স্টাফ রিপোর্টার:
‘আমি কি বাসায় বোম বানিয়ে চাঁদের দেশে চলে যাচ্ছি? নাকি আমি হত্যা মামলার আসামি? আমি তো কিছুই বুঝলাম না। আমি কি এমন করেছি? আমি শুরু থেকেই স্ট্রং ছিলাম। আমি যদি অপরাধী হতাম, তাহলে ভেঙে পড়তাম। কিন্তু আমি তো কিছু করিনি। আমার সঙ্গে কি হয়েছে সব বলব। আমাকে একটু সময় দিন। বেঁচে থাকার জন্য একটা মানুষের মিনিমাম (সামান্য) স্পেস তো লাগে। একটা মাস ধরে এই অবস্থা চলছে।’
২৭ দিন আটক থাকার পর মুক্তি পেয়ে এ কথা বলেন চিত্রনায়িকা পরীমনি। বাসা ছাড়ার নোটিশের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বাসার ঠিকানা সবাই মনে হয় মুখস্থ করে ফেলেছে। অ্যাড্রেসটা সবাই জেনে যাওয়ায় আসলেই খুব সমস্যা হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত থেকে এখানে সবাই ভিড় করছে। ভবনের বাসিন্দারা সবাই বিরক্ত। কিন্তু এভাবে হুট করে তো ছাড়া যাবে না।
তবে ছেড়ে দেব। বাসা এখনই ছাড়ার জন্য মালিকের পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়েছে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে পরীমনি বলেন- না, না। কেউ কিছু বলেনি। তবে তারা বিরক্ত। আর বিরক্ত হয়েছেন ঠিক কারণেই। চার-পাঁচ দিন আগে আমার বাড়িওয়ালা বলেছেন এ বিষয়গুলো ট্যাকল করতে। এখনই বাসা থেকে চলে যেতে বলেননি। নোটিশটা এমন যে, আমি যেন বিষয়গুলো ম্যানেজ করি।
পরীমনি বলেন, আমার সঙ্গে যা যা হয়েছে সবই আমি বলব। কিন্তু আপনি শুধু বাসায় এসে দেখে যান এখানে একটা মানুষের থাকার মতো পরিস্থিতি আছে কিনা। আপনি পাগল হয়ে যাবেন। কোনো বাড়িওয়ালা এটা মানবেন না। আমার বাড়িওয়ালা তো অনেক ভদ্র। তিনি অনেক সুন্দর করে আমাকে বলেছেন। আমি বাড়িওয়ালা হলে হয়তো এটা আমিও সহ্য করতাম না। কারণ এভাবে টর্চার করে কেউ? সবাই পরিচয় দিচ্ছেন সাংবাদিক। সবাই কি সাংবাদিক? মোবাইল হাতে নিলেই কি সাংবাদিক হয়ে যায়? এরা কেউ আসলে সাংবাদিক না। বেশিরভাগ ইউটিউবে কন্টেন্ট বানায় তারা। ফ্ল্যাটের লোকজন তাদের সরে যাওয়ার অনুরোধ করলেও তারা না সরে সাংবাদিক পরিচয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। সাংবাদিক বলে অন্য ফ্ল্যাটের লোকজনকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। আসলে এসব করে তারা ইউটিউব কন্টেন্ট বানাবে। রসালো হেডিং দেবে।
এই চিত্রনায়িকা বলেন, বেঁচে থাকার জন্য একটা মানুষের মিনিমাম স্পেস তো লাগে। আমার থাকার জায়গাটা পর্যন্ত ছাড়তেছে না। আমি টায়ার্ড হয়ে যাই মাঝে মাঝে। কতক্ষণ পারা যায় এভাবে? কার বাসার নিচে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকলে কে মেনে নেবে? একটা মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। আমি কাশিমপুর জেলে, আর এরা বাসার নিচে দাঁড়িয়ে আছে। সাড়ে ১২টার দিকে বাসায় এসেছি। মঙ্গলবার রাত থেকে বাসার সামনে এ অবস্থা।
‘শারীরিক অবস্থা এখন কেমন’- এমন প্রশ্নের উত্তরে মৃদু হাসিতে পরীমনি বলেন, পাগল পাগল হয়ে গেছি। মঙ্গলবার রাতে এক্সাইটমেন্টে ঘুম হয়নি। আমাদের সঙ্গে যারা ছিল ওদের কেউ কেউ নামাজ পড়ছিল, কেউ জেগে ছিল। ওদের সঙ্গেও একটা সম্পর্ক হয়ে গিয়েছিল। ফজরের আগে ভাবলাম দুই ঘণ্টা ঘুমাই, ৮টার সময়ে হয়তো ডাকবে। ওমা, ফজরের আজানের পরই শুরু হয়েছে একজনের পর একজন আসা। একজন বলছে রেডি হও, যেতে হবে। একটা ফোঁটাও আমি ঘুমাইনি। গাড়িতে একটুখানি চোখটা বন্ধ হয়েছিল।
এই চিত্রনায়িকা বলেন, ‘আমি আসলাম, প্রত্যেকের সঙ্গে কি এখনই কথা বলা সম্ভব? আমি কি বাসা ছেড়ে চলে যাচ্ছি? ভাবলাম, নিরিবিলি ঘুম দিব। তা আর হলো না। ঘরের যা-তা অবস্থা। নানা ভাইয়ের সঙ্গেও কথা বলতে পারিনি। নানা ভাই অনেক স্ট্রং ছিলেন। আমি নানা ভাইকে নিয়ে খুব টেনশনে (চিন্তিত) ছিলাম। তার বয়স ১১১ বছর। তিনি এখনো অনেক স্ট্রং। আর আমি তার নাতি না, আমি আরও বহুত স্ট্রং। আমি বলি যে, আমি তোমার ঠিকঠাক নাতি। তোমার নাম রাখছি।’
আদালতে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানানোর কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চোখের সামনে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে, আমি বলব না? আরে আমাকে যখন এখান (বাসা) থেকে নেয় তখন আমি জানি নাকি যে, আমাকে গ্রেফতারের জন্য নেয়। কত নাটক করে আমাকে এখান থেকে নিল। বলল, জাস্ট অফিসে যাবেন, কথা বলবেন, চলে আসবেন। ওমা, পরদিন দেখি পরীমনি গ্রেফতার। আমি বুঝলাম না কিসের জন্য। এগুলো অনেক কথা। সব বলব আমি।
রিমান্ডের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলেন, সেভাবে হয়রানি করেনি তারা আমাকে। কি হয়েছে সবই আমি বলব। ফোন, গাড়ি সব সিআইডিতেই আছে। যেসব ভিডিও বাইরে এসেছে সেগুলো ওই ফোনেই ছিল। তিনি বলেন, আমার ব্যক্তিগত ভিডিও লিক করার রাইটস কারও নেই। তাও আমার ফোন থেকে। আমার বাসার সিসিটিভি ফুটেজও নিয়ে যায়। অনেক তো হলো। সবকিছুই তো একটা জায়গায় শান্ত হওয়া উচিত। আমার থাকার জায়গাটা পর্যন্ত ছাড়তেছে না। আমি টায়ার্ড হয়ে যাই মাঝে মাঝে। কতক্ষণ পারা যায় এভাবে?
বাসা ছাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এই বাড়িটায় তো শুধু আমি থাকি না, অনেক মানুষ এখানে থাকেন। সবাই এমন একটা আচরণ করছে যে এখানে আমি একা একা থাকি। আর কেউ থাকে না। প্রত্যেক ফ্ল্যাটে ফ্যামিলি থাকে। তাদের ডিস্টার্ব হয় না? তারা কি এসবে অভ্যস্ত? প্রশাসনের লোকজন তো আছেই, এরপর সাংবাদিকরা যদি সারাক্ষণ এভাবে থাকে তাহলে কীভাবে হয়? আর সাংবাদিকদের নামে যারা আসছে এদের বেশিরভাগই মোবাইল একটা নিয়ে সারাক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। এটা কোন ধরনের কথা? এভাবে করলে মানুষের প্রাইভেসি থাকে? প্রত্যেকটা পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমি তো একজন সচেতন মানুষ, এগুলো তো আমারই ভালো লাগছে না। আমার জন্য কারও সমস্যা হোক এটাতো আমি চাইব না। আমি ডেফিনেটলি বাসা ছেড়ে দেব। আর এভাবে করলে হয় কীভাবে? ঢাকা শহরে এ মুহূর্তে তো কোনো বাড়িওয়ালা তো আমাকে বাড়ি ভাড়াও দেবে না।
তিনি বলেন, নায়িকা নাম ব্যবহার করে যখন কেউ কিছু করে তখন তো দায়ভার নায়িকাগোষ্ঠীর ওপরেও আসে। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রেও তাই। জাস্ট হাতে একটা ফোন, আর পরিচয় দিচ্ছে আমি সাংবাদিক। এখন বাসায় এসে দেখেন মিনিমাম ৫০ জন আছে। এরা কি আসলেই সাংবাদিক? আমাদের বিল্ডিংয়ের বাসিন্দারা বলছে, আমরা বাসা থেকে বের হতে পারছি না, ঢুকতেও পারছি না। যখন যাই আসি তখন ক্যামেরা ফেস করে যেতে হচ্ছে। এসবে তো আমরা অভ্যস্ত না।
সব মিলিয়ে বিব্রত হচ্ছেন কিনা-আমাকে কেউ পাচ্ছে না তা তো না। এই যে আপনার সঙ্গে কথা বলছি। কত বড় একটা হ্যাসেল গেল আমার ওপর দিয়ে। আমিও তো একটা মানুষ। একটুখানি মেন্টাল রেস্টও তো লাগে। আমি বাসায় এসে কারও সঙ্গে একটু কথাও বলতে পারছি না। জাস্ট একটু খাওয়া-দাওয়া করলাম। রাতেও ঘুমাইনি। ভাবলাম একটু ঘুমাব। কিন্তু এই যে, প্যারা শুরু হলো। আবার শুরু হয়েছে উলটা-পালটা নিউজ। বাসা থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছে, বাসা থেকে চলে যাচ্ছি- এসব নিউজ। আপনি বাড়িওয়ালা হলে যে কাজটা করতেন, তিনিও সেই কাজটা করছেন।
সেরা টিভি/আকিব