি টেম্পল মাউন্ট নামে পরিচিত। তাদের দাবি, এটাই তাদের ধর্মের পবিত্রতম জায়গা। তাদের বিশ্বাস, এখানেই ছিল ইহুদিদের প্রথম ও দ্বিতীয় পবিত্র মন্দির যা ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান বাহিনী ধ্বংস করে দেয়।
মন্দিরের পশ্চিম দিকের দেয়ালটি এখনও টিকে আছে। সেই ওয়েস্টার্ন ওয়ালই ইহুদিদের মূল প্রার্থনার স্থান। কান্নার জায়গা নামে পরিচিত এই দেয়াল ধরে প্রার্থনা করে আসছিলো ইহুদি ধর্মাবলম্বীরা। এখন ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে সামনের দিকে। ইসরায়েলের নতুন প্রধানমন্ত্রী নাফতালি বেনেট ওই জায়গায় ইহুদিদের ধর্মীয় প্রার্থনার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে চান।
ইহুদি অধিকার গোষ্ঠীর মুখপাত্র আকিভা অ্যারিয়েল বলেন, এটা ইহুদি ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র জায়গা। পৃথিবীর যেখানেই ইহুদিরা প্রার্থনা করুক, তাদের মনে থাকে টেম্পল মাউন্ট। তাই এখানকার যতো কাছে ইহুদিরা যেতে পারে, প্রার্থনা ততই পবিত্র হয়। এটা কেবল মুসলিমদের জায়গা নয়। মুসলিমদের জন্য এটি তৃতীয় পবিত্রতম জায়গা, আর ইহুদিদের জন্য এটাই পবিত্রতম।
আল-আকসা মসজিদ ইসলামের তৃতীয় পবিত্রতম স্থান। ডোম অব দ্য রক থেকেই বিশেষ বাহন বোরাকে মিরাজ গমন করেছিলেন মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.)। তাই দশকের পর দশক ধরে সংঘাত চললেও ছাড় দিতে নারাজ মুসলিমরা। এর আগে নানাভাবে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে ইসরায়েল। কিন্তু প্রতিবারই প্রতিবাদের মুখে পিছু হটে ইহুদিরা।
শেখ ওমর আল কিসওয়ানি আরও বলেন, এ উস্কানির জন্য দখলদার ইসরায়েলের সরকারই দায়ী। কেবল জেরুজালেম বা ফিলিস্তিনের মানুষের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মুসলিমদের কাছে আল-আকসা মসজিদ পবিত্র জায়গা। এখানে উস্কানি অব্যাহত থাকলে এমনকি ধর্মযুদ্ধ পর্যন্ত শুরু হয়ে যেতে পারে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধের সময় জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনও স্বীকৃতি দেয়নি তাদের। বর্তমানে আল-আকসা এলাকাটি নিয়ন্ত্রণ বা পরিচালনা করছে জর্ডানি-ফিলিস্তিনি ওয়াকফ প্রতিষ্ঠান।
সেরা টিভি/আকিব