যে কারনে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ - Shera TV
  1. [email protected] : sheraint :
  2. [email protected] : theophil :
যে কারনে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ - Shera TV
সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ০৫:১৮ অপরাহ্ন

যে কারনে খুন হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ২ অক্টোবর, ২০২১

অনলাইন ডেস্ক:

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা শঙ্কা ছিল আগে থেকেই। বেশকিছু সন্ত্রাসী ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছিল স্থানীয় প্রশাসনকে। সন্ত্রাসী ঘটনায় আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারে শঙ্কায় ছিল স্থানীয়রা। এমন অবস্থায় গত বুধবার প্রকাশ্যে গুলি করে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যায় নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। এ ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হয়নি মামলাও। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সোচ্চার মুহিবুল্লাহকে কেন, কারা হত্যা করলো- এই প্রশ্ন এখন ক্যাম্পে থাকা ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের। এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

স্থানীয়রা বলছেন, আগে থেকেই নানা শঙ্কার বিষয় স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। যদিও প্রশাসন বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দায়ীদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। ক্যাম্পে পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ১৪ এপিবিএনের অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাইমুল হক।
নিহত মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ জানিয়েছেন, বুধবার রাতে এশার নামাজের পর নিজ কার্যালয়ে কয়েকজন সহযোগীর সঙ্গে কথা বলছিলেন মুহিবুল্লাহ। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে উগ্রবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে মুহিবুল্লাহকে হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি। মুহিবুল্লাহ এফডিএমএন ক্যাম্প-১ ইস্টের ব্লক-ডি ৮-এ বসবাস করতেন। তিনি আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটর্সের (এআরএসপিএইচ) চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিলেন।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়োজিত ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরান জানিয়েছেন, এশার নামাজের পর কুতুপালং লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিজ কার্যালয়ে অবস্থানকালে অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীরা পাঁচটি গুলি করে। এতে তিনটি গুলি তার বুকে লাগে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এ হত্যাকাণ্ডের পর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ক্যাম্পে পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়েছে।
কেন এই হত্যাকাণ্ড: বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিরোধীরাই রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে- এমন দাবি করেছেন নিহতের ছোট ভাই হাবিবুল্লাহ। তার মতে, প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় দীর্ঘদিন ধরে একটি গ্রুপ মুহিবুল্লাহকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। সেই প্রত্যাবাসন বিরোধী গ্রুপের ২০ থেকে ২১ জন লোক অফিসে এসে আলোচনার এক পর্যায়ে গুলি করে হত্যা করে মুহিবুল্লাহকে। ওই অফিসে কর্মরত অন্যদের মারধর করে ছেড়ে দিলেও ভাইয়ের বুকে গুলি চালায় মাস্টার আবদুর রহিম নামে এক সন্ত্রাসী। তিনি বলেন, বন্দুকধারীদের এ দলে মাস্টার আবদুর রহিম, মুর্শিদ, লালুসহ ২০ থেকে ২৫ জন ছিল। তাদের তিনি আল ইয়াকিনের সদস্য বলে দাবি করেন।
মুহিবুল্লাহর ভাই হাবিবুল্লাহ আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের যেকোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আমার ভাই এগিয়ে আসতেন। তাদের অধিকার আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন। শুধু এখানে নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও আমার ভাইয়ের পরিচিতি ছিল।
তিনি জানান, আমেরিকাসহ বিশ্বসম্প্রদায় এখন একমত হয়েছে আমাদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিতে। আমরাও প্রস্তুত রয়েছি স্বদেশে ফিরে যেতে। এ কথা বলার পরই বন্দুকধারীরা আমার ভাইকে গুলি করে হত্যা করে। প্রত্যাবাসনের কারণে দীর্ঘদিন থেকে তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। হাবিবুল্লাহ আরও দাবি করেন, ‘ঘাতকদের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজেদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতা বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘাত-সংঘর্ষে জর্জরিত রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
মাদকসহ নানাধরনের অবৈধ ব্যবসার আধিপত্যকে কেন্দ্র করেও প্রতিনিয়ত সংঘাত হচ্ছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে মিয়ানমারের যোগাযোগ থাকার দাবি করেছেন কেউ কেউ। আবার এর পেছনে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর ইন্ধন থাকার দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
তাদের দাবি, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর অস্ত্রের প্রধান উৎস মিয়ানমার। তাছাড়া সহায় সম্বল ফেলে চার বছর আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের হাতে কীভাবে এত অস্ত্র এলো, সে প্রশ্নও তাদের।
সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এতোই বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে, রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠীও তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে। তুচ্ছ ঘটনায় ভারী অস্ত্র ব্যবহার, মুহূর্তেই রক্তপাত ও খুনোখুনির কারণেই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের নিয়ে নিয়মিত আতঙ্ক ও উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি ছোট-বড় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দলগত সশস্ত্র তৎপরতা, মাদক-মানব পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ বাণিজ্য ও দোকান দখল থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায়ও ব্যবহার করা হচ্ছে অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র।
গত ৪ বছরে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে শতাধিক খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসীদের দমন ও ক্যাম্পগুলো শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে যৌথ অভিযান শুরু করা হলেও সংঘর্ষ থেমে নেই। ধারাবাহিক খুনোখুনির সর্বশেষ বলি হলেন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা বলেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাদের পাহাড়ি আস্তানায় অবস্থান করে। রাতে তারা নেমে আসে ডাকাতিসহ খুন খারাবি করতে। এমনকি পেশাদার এসব খুনি চুক্তিতে খুনের কাজও করে। হত্যা শেষে আবার চলে যায়। কাজ থাকলে এরা দিনদুপুরে খুনখারাবি করে বীরদর্পে চলে যায়। এসব সন্ত্রাসীদের দেশি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রয়েছে। অত্যাধুনিক অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র এখন সন্ত্রাসীদের হাতে হাতে বলেও জানান রোহিঙ্গারা।
বিভিন্ন সময় র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি জানিয়েছে, ক্যাম্পে সন্ত্রাসী দলের অস্ত্রের ছড়াছড়ির কথা। খুন-জখম, মাদক, মানব পাচার, চাঁদাবাজি, অপহরণ-দোকান বাণিজ্য এবং আধিপত্য বিস্তারের জন্যই এসব অস্ত্রের মজুত গড়ে তুলেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। সমুদ্র, উপকূল, সীমান্ত জল-পাহাড়ি-জনপদ দিয়ে ক্যাম্পে অস্ত্র ঢুকছে বলেও দাবি তাদের।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতে, মিয়ানমার থেকেও অস্ত্র আসে। পাশাপাশি অস্ত্র তৈরির কারিগর এনে ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ি জনপদে অস্ত্র নির্মাণ করছে সন্ত্রাসীরা। এছাড়া সীমান্তের সব রুট দিয়ে মাদক চালানের সঙ্গে অস্ত্র ঢুকছে। ফলে দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান পিপিএম বলেন, নিহত মুহিবুল্লার মৃতদেহ সদর হাসপাতালে রয়েছে। এখনো মামলা হয়নি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সেরা টিভি/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360