স্টাফ রিপোর্টার, নিউইয়র্ক থেকে:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে বাংলায় গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ প্রদান করেছেন। নিউইয়র্ক সময় শুক্রবার সকালে এবং বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাতে বিশ্ব নেতাদের মাঝে করোনাকালের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের মানুষের পক্ষে শান্তির ডাক দিয়েছেন। বিশ্ববাসির জন্য তিনি কম মূল্যে টিকা নিশ্চিত করার আহবান জানান। তিনি বলেন, এটা আমার জন্য অত্যন্ত গর্বের যে, আমি এ নিয়ে ১৭ বার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আমার দেশ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। সাধারণ পরিষদের এই ৭৬তম অধিবেশনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন কোভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে অব্যাহতভাবে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। করোনার নতুন ধরনের মাধ্যমে অনেক দেশ বার বার সংক্রমিত হচ্ছে। এ মহামারিতে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ সঙ্কটকালে নিবেদিত সেবা ও আত্মত্যাগের জন্য আমি সম্মুখ সারির সকল যোদ্ধার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
গত বছর এ মহতী অধিবেশনে আমি কোভিড-১৯ টিকাকে ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। বিশ্বনেতাদের অনেকে তখন এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেছিলেন। আমরা ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা বৈষম্য বাড়তে দেখেছি। বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, এ যাবৎ উৎপাদিত টিকার ৮৪ শতাংশ উচ্চ ও উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশগুলোর মানুষের কাছে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, নিম্ন আয়ের দেশগুলো ১ শতাশেরও কম টিকা পেয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এ টিকা বৈষম্য দূর করতে হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষকে টিকা থেকে দূরে রেখে কখনই টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়। আমরা পুরোপুরি নিরাপদও থাকতে পারবো না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর নির্মম বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য ‘প্রত্যাশা’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে। বহুপাক্ষিকতাবাদ ও জাতিসংঘ ব্যবস্থার দৃঢ় সমর্থক হিসেবে বাংলাদেশ এই সঙ্কটকালে জাতিসংঘকে আশা ও আকাংখার প্রতীক হিসেবে দেখে। সব ধরনের মতভেদ ভুলে গিয়ে আমাদের অবশ্যই ‘অভিন্ন মানবজাতি’ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে; সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবার জন্য আবারও এক সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছরটি আমাদের জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ বছর আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি। একইসঙ্গে আমরা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপন করছি। শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তাঁর আজীবন নিঃস্বার্থ সংগ্রাম ও দূরদর্শী নেতৃত্ব আমাদের এনে দিয়েছে স্বপ্নের স্বাধীনতা। আমি শ্রদ্ধা জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি, যাদের অসীম বীরত্ব ও আত্মত্যাগে আমাদের মাতৃভূমি স্বাধীন হয়েছে। আমাদের জাতির পিতা ছিলেন বহুপাক্ষিকতাবাদের একজন দৃঢ় সমর্থক। তিনি জাতিসংঘকে জনগণের ‘আশা-আকাংখার কেন্দ্র’ মনে করতেন। ১৯৭৪ সালের ২৫-এ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে প্রদত্ত তাঁর ঐতিহাসিক একমাত্র ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আত্মনির্ভরশীলতাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ উদ্যোগই আমাদের নির্ধারিত কর্মধারা। এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই যে, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যায় অংশীদারিত্ব আমাদের কাজকে সহজতর করতে পারে, জনগণের দুঃখকষ্ট লাঘব করতে পারে।’
বঙ্গবন্ধু এমন একটি বিশ্ব গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলেন যেখানে অর্থনৈতিক বৈষম্য, সামাজিক অবিচার, আগ্রাসন ও পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি থাকবে না। সাতচল্লিশ বছর আগের তাঁর সে আহ্বান আজও সমভাবে প্রযোজ্য। এ জন্য আমরা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের যে কোনো উদ্যোগে সমর্থন ও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি। করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্য হিস্যা দাবী, ফিলিস্তিনিদের প্রতি যেকোনো ধরনের অবিচারের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় অবস্থান, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা- এসব আমাদের বৈশ্বিক অঙ্গীকারের কতিপয় উদাহরণ মাত্র। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির মধ্যে অন্যতম। জিডিপি-তে আমরা বিশ্বের ৪১তম। গত এক দশকে আমরা দারিদ্র্যের হার ৩১ দশমিক ৫ থেকে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে এনেছি।
গত এক দশকে আর্থ-সামাজিক খাতে ও নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। শিশু মৃত্যু হার প্রতি হাজারে ২৩ দশমিক ৬৭-এ কমে এসেছে। প্রতি লাখ জীবিত জন্মে মাতৃ মৃত্যুর হার ১৭৩-এ হ্রাস পেয়েছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর।
আমাদের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছে। আমরা ব্যাপকভাবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী’ কর্মসূচির সম্প্রসারণ করেছি। এ বছর আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের মাইলফলক অর্জন করেছি। এখন আমাদের স্বপ্ন বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও টেকসই বদ্বীপে রূপান্তর করা।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ আশঙ্কার চেয়ে অনেক কম হয়েছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে আমাদের শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে এটা সম্ভব হয়েছে। এ ছাড়া, এ মহামারি মোকাবিলায় আমাদের সময়োচিত, সমন্বিত ও বহুমুখী উদ্যোগ কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিভিন্ন সময়ে আমরা ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৪৬০ কোটি মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। করোনাভাইরাসের টিকা সংগ্রহের জন্য চলতি অর্থবছরে বাজেটে ১৬১ কোটি মার্কিন ডলারের সংস্থান রাখা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব নেতাদের মাঝে তাঁর প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, প্রথমত: কোভিডমুক্ত একটি বিশ্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে টিকার সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য ন্যায়সঙ্গত ও সাশ্রয়ী মূল্যে টিকার প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে টিকা প্রযুক্তি হস্তান্তর টিকার সমতা নিশ্চিত করার একটি উপায় হতে পারে। প্রযুক্তি সহায়তা ও মেধাস্বত্ত্বে ছাড় পেলে বাংলাদেশও ব্যাপক পরিমাণে টিকা তৈরি করতে সক্ষম।
দ্বিতীয়ত: এ মহামারি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে অধিকমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। জলবায়ূ পরিবর্তন বিষয়ক আন্ত:সরকার প্যানেলের ওয়ার্কিং গ্রুপ-১ এর প্রতিবেদনে আমাদের এ গ্রহের ভবিষ্যতের এক ভয়াল চিত্র ফুটে উঠেছে।
দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধ্বংসাত্মক প্রভাব কাটিয়ে উঠা কঠিন হবে। ধনী অথবা দরিদ্র কোন দেশই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া থেকে নিরাপদ নয়। তাই আমি ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নিঃসরণের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম এবং ভালনারেবল-২০ গ্রুপ অব মিনিস্টারস অব ফাইন্যান্স-এর সভাপতি হিসেবে আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা- দশক ২০৩০’ এর কার্যক্রম শুরু করেছি। এ পরিকল্পনায় বাংলাদেশের জন্য জলবায়ুকে ঝুঁকির কারণ নয়, বরং সমৃদ্ধির নিয়ামক হিসেবে পরিণত করার কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে।
তৃতীয়ত: মহামারির প্রকোপে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চরমভাবে বিপর্যস্ত। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের তথ্য অনুযায়ী, করোনাকালে আংশিক বা পুরোপুরি বিদ্যালয় বন্ধের কারণে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর লক্ষ লক্ষ ছাত্র-ছাত্রীর দূরশিক্ষণে অংশগ্রহণের সক্ষমতা ও প্রযুক্তি না থাকায় ভর্তি, স্বাক্ষরতার হার ইত্যাদি অর্জনগুলো হুমকির মুখে পড়েছে।
ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা ও শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে। এ জন্য আমরা জাতিসংঘকে অংশীদারিত্ব ও প্রয়োজনীয় সম্পদ নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাই।
চতুর্থত: কোভিড-১৯ প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পথে রয়েছি। তবে, এ মহামারি অনেক দেশের উত্তরণের আকাংখাকে বিপন্ন করেছে। স্বল্পোন্নত দেশের টেকসই উত্তরণ ত্বরান্বিত করার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আমরা প্রণোদনা ভিত্তিক উত্তরণ কাঠামো প্রণয়নে আরও সহায়তা আশা করি। এলডিসি-৫ সম্মেলনের প্রস্ততিমূলক কমিটির অন্যতম সভাপতি হিসেবে, আমরা আশা করি যে, দোহা সম্মেলনের সুনির্দিষ্ট ফলাফল আরও বেশি সংখ্যক দেশকে সক্ষমতা দান করবে, যেন তারা স্বল্পোন্নত দেশের কাতার থেকে টেকসইভাবে উত্তরণ করতে পারে।
পঞ্চমত: মহামারিকালে প্রবাসীরা অপরিহার্য কর্মী হিসেবে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জরুরি সেবাখাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তারাও সম্মুখসারির যোদ্ধা। তবুও তাঁদের অনেকে চাকুরিচ্যুতি, বেতন কর্তন, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সামাজিক সেবার সহজলভ্যতার অভাব ও বাধ্যতামূলক প্রত্যাবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই সঙ্কটকালে অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোকে অভিবাসীদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার এবং তাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
ষষ্ঠত: রোহিঙ্গা সঙ্কট এবার পঞ্চম বছরে পড়লো। কিন্তু এখন পর্যন্ত বলপূর্বক বাস্তচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের একজনকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা ও অব্যাহত সহযোগিতা আশা করি। মিয়ানমারকে অবশ্যই তার নাগরিকদের প্রত্যাবর্তনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে হবে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করতে সদা প্রস্তুত।
রোহিঙ্গা সঙ্কটের সৃষ্টি মিয়ানমারে, সমাধানও রয়েছে মিয়ানমারে। রাখাইন রাজ্যে তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমেই কেবল এ সঙ্কটের স্থায়ী সমাধান হতে পারে। এ জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই গঠনমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে শান্তি। ‘শান্তির সংস্কৃতি’ প্রস্তাবনার প্রধান প্রবক্তা হিসেবে আমরা শান্তিময় সমাজ বিনির্মাণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদের করাল থাবায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই আমরা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ বজায় রেখেছি। শীর্ষস্থানীয় শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বৈশ্বিক শান্তিরক্ষায় অবদানের জন্য আমরা গর্ববোধ করি।
এই ক্রান্তিলগ্নে জাতিসংঘই হোক আমাদের ভরসার সর্বোত্তম কেন্দ্রস্থল। আসুন, সেই ভরসাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয়ে আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে একযোগে কাজ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে শান্তি ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার এই মহান সংস্থার সামনে বিগত প্রায় ৪৬ বছর আগে আমার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যার ন্যায়বিচার পাওয়ার প্রত্যাশার কথা তুলে ধরতে চাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ভোরে একদল বিপথগামী ঘাতক আমার পিতা, বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমার স্নেহময়ী মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন ভাই মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, মুক্তিযোদ্ধা লে. শেখ জামাল, ১০ বছরের শেখ রাসেল, চাচা মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসেরসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্য ও নিকটাত্মীয়কে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমি ও আমার ছোটবোন শেখ রেহানা সে সময় বিদেশে অবস্থান করায় বেঁচে যাই। আমাদের ৬ বছর দেশে ফিরতে দেওয়া হয়নি। স্বজন হারানোর বেদনা বুকে নিয়ে বিদেশের মাটিতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়েছি। দেশে ফিরে আমি মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করি। জাতির পিতার স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্যে আজও আমি কাজ করে যাচ্ছি। যতদিন বেঁচে থাকবো, মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করে যাব, ইনশাআল্লাহ। প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ বিশ্ব নেতাদের মাঝে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সেরা টিভি/আনন্দ