ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জমায়েত, অনুষ্ঠান, দোকানপাট, ব্যবসা, ভ্রমণ নিষিদ্ধ করছে একের পর এক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক ও লস অ্যানজেলেস বার, রেস্তরাঁ, থিয়েটার ও সিনেমা হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেপন ও ইতালিতে জারি হয়েছে লকডাউন। জার্মানি তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পর্তুগালও সেপনের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপের পাশাপাশি আফ্রিকা, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোও একইরকম পদক্ষেপ নিচ্ছে। ভাইরাসের অর্থনৈতিক প্রভাব কমাতে দেশে দেশে জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। জরুরি ভিডিও কনফারেন্সে বসার কথা রয়েছে বিশ্বের সাত শীর্ষ অর্থনীতির। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
খবরে বলা হয়, চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনা ভাইরাসে কাঁপছে পুরো বিশ্ব।
প্রতিদিন ভাইরাসে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত প্রাণ। চীনে ভাইরাসটির প্রকোপ কমে এসেছে। একইসঙ্গে কয়েকগুণ বেশি গতিতে তা বৃদ্ধি পেয়েছে ইউরোপ ও আমেরিকায়। দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বহু দেশের সরকার সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপে রোববার একদিনে মারা গেছেন প্রায় ৬০০ মানুষ।
এর মধ্যে ইতালিতেই মারা গেছেন ৩৬০ জনের বেশি। ভাইরাসটির অর্থনৈতিক প্রভাব মাত্রা ছাড়িয়েছে। দেশে দেশে শেয়ার বাজারে ধস নেমেছে। মাত্র এক দশক আগের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার ঘা এখনো মুছে যায়নি। তার মাঝে করোনার আগ্রাসনে নতুন করে টলছে অর্থনীতির ভিত। ফের অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সোমবার ভিডিও কনফারেন্সে বসার কথা রয়েছে বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক দেশগুলোর জোট জি সেভেন নেতাদের। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রিজার্ভ জরুরিভিত্তিতে সুদের হার কমিয়েছে। একই ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে অন্যান্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকও।
তবে তাতে নিস্তার মেলেনি। সোমবারও অস্থির রয়েছে শেয়ারবাজার। এদিন নিউজিল্যান্ডে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার রেকর্ড পরিমাণ কমিয়েছে এক জরুরি বৈঠক শেষে। ব্যাংক অব জাপান সোমবার এক জরুরি বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে বৈঠকটি বুধবার থেকে বৃহসপতিবারে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।
করোনা মোকাবিলায় জমায়েত, অনুষ্ঠান, দোকানপাট, ব্যবসা, ভ্রমণ নিষিদ্ধ করছে একের পর এক দেশ। এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৯ হাজারের বেশি মানুষ। প্রাণ হারিয়েছেন ৬ হাজারের বেশি। রোববার ফ্রান্স ও ইতালিতে ‘লকডাউন’ জারি করা হয়েছে কয়েক কোটি মানুষের ওপর। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে বহিরাগতদের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টিনে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের মেয়র বিল দে ব্লাসিও রোববার জানান, তিনি শহরজুড়ে রেস্তরাঁ, বার, ক্যাফে বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেগুলোয় এখন থেকে কেবলমাত্র ডেলিভারি ব্যবস্থা মেনে খাদ্য পাঠানো হবে বাড়িতে।
এ ছাড়া, নাইট ক্লাব, মুভি থিয়েটার, ছোটো থিয়েটার হাউজ ও কনসার্ট ভেন্যুগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্লাসিও বলেন, এই জায়গাগুলো আমাদের শহরের প্রাণ। কিন্তু আমাদের শহর এখন নজিরবিহীন এক হুমকির মুখে রয়েছে। আমাদের যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির প্রস্তুতি নিতে হবে। এসবের পাশাপাশি চলতি সপ্তাহ থেকে শহরটির স্কুলগুলোয় ক্লাস নেয়া বন্ধ থাকবে। লস অ্যানজেলেসও অনেকটা একই রকম পদক্ষেপ নিয়েছে। লাস ভেগাসে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সকল ক্যাসিনো ও বার।
সীমান্ত বন্ধ
দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকায় ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে একাধিক দেশ। পানামায় অনাবাসী বিদেশিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হন্ডুরাস এক সপ্তাহের জন্য তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। আর্জেন্টিনা ও পেরুও রোববার সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। এর মধ্যে আর্জেন্টিনা ১৫ দিনের জন্য সীমান্ত বন্ধ রাখবে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ। সীমান্তের পাশাপাশি দেশজুড়ে সকল সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় উদ্যানগুলো মাসজুড়ে বন্ধ থাকবে। পেরু জানিয়েছে, তারা আকাশ ও সমুদ্র পথেও পরিবহন বন্ধ রাখবে। অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ কিছুটা হালকা হিসেবে সমালোচিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রামপ গত সপ্তাহে ইউরোপের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তবে নিউ ইয়র্ক, লাস ভেগাস ও লস অ্যানজেলেসের পাশাপাশি ওহিও ও ইলিনয় রাজ্যে রোববার বার ও রেস্তরাঁ বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
সীমান্ত বন্ধ বেড়েই চলেছে আফ্রিকায়
এদিকে, করোনা আতঙ্কে সীমান্ত বন্ধ বেড়েই চলেছে আফ্রিকান দেশগুলোয়। বিবিসি জানিয়েছে, সোমবার করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে পদক্ষেপ জোরদার করেছে আফ্রিকার দেশগুলো। বেশ দ্রুত সেখানে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসটি। সর্বশেষ এর সংক্রমণ রোধে সীমান্ত বন্ধ করেছে ঘানা। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা ভাইরাসটি নিয়ে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করেছে।
ভাইরাস আক্রান্ত দেশের নাগরিকদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে সীমান্ত। এর মধ্যে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, সেপন, ইতালি ও বৃটেন রয়েছে। এদিকে, কেনিয়াও দেশজুড়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। ভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে এমন দেশের নাগরিকদের জন্য প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করেছে। সকল আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে মরক্কো, জিবুতি ও তানজানিয়া। মরক্কোয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৮ জনে পৌঁছেছে। মারা গেছে একজন।
লিবিয়ার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারও আকাশ ও স্থলপথে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। তাদের প্রতিবেশী দেশ আলজেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৪৮ জনে। দেশটি ফ্রান্সের সঙ্গে সকল ফ্লাইট বাতিল করেছে। তিউনিশিয়ায় সকল সীমান্ত বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইলিজ ফাখফাখ। বড় ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। দেশটিতে ২০ জন করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। মোজাম্বিকে প্রেসিডেন্ট ফিলিপ নিয়ুসি ৩০০’র বেশি মানুষের জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে। আফ্রিকাজুড়ে ২৬টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা।
সেরা নিউজ/আকিব