অনলাইন ডেস্ক:
মাদককাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়ার ২৫ দিন পর বৃহস্পতিবার বোম্বে হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করেছেন শাহরুখপুত্র আরিয়ান খান ও তার বন্ধু আরবাজ মার্চেন্ট ও মুনমুন ধমেচাদের। আরিয়ানের বিরুদ্ধে বৃহত্তর ড্রাগ নেক্সাসের সঙ্গে যুক্ত থাকার এবং গত তিন বছর ধরে নিয়মিত নিষিদ্ধ মাদক সেবেনের অভিযোগ এনেছিল ভারতের কেন্দ্রীয় মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার আরিয়ানদের বিরুদ্ধে এনডিপিএস আইনের ২৯ নম্বর (ষড়যন্ত্র) যোগ করা নিয়ে তুমুল বিতণ্ডা হয় বোম্বে হাইকোর্টে। এনসিবির তরফ থেকে আরিয়ানদের আইনজীবীদের তর্কের পাল্টা জবাব দেওয়া হয়। তবে শেষমেশ দুই পক্ষের সওয়াল-জবাব শুনে আরিয়ান, আরবাজ ও মুনমুনদের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট।
এক্ষেত্রে আরিয়ান ও আরবাজদের আইনজীবীদের উপস্থাপন করা পাঁচটি যুক্তি পর্যালোচনা করে তাদের জামিন দেন হাইকোর্ট। চলুন তবে জেনে আসি সেই পাঁচ যুক্তি সম্পর্কে।
এক. এদিন আরিয়ানের আইনজীবী মুকুল সওয়াল করেন, সিআরপিসির ৫০ নম্বর ধারা থেকে সংবিধানের ২২ নম্বর ধারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই সঠিক কারণ না জানিয়ে কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে না। আরিয়ানের অ্যারেস্ট মেমোতে অপরাধমূলক ষড়য়ন্ত্র (এনডিপিস আইনের ২৯ নম্বর ধারা) ছিল না।
দুই. আরবাজ মার্চেন্টের আইনজীবী তথা আরিয়ানের লিগ্যাল টিমের অংশ অমিত দেশাই বলেন, ‘এনসিবির কাছে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রমাণ করার জন্য কোনো হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট নেই। উদ্ধার করা হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটগুলো ২০১৮ সালের। তার সঙ্গে ২ অক্টোবরের মামলার যোগ থাকতে পারে না। প্রথমে এনসিবি বলল তিনজন ষড়যন্ত্র করেছে, পরে সেটা হল ৮ জন, এরপর গিয়ে দাঁড়াল ২০ জনে’।
তিন. মুকুল রোহাতগি বলেন, আরিয়ানের অ্যারেস্ট মেমোতে তার থেকে উদ্ধার হওয়া যে সমস্ত জিনিসের তালিকা রয়েছে, তা কখনোই আমার মক্কেলের কাছে পাওয়া যায়নি। যে দোষের জন্য সাজা সর্বোচ্চ এক বছর (মাদক সেবন) তার জন্য ২৫ দিন ধরে কাউকে জেলেবন্দি রাখা উচিত নয়।’
চার. মুনমুন ধমেচার আইনজীবী আদালতে সওয়াল করেন, তার মক্কেলকে ‘বলির পাঁঠা’ বানানো হচ্ছে। ব্যক্তিগত ব্যবহারের মাদকের সঙ্গে কমার্শিয়াল কোয়ান্টিটির মাদক এক করে ফেলছে মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
পাঁচ. এনসিবির পদক্ষেপ ‘সাংবিধানিক অধিকারের সরাসরি লঙ্খন’ বলে দাবি করেন মুকুল রোহাতগি। তার কথায়, যে মামলার সর্বোচ্চ সাজা এক বছর সেখানে জামিনই কাম্য। অভিযুক্তদের জেলবন্দি রাখা মোটেই শ্রেয় নয়। আরিয়ান-আরবাজ দুজনেই মুম্বাইয়ের বাসিন্দা। তদন্তের স্বার্থে যে কোনো সময় এনসিবি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে।
গত ২ অক্টোবর রাতে মুম্বাই থেকে গোয়াগামী এক প্রমোদতরীর পার্টি থেকে আরিয়ান ও তার বন্ধুদের আটক করে এনসিবি। দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা জেরার পর পরদিন তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। তাদের রাখা হয় এনসিবির জেল হেফাজতে। এরপর থেকে বারবার আবেদন করেও জামিন পাচ্ছিলেন না আরিয়ান ও তার বন্ধুরা।
এরপর তারা বোম্বে হাইকোর্টের দারস্থ হন। কিন্তু এখানেও বারবার পেছাচ্ছিল তাদের জামিন শুনানি। অবশেষে দুই পক্ষের যুক্তি-তর্ক পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার শর্ত সাপেক্ষে আরিয়ানদের জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। এই খবরে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই শাহরুখ খানের বাড়ির সামনে ভিড় জমাতে শুরু করেন উচ্ছ্বসিত ভক্তরা। আরিয়ানের জামিনের আনন্দ ভাগাভাগি করেন তারা।
সেরা টিভি/আকিব