পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাল্য বন্ধুকে নিয়ে আবেগাপ্লুত প্রতিমন্ত্রী - Shera TV
  1. [email protected] : akibmahmud :
  2. [email protected] : f@him :
পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাল্য বন্ধুকে নিয়ে আবেগাপ্লুত প্রতিমন্ত্রী - Shera TV
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন

পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাল্য বন্ধুকে নিয়ে আবেগাপ্লুত প্রতিমন্ত্রী

সেরা টিভি
  • প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১

অনলাইন ডেস্ক:
বন্ধু বন্ধুই, এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। রংপুরে এসে এক সুইপার বন্ধুকে বুকে টেনে নিলেন তিনি। শনিবার (২৩ অক্টোবর) প্রতিমন্ত্রীর বাবার পুরনো কর্মস্থল রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে এই আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

রাষ্ট্রীয় সফরে রংপুরে এসেছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। এ সময় তিনি রংপুর অঞ্চলের বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। পাশাপাশি পীরগঞ্জে সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার মানুষদের পুনর্বাসনে ত্রাণসহায়তা দেন। এ সময় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন তিনি।

তবে এরই ফাঁকে সময় করে শৈশবের স্মৃতিমাখা রংপুরে তার স্কুলজীবনের সহপাঠী বন্ধুর খোঁজ নিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। দেখা করে ছবিও তুলেছেন। সেই ছবি আবার নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেছেন।

শনিবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে গিয়ে তার স্কুলজীবনের বন্ধু ছিতুয়ার সঙ্গে দেখা করেন প্রতিমন্ত্রী। খোঁজখবর নেওয়ার পর হাসিমুখে বন্ধুর পাশে দাঁড়িয়ে ছবিও ওঠেন। ওই ছবিটি সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটে নিজের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। মুহূর্তেই ভাইরাল হওয়া ছবিটি বিভিন্নজন শেয়ার করেন ও লাইক দেন। ইতিবাচক মন্তব্যও করছেন অনেকে।

প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান তার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার গল্পটা লিখতে গিয়ে বলেছেন, আমার বন্ধুদের অনেকেই দেশবরেণ্য চিকিৎসক, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবসহ আরও কত কি! ছিতুয়া অবশ্যই তাদের তুলনায় কম কিছু নয়। বন্ধু মানে আস্থা, নির্ভরতা। বন্ধু মানে ভালোবাসা, যেখানে থাকে না কোনো স্বার্থ।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া প্রতিমন্ত্রীর লেখা সেই পোস্টটি সেরা টিভির পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

‘পতাকাবাহী গাড়ি। পুলিশ প্রটোকল। বাড়তি লোকজনের ভিড়। এসব দেখে কিছুটা হতভম্ব ছিতুয়া। আমাদের সেই বন্ধুত্বের আবেগ আর আমার দুরন্তপনার দিনগুলো তখন অতীতের স্মৃতির ঝাঁপি খুলে জ্বল জ্বলে তারা হয়ে উপস্থিত আমার চোখের সামনে। কিন্তু ছিতুয়া প্রচণ্ড আড়ষ্ট। নিজেকে আড়াল করার কি ব্যর্থ চেষ্টা! আমি বুঝতে পারছিলাম, প্রতিমন্ত্রী হিসেবে চারপাশের প্রটোকলের আবহ ছিতুয়া আর আমার সম্পর্কের মধ্যে এক অদৃশ্য দেয়াল টেনে দিচ্ছে।

জনারণ্যে ‘‘এ্যাই ছিতুয়া’’ বলে ডাকতেই ফিরে তাকালো সে। পড়ন্ত বয়সেও যেন সেই হারানো যৌবনের চকচকে চোখে মৃদু হাসিতে তাকালো আমার দিকে। দৃষ্টি বিনিময় হতেই বন্ধুকে বুকে টেনে নিয়ে বুক ফুলিয়ে গর্বের সাথে বললাম, এই ছিতুয়াই আমার স্কুলের বন্ধু। ছিতুয়ার তখন ছল ছলে চোখ। আমারও গোপন অশ্রুবিন্দু গুলো তখন স্মৃতির মণিমুক্তা হয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে দুই নয়ন।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচ্ছন্নতাকর্মী (সুইপার) থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছে ছিতুয়া। ছিতুয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে ধারাবাহিক পেশাগত সম্পর্ক ধরে রেখেছে বৌদি গীতা রানী। সেও এখন সুইপার পদে কর্মরত।

তো আসছি ছিতুয়ার প্রসঙ্গে। আমার বাবা মরহুম আক্তারুজ্জামান খান ছিলেন এই অফিসেরই উচ্চমান সহকারি ( ইউডি অ্যাসিস্ট্যান্ট)। আর ছিতুয়ার মা (আমাদের প্রিয় মাসি মা) চানিয়া রানী ছিলেন সুইপার।

তখন ছিলো স্বর্ণালীযুগ। আমরা যে মূল্যবোধে বেড়ে উঠছিলাম, সেখানে জাতপাতের কোনো বালাই ছিল না। আরও অন্যান্য বন্ধুদের মতো ছিতুয়াও ছিল আমার দুরন্ত শৈশব আর কৈশোরের অসাধারণ এক বন্ধু। রংপুরের রবার্টসনগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আমাদের সঙ্গেই ছিল ছিতুয়া। তারপর পড়াশোনায় সে ইস্তফা দিলেও আমাদের বন্ধুত্বে ভাটা পড়েনি কখনো।

আহারে জীবন। আমার সোনালি অতীত। সোনালি কৈশোরের কত শত স্মৃতি মাখা এই রংপুর। আজ ছিতুয়া ঝাপসা করে দিচ্ছে আমার চোখ দুটো। ছিতুয়া আর আমার দুরন্তপনায় রীতিমতো অস্থির থাকতো পানি উন্নয়ন বোর্ডের কলোনি। আমি দুঃসাহসী ‘‘গেছো’’ ছিলাম। যে কোনো গাছে কাঠবিড়ালের মতো তরতর উঠে পড়তে আমার আর ছিতুয়ার ছিল জুড়ি মেলা ভার। তো কলোনির আঙিনায় সারি সারি নারকেল গাছের নারকেল পরিপক্ক হওয়ার আগেই তা আমাদের কারণে সাবাড় হয়ে যেত। তেমনি আম কাঁঠালও।

জীবনের পড়ন্ত বেলায় এসে কৈশোরের হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিগুলো একদিকে যেমন আনন্দের অন্যদিকে অনেক কষ্টের। সেই আনন্দ আর কষ্টের মিশেলে ভিন্ন‌ এক অনুভূতি আজ উপহার হিসেবে তুলে দিয়েছে আমার বন্ধু ছিতুয়া। সরকারি চাকরি কনটিনিউ করলে বেশ কয়েক বছর আগে আমার নিজেরও অবসর নিতে হতো। আমার বন্ধুদের অনেকেই দেশবরেণ্য চিকিৎসক, সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত লেফটেনেন্ট জেনারেল, অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিবসহ আরও কত কি! ছিতুয়া অবশ্যই তাদের তুলনায় কম কিছু নয়।

বন্ধু মানে আস্থা, নির্ভরতা। বন্ধু মানে ভালোবাসা, যেখানে থাকে না কোনো স্বার্থ। গাড়ির পতাকা, প্রটোকল, পদ-পদবি, সামাজিক অবস্থান- এগুলো সব কিছুই সাময়িক। কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধন চিরদিনের। ছিতুয়া বন্ধু আমার। তোর জন্য ভালোবাসা।’

সেরা টিভি/আকিব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরীর আরও সংবাদ
© All rights reserved by Shera TV
Developed BY: Shera Digital 360