স্টাফ রিপোর্টার:
পুঁজিবাজারে এখন যেভাবে সূচকের উত্থান পতন হচ্ছে তা স্বাভাবিক বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। গতকাল ‘পুঁজিবাজার উন্নয়নে বিনিয়োগ শিক্ষার গুরুত্ব’ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের উদ্যোগে ভার্চ্যুয়াল আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি। বিশ্ব বিনিয়োগকারী সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। মার্চেন্ট ব্যাংকার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান স্বাগত বক্তব্য দেন।
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে এখন সূচক একটি জায়গায় দেখা যাচ্ছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও সূচক নিয়ে খুবই আগ্রহ। সূচক পুঁজিবাজারের জন্য প্রয়োজন তবে একমাত্র নয়। সূচক হঠাৎ উত্থান হওয়ার পর পতন হয় তখন সেটি ক্রাশ হয়।
‘এ ধরনের ক্রাশ আমরা ৯৬ সালে দেখেছি, ২০১০ সালে দেখেছি। যখন সূচক ক্রমাগতভাবে বেড়েছে, তারপর সূচক হঠাৎ পড়তে শুরু করে।’
সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমাদের বন্ড মার্কেটকে শক্তিশালী করতে হবে।
ইন্ডিয়া বা লন্ডনের স্টক মার্কেটের দিকে যদি আমরা নজর দেই তাহলে দেখবো, তাদের ইক্যুইটি মার্কেটের তুলনায় বন্ড মার্কেট বেশি শক্তিশালী। আমাদের এখানে ইক্যুইটি মার্কেটে এক থেকে দুই শতাংশ হবে বন্ড মার্কেট।
‘এখন পুঁজিবাজারে বিভিন্ন ধরনের বন্ড আসছে। সেগুলোর বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের জানাতে হবে। এটিও বিনিয়োগ শিক্ষার মধ্যে পড়ে। তাহলে বিনিয়োগকারীরা বিকল্প বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।’
মিউচ্যুয়াল ফান্ড পুঁজিবাজারে ভালো করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর সম্প্রতি সময়ে ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য ভালো দিক। তবে মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগের বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ইচ্ছা অনুযায়ী বের হয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত। তাহলে এ সেক্টরের প্রতিও বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়বে।’
পুঁজিবাজারে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হওয়ার তাগিদও দেন সালমান এফ রহমান। বলেন, ‘তাদের আচরণ যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মতো না হয়। এখানে বিনিয়োগ শিক্ষার প্রয়োজন আছে।
‘তারা পুঁজিবাজারের কোম্পানি প্রোফাইল তৈরি করতে পারে। কোন কোম্পানির কী অবস্থা সেটি সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের অবহিত করতে পারে।’
বিএসইসি সম্প্রতি মার্কেট মেকার লাইসেন্স দিচ্ছে। এটি পুঁজিবাজারের জন্য ভালো উল্লেখ করে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘তাদের উচিত হবে পুঁজিবাজারের ভালো সিকিউরিটিজগুলো বাছাই করে বিনিয়োগকারীদের সে সম্পর্কে অবহিত করা, পুঁজিবাজারের যাতে উন্নয়ন হয় সেভাবে কাজ করা।’
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজার এখন অনেক পরিপক্ব। সেটি আরও পরিপক্ব অবস্থার দিকে যাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের জানতে হবে কোনটি কী ধরনের প্রডাক্ট, কোনটিতে কী ধরনের সুবিধা আছে, কী ধরনের অসুবিধা আছে।
‘একেক প্রডাক্টের একেক ধরনের দিক আছে। কোনোটির খারাপ দিক আছে, কোনোটির ভালো দিক আছে। ফলে সবদিক পর্যালোচনা করেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা উচিত। এজন্য আমাদের বিনিয়োগ শিক্ষা প্রয়োজন।’
পুঁজিবাজারে আতঙ্ক ছড়িয়ে কেউ যেন ক্ষতি করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখার ওপরও জোর দেন তিনি।
বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের অনেক বিজ্ঞজনরা পুঁজিবাজার নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন। এতে পুরো পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে।
‘আমানত ও লভ্যাংশের মধ্যে পার্থক্য আছে। সেটি আমাদের জানতে হবে। এ সম্পর্কে আমাদের ধারণা থাকতে হবে। এ ধরনের ভুল ব্যাখ্যার কারণেও বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।’
সেমিনারে পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন ‘ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের’ প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম রুবেল বলেন, ‘প্রয়োজনে স্কুল-কলেজে যারা আছে তাদের মধ্যেই বিনিয়োগ শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে।’ এখানে শুধু শিক্ষা নয়, প্রয়োজন নৈতিক বিনিয়োগ শিক্ষা।’
সেরা টিভি/আকিব