সেরা নিউজ ডেস্ক:
করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।
এরই মধ্যে করোনার উৎপত্তি নিয়ে আবারও শুরু হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্র দেশ স্পেন, ইতালি ও ফ্রান্স ছাড়াও এশিয়ায় সবচেয়ে বড় মিত্র জাপান এখন করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ায় নতুন করে এ বিতর্কের জন্ম হয়েছে। খবর ফক্স নিউজ ও রয়টার্সের।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, চীন থেকে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস, এ ভাইরাসকে পুঁজি করে ব্যবসা শুরু করেছে চীন।
আর চীনের দাবি, মার্কিন সেনাদের গবেষণাগার থেকে উহানে ছড়িয়েছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস। অর্থ, ওষুধ, নার্স ও চিকিৎসক দিয়ে ইউরোপসহ বিশ্বে অন্য যে কোন মহাদেশে তারা এ ভাইরাস মোকাবেলায় তাদের অভিজ্ঞতা ও সহায়তায় প্রস্তুত।
ট্রাম্প বলেন, মার্কিন বিজ্ঞানীদের কাছে ভাইরাসের উপাত্ত পাঠিয়েছে চীন। প্রেসিডেন্ট শি’র সঙ্গে ফোনালাপের পর তারা আরও তথ্য পাঠাচ্ছে।
‘চীনে তাদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা কথা বলেছি। আমরা অনেক কিছুই জানতে পেরেছি,’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট বললেন।
এদিকে, চীন থেকে আনা করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট ‘ত্রুটিপূর্ণ’বলে জানাল স্পেন ও চেক প্রজাতন্ত্র
চীনের কাছ থেকে কেনা করোনাভাইরাস শনাক্তকরণ কিটে ত্রুটি পাওয়া গেছে বলে সতর্ক করেছে স্পেনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ।
তারা বলছে, চীন থেকে আনা কিটগুলো দিয়ে শনাক্তকরণ পরীক্ষায় ধারাবাহিক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। ভাইরাস শনাক্ত করার ক্ষেত্রে কিটগুলো ৩০ শতাংশের কম কার্যকর হওয়ায় সেগুলো ব্যবহারের অযোগ্য বলে জানিয়েছে স্পেনের স্বাস্থ্য বিভাগ।
বড় ধরনের ত্রুটি পাওয়ায় চীন থেকে আসা করোনাজনিত কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিটের প্রথম চালানটি ফেরত পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে স্পেন।
এদিকে অভিযোগ ওঠার পর দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্পেনে অবস্থিত চীনের দূতাবাস। সম্প্রতি স্পেনের সঙ্গে ৪২ কোটি ৩০ লাখ ইউরোর একটি চুক্তি করে চীন। ওই চুক্তিতে চীন থেকে সাড়ে ৫০ লাখ টেস্ট কিট কেনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
কিন্তু চীনা দূতাবাস জানায়, ত্রুটিপূর্ণ কিটগুলো ওই চুক্তির অংশ নয়। দূতাবাস আরও জানায়, ত্রুটিপূর্ণ কিটগুলো একটি লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কেনা।
স্প্যানিশ মাইক্রোবায়োলজি গবেষণাগারে কাজ করেন, এমন একটি সূত্রের বরাত দিয়ে মাদ্রিদভিত্তিক স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইস জানিয়েছে, চীনা কিটগুলো দিয়ে শনাক্তকরণ পরীক্ষায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি।
চীনা টেস্ট কিটগুলো পরীক্ষা করেছেন, এমন একজন অণুজীব বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘যে ফল পাওয়া গেছে, তারপর এসব কিট ব্যবহার করার কোনো মানে হয় না।’
জানা গেছে, ত্রুটিপূর্ণ কিটগুলো শেনঝেন বায়োইজি বায়োটেকনোলজি নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কিনেছিল স্পেন। কিন্তু চীন ও স্পেনের মধ্যে কিট-সংক্রান্ত যে চুক্তি হয়েছে, সে অনুযায়ী চীনা সরকারের দেয়া তালিকায় ওই প্রতিষ্ঠানের নাম নেই।
চীনা দূতাবাস জানিয়েছে, শেনঝেন বায়োইজি বায়োটেকনোলজি চীনের ন্যাশনাল মেডিকেল প্রোডাক্ট কর্তৃপক্ষের লাইসেন্সভুক্ত নয়। ওই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তিন লাখ ৪০ হাজার কিট কেনার জন্য চুক্তি করেছিল স্পেন।
এদিকে একই ঘটনা ঘটেছে চেক প্রজাতন্ত্রের ক্ষেত্রেও। চীন থেকে আমদানি করা শনাক্তকরণ কিটের প্রায় ৮০ শতাংশই ত্রুটিপূর্ণ বলে জানিয়েছে চেক প্রজাতন্ত্র।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হাসপাতালগুলোতে উপচেপড়া করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসায় আরও সুরক্ষাসামগ্রী ও পোশাক সরবরাহ করতে আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। দেশটিতে ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। যাদের মধ্যে মারা গেছেন এক হাজার ৬০০।
রোগীদের শ্বাসপ্রশ্বাসে সহায়ক ভেন্টিলেটর ও মেশিন সরবরাহে অতিরিক্ত জোর দিতে বলেছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। যারা এই প্রাণঘাতী ভাইরাসে আক্রান্ত, তাদের জন্য এসব জিনিস বেশি প্রয়োজন বলে জানান তারা।
শুক্রবার আঠারো হাজার মার্কিন নাগরিকের শরীরে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। এ অবস্থায় নিউইয়র্ক, নিউ ওরলিন্স, ডেট্রয়েটসহ ভাইরাসের অন্যান্য কেন্দ্রস্থলের হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ঔষধ, চিকিৎসা রসদ ও প্রশিক্ষিত কর্মীদের অভাবের ঘটনায় উদ্বেগের কথা বলা হয়েছে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যার হিসেবে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিচ্ছে এখন যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবারই চীন ও ইতালিকে ছাড়িয়ে গেছে দেশটি।
ব্রুকলিনের ব্রোকডালি ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অ্যান্ড মেডিকেল সেন্টারের ডা. আরাবিয়া মোলেট্টে বলেন, আমরা আতঙ্কিত। প্রতিটি মানুষের জীবন বাঁচাতে আমরা লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারণ ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছি আমরা।
কোভিড-১৯ আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা ষষ্ঠতম অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যাও এক হাজার ৬০০ পেরিয়ে গেছে।
এদিকে করোনাভাইরাসের কারণে মুখোমুখি হওয়া ক্ষতির হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে টেনে তুলতে মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়া দুই দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা বিলে শুক্রবারই সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
তার স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে বিলটি আইনে পরিণত হল। এই প্রণোদনা করোনাভাইরাসের আতঙ্কের মধ্যেও মার্কিন শ্রমিকদের স্বস্তি দেবে বলে ট্রাম্প মন্তব্য করেছেন।
চিকিৎসা উপকরণের ঘাটতির মধ্যে পরিস্থিতি মোকাবেলায় ট্রাম্প তার জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে জেনারেল মোটরসকে ভেন্টিলেটর উৎপাদনে লাগিয়ে দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় এ অটোমেকার কোম্পানি দরকষাকষির নামে সময় অপচয় করছিল বলে প্রেসিডেন্ট অভিযোগও করেছেন।
মার্কিন কোম্পানিগুলোকে চিকিৎসা উপকরণ বানাতে বাধ্য করতে ট্রাম্পের ওপর কোরীয় যুদ্ধের সময়কার প্রতিরক্ষা উৎপাদন আইন সচল করার চাপ ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার বদলে কোম্পানিগুলোর স্বেচ্ছা সহযোগিতার ওপর জোর দিচ্ছিলেন।