আকিব মাহমুদ:
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীসহ পৃথিবীর বিভিন্ন বাংলাদেশীদের কাছে যিনি আশার প্রদীপ, আলোর বাতিঘর তিনি কাজী এনায়েত উল্লাহ্ । রাজধানী ঢাকার বনানী এলাকার ঐতিহ্যবাহী ‘চেয়ারম্যান বাড়ি’র চেয়ারম্যান পরিবারের এই কৃতি সন্তান জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণে। যখনই কোনো বাংলাদেশি বিদেশ বিভূঁইয়ে বিপদে পরেছেন তখনই ছুটে গিয়ে পাশে দাড়িয়েছেন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের মত আলোকবর্তিকা হাতে। বিদেশী প্রবাসীদের কল্যাণে গড়ে তুলেছেন অল ইউরোপিয়ান বাংলাদেশি এসোসিয়েশন (আয়েবা)।
যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ না পাওয়া, ওয়ার্ক পারমিট বাতিল হওয়া কিংবা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর অবৈধভাবে অবস্থানের কারনে যেসব বাংলাদেশিরা পুলিশি হয়রানী, নির্যাতনের শিকার হন তাদের উদ্ধারকর্তা হিসেবে কাজ করেন প্রবাসী এই বাংলাদেশি।
বিশেষ করে যখন মহামারী করোনা ভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে বিশ্বজুড়ে। মৃতুভয়ে যখন স্বজনরাও দূরে সরে গেছে তখন পাশে দাড়িয়েছেন কাজী এনায়েত উল্লাহ্। মালয়েশিয়াতে করোনাকালীন পরিস্থিতিতে কেমন আছে প্রবাসী শ্রমিকরা কাতার ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল জাজিরার এমন একটি প্রতিবেদনে সাক্ষাৎকার দেন বাংলাদেশি প্রবাসী শ্রমিক রায়হান কবির। কিন্তু হিতে হয়ে যায় বিপরীত। মালয়েশিয়া সরকার জেকে বসে রায়হানের উপর। একটা পর্যায়ে তাকে গ্রেফতার করে পাশাপাশি বহিষ্কার করে। খবর পেয়ে সাহায্যের হাত বাড়ান কাজী এনায়েত। রায়হান কবিরকে কারাগার থেকে মুক্তির পাশাপাশি দেশে নিয়ে আসার ব্যাবস্থাও করেন এবং তার উপর ঘটে যাওয়া পুলিশি হয়রানী ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
এমন গল্প শুধু রায়হানের নয়। গ্রিসের মাল্টায় অবস্থানরত ১৫৮ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানোর খবরে প্রবাসীদের মধ্যে যখন আতঙ্ক বিরাজ করছিলো তখনই ছুটে যান কাজী এনায়েত উল্লাহ্। আটকে পরা বাংলাদেশেরদের উদ্ধার ও অধিকার আদায়ে জোর দাবী চান। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে দফায় দফায় আলোচনা বৈঠক শেষে সমাধান করে সমস্যা।
এমন গল্পো মুখজোড়ে হাজারো প্রবাসী বাংলাদেশির। ইউরোপের ৩০টি দেশে কয়েক লক্ষাধিক প্রবাসী বালাদেশি রয়েছেন যারা প্রায়ই কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তাদের বন্ধু কাজী এনায়েত।শিকার হন তাদের উদ্ধারকর্তা হিসেবে কাজ করেন প্রবাসি এই বাংলাদেশি। আর এভাবেই বিদেশে বাঙালীদের কাছে এক আস্থার নাম হয়ে উঠেছেন কাজী এনায়েত উল্লাহ্। তার উদ্যোগ, পৃষ্ঠপোষকতায় ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস পায় প্রবাসী বাংলাদেশের। দীর্ঘ ৪৩ বছরের প্রবাস জীবনে অনেক চরাই উৎরাই পেরিয়ে সাধারণ প্রবাসীদের মাঝে হয়ে উঠেছেন অসাধারণ এক নাম ও ব্যাক্তিত্বের অধিকারী।
১৯৫৮ সালের ৮ নভেম্বর ঢাকায় জন্ম নেয়া এনায়েত উল্লাহ্ কাজী ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কলেজে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৭৮ সালে পাড়ি জমান প্যারিসে। প্রবাসী এই বাংলাদেশি প্যারিসের সরবোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে গড়ে তোলেন ‘বনানী রেস্তোরাঁ’। এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। তার ঠিক ৩ বছরের মাথায় অ্যাপার্টমেন্ট কেনার মাধ্যমে প্যারিসে রিয়েল এস্টেট ব্যাবসায় নাম লেখান তিনি। সততা আর নিষ্ঠার বলে একে একে প্রতিষ্ঠা করেন তিনটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানী। ২০০২ সালে গড়ে তোলেন বনানী ট্রাভেলস নামে ট্রাভেল এজেন্সি প্রতিষ্ঠান। ব্যাবসা প্রসারিত হতে শুরু করলে তার কোম্পানীতে আরও কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি আয়ও বাড়তে থাকে। এভাবেই ধীরে ধীরে উজবেকিস্তান এয়ার ওয়েজের ইউরোপিয়ান এজেন্ট নিয়োগ প্রাপ্ত হন। ২০১৩ সালে পারফিউম ব্যাবসার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন দ্যা হারমোনিস্ট। শুধু তাইই নয় কাজী এনায়েত উল্লাহ্ ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনোমিক চেম্বারের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তিনি একাধারে প্যারিস-ঢাকা ভিত্তিক কনসালটিং ফার্ম বাংলাদেশ বিজনেস কনসালটিং বিবিসি’র ডিরেক্টর জেনারেল। কয়েক বছর আগে ফ্রান্স-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত সাড়াজাগানো চলচ্চিত্র ‘লাল টিপ’ এর সফল প্রযোজক কাজী এনায়েত উল্লাহ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশে সশরীরে অবস্থান করা ফরাসী সাংবাদিক ফিলিপ আলফনসিঁর ভিডিও ফুটেজ ভিত্তিক ‘বাংলাদেশ : একটি পতাকার জন্ম’ এই বিশেষ প্রামাণ্যচিত্রেরও সার্থক প্রযোজক তিনি।