স্টাফ রিপোর্টার
সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব গ্রামকে ভিক্ষুকমুক্ত করতে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। প্রতিটি গ্রামে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের মাধ্যমে এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে। বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। সেই ক্ষেত্রে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম একই ছাতার নিচে নিয়ে আসা হবে। গ্রামকে সম্পূর্ণরূপে দারিদ্র্য ও ভিক্ষুকমুক্ত করতে দরিদ্রদের সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা করে ঋণ দেবে সরকার। এজন্য জাতীয় সমন্বিত সঞ্চয়ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন নীতিমালা, ২০২১ চূড়ান্তকরা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এই নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করেছে।
সরকারের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে নিয়োজিত দফতরগুলোর সঞ্চয় ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে ঋণ বিতরণ, কিস্তি আদায়, সার্ভিস চার্জ, ঋণের পরিমাণ ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে ভিন্নতা রয়েছে। এসব ভিন্নতা দুর করাসহ দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত করার জন্য সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে দ্বৈততা পরিহার ও চাহিদা অনুযায়ী উপকারভোগীর ঋণ পাবেন নতুন নীতিমালার আলোকে। নীতিমালার উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রামে সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সম্প্রসারণ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সব গ্রামকে সম্পুর্ণরূপে দারিদ্র ও ভিক্ষুকমুক্ত গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। নীতিমালা অনুযায়ী, গ্রাম থেকে শহর এবং পুরো বাংলাদেশে কার্যক্রম বিস্তৃত হবে। প্রথম পর্যাযায়ে প্রতিটি বিভাগের দারিদ্রপিড়িত একটি উপজেলার প্রতিটি পরিবারের অর্থ সামাজিক অবস্থা জরিপের মাধ্যমে পরিবারের অর্থনৈতিক সক্ষমতা চিহ্নিতকরাহবে। কর্মদল ও গ্রামকমিটি গঠন করে চাহিদা নিরূপণ করা হবে। প্রাপ্ত সম্পদের ভিত্তিতে আর্থসামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে। এটি পাইলট প্রকল্প আকারে পরিচালিত হবে। পরবর্তীতে পাইলট প্রকল্প থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানের আলোকে সারাদেশে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে। মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি আইন,২০০৬ এবং মাইক্রোক্রেডিট গেুলেটরি অথরিটি বিধিমালা, ২০১০ এ নীতিমালার বাইরে থাকবে। সমাজসেবা অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, মহিলা বিষয়ক অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, মৎস্য অধিদফতর, আমার বাড়ি আমার খামার প্রকল্প, যুব উন্নয়ন অধিদফতর, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বিআরডিবি) সরকারের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমে নিয়োজিত রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ জাতীয় সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ বাস্তবায়ন নীতিমালার আলোকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের কার্যক্রম সমন্বয়, পরীবিক্ষণ, তদারকি, মূল্যায়ন ও বাস্তবায়ন করবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অন্যান্য মন্ত্রণালয় দফতর, সংস্থা দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা ও নীতিমালা অনুযায়ী আলাদাভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করে। এজন্য একই ব্যক্তির একাধিক মন্ত্রণালয় থেকে পরিচালিত ফান্ড থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেন। অপরদিকে ঋণ পাওয়ার যোগ্য অনেকেই ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত য়। এ বিষয়ে একটি সমন্বিত রূপ দিতে সবাই মিলে গড়ব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ এ প্রতিপাদ্য নিযে সামাজিক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বিত দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে সমন্বিত সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের ধারণাপত্র তৈরি করা হয়েছে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে এ ধারণাপত্রটি তার কাছে উপস্থাপন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় করে একই ছাতার নিচে ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রদান করেন। নীতিমালায় বলা হয়েছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঞ্চয় ও ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে শহর এলাকাকে সুসংগঠিত করা হবে। টেকসই, আত্মনির্ভরশীল, দারিদ্র ও ভিক্ষুকমুক্ত এলাকায় রূপান্তর করা এবং দ্বৈততা পরিহার করা হবে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে আমার গ্রাম, আমার শহর এ অঙ্গীকার পূরণে সারাদেশে গ্রাম ও শহর এলাকাকে পর্যায়ক্রমে দারিদ্র্যমুক্ত করার লক্ষ্যে এই নীমিালার আওতায় এনে কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।