স্পোর্টস ডেস্ক:
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছাবন্দি আছেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এই তারকা জুয়াড়ির সঙ্গে আলাপ গোপন করায় এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছেন। বৈবাহিক সূত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের অধিকার পাওয়া সাকিব বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের কাছে ফিরে গিয়েই পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে বাসায় না গিয়ে ওঠেছেন এক হোটেলে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি ভিডিও বার্তায় বিমর্ষ সাকিব জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকির কথা মাথায় রেখেই তার এই সিদ্ধান্ত।
ভিডিও বার্তায় সাকিব জানান, আশা করি সবাই ভালো আছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশেও বেশ কয়েকজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। আমাদের এখনই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের সতর্কতাই পারে আমাদের দেশকে সুরক্ষিত রাখতে। আমাদেরকে সুস্থ্য রাখতে। কিছু সহজ পন্থা অবলম্বন করলে আমরা এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারব। যেমন, সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হাঁচি বা কাশি দেওয়ার সময় সঠিক নিয়ম মেনে চলা এবং যদি কেউ বিদেশফেরত থাকেন তাহলে নিজেকে ঘরে রাখা এবং ঘর থেকে বাইরে না যাওয়া হয় সেই বিষয়ে খেয়াল রাখা।
তিনি বলেন, আরেকটি ব্যপার খেয়াল রাখতে হবে; আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব কেউ যেন এসে আপনার সঙ্গে দেখা করতে না পারে, এটা খুবই জরুরি। আমি ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে ভাগাভাগি করছি। আমি মাত্রই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এসে পৌঁছেছি। যদিও বিমানে সবসময় ভয় কাজ করেছে একটু হলেও। তারপরও চেষ্টা করেছি কিভাবে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা যায়। জীবাণুমুক্ত রাখা যায়।
তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ল্যান্ড করার পর আমি সোজা একটি হোটেলে উঠেছি এবং তাদেরকেও অবগত করেছি যে আমি এখানে থাকব কিছুদিন। আমি যেহেতু বিমানে চড়ে এসেছি, আমার একটু হলেও রিস্ক আছে। এজন্য আমি নিজেকে আইসোলেটেড করে রেখেছি, সেজন্য আমি আমার বাচ্চার সঙ্গেও দেখা করছি না। এখানে এসেও আমি আমার বাচ্চাকে দেখতে পাচ্ছি না, এটা অবশ্যই আমার জন্য খুব কষ্টদায়ক একটা ব্যাপার। তারপরও আমার মনে হয়েছে, এই সামান্য আত্মত্যাগটুকু করতে পারলে আমরা অনেকদূর এগোতে পারব। এই কারণেই আমাদের দেশে যারা এখন বিদেশফেরত, অনেকেই এসেছেন আমি জানি। নিউজের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আমাদের দেশে অনেক মানুষ এসেছেন বিদেশ থেকে। আমাদের দেশেরই মানুষ তারা। যেহেতু তাদের ছুটির সুযোগ কম থাকে, সেজন্যে তারা চান দেশে এসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে, ঘোরা-ফেরা করতে, আড্ডা দিতে, কিংবা কোনো অনুষ্ঠানে একত্রিত হতে। যেহেতু সময়টা অনুকূলে না, আমি সবাইকে অনুরোধ করব; সবাই যেন এই নিয়মগুলো মেনে চলেন। কারণ আমাদের সামান্য এই আত্মত্যাগটুকু পারে আমাদের পরিবারকে বাঁচিয়ে রাখতে, সুস্থ্য রাখতে। আশা করি সবাই আমার এই কথাগুলো শুনবেন এবং কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ সরকার বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো সংগঠন যেসব দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন, সেগুলোর ব্যাপারে অবগত হবেন, এবং সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
সাকিব আল হাসান আরো বলেন, আর একটা কথা অবশ্যই বলতে চাই, কেউ আতঙ্কিত হবেন না। আমার মনে হয় না, এটা কোনো ভালো ফল বয়ে আনতে পারবে। আমি খবরে দেখেছি, অনেকে ৩, ৪, ৫ বা ৬ মাস পর্যন্তও খাবার সংগ্রহ করছেন। আমার ধারণা, খাবারের সংকট কখনোই হবে না ইনশাআল্লাহ্। আমরা কেউ না খেয়ে মারা যাব না। তাই আমরা আতঙ্কিত না হই। আমাদের সঠিক সিদ্ধান্তই পারে এর থেকে রক্ষা করতে। সেটা আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব। আশা করি সবাই ভালো থাকবেন এবং প্রয়োজন ছাড়া কেউ ভ্রমণ বা বাড়ির বাইরে বের হবেন না।
নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারছেন না সাকিব। এই সময়ে করোনার সংক্রমণ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যালেন্ডার থেকে ছেঁটে ফেলেছে অনেকগুলো সূচি, যার ভেতর আছে আইপিএল এবং বাংলাদেশের আয়ারল্যান্ড সফর, যে আয়োজনে নিষেধাজ্ঞায় বাইরে না থাকলে নিশ্চয়ই খেলতেন সাকিব।
সেরা নিউজ/আকিব