স্টাফ রিপোর্টার:
শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইতে গ্রেফতার করেছে ইন্টারপোল পুলিশ। ইন্টারপোলের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো দুবাইয়ের সঙ্গে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) ঢাকার তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে বুধবার স্থানীয় সময় রাতে গ্রেফতার করা হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার এনসিবি ঢাকা তার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করে। এই মুহূর্তে জিসানকে বাংলাদেশের পুলিশের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা যায়। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পর ডিবি পুলিশের দুই সদস্যকে হত্যাসহ বিভিন্ন হত্যা মামলা এবং চাঁদাবাজির মামলার অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হবে বলে জানা যায়। সম্প্রতি যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে বহিস্কৃত এবং রিমান্ডে থাকা খালেদ মাহমুদ জিসানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে জানা যায়। একই সঙ্গে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি বহু ঘটনায় সমালোচিক ইসমাইস হোসেন চৌধুরী স¤্রাটের সঙ্গেও ছিল তার ঘনিষ্ঠতা। জিসানের নির্দেশে ঢাকায় বহু হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসি ঘটনা শিকার হয়েছেন অনেকে এমন অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘ ১৩ বছর পলাতক থাকার পর তালিকাভুক্ত এই শীর্ষ সন্ত্রাসি গ্রেফতার হলো।
জিসানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মহিউল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতারের পর আমাদের কাছে অনেক ডকুমেন্ট চেয়ে চেকলিস্ট পাঠিয়েছে দুবাই। মামলা সংক্রান্ত পেপারগুলো ডিবি আমাদের দেবে। এরপর মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে লিগ্যাল অ্যাগ্রিমেন্ট করার চেষ্টা করা হবে। আমরা আশা করি তাকে শিগগিরই দেশে এনে বিচার কাজ শুরু করতে পারবো। দীর্ঘদিন জিসানের পেছনে লেগে থাকার কারণে তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।’
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো) মহিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিসানকে গ্রেফতারের বিষয়ে দুই মাস আগে থেকে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো দুবাইয়ের সঙ্গে ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো ঢাকা যোগাযোগ শুরু করে। গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি থেকে জিসানের লেটেস্ট ছবি ও তথ্য পাঠানোর পর তারা (এনসিবি দুবাই) জিসানকে শনাক্তের কাজ শুরু করে। এরপর দুবাই এনসিবি ঢাকাকে জানায়, তারা জিসানকে নজরদারির মধ্যে রেখেছে।
নিশ্চিত হওয়ার জন্য এনসিবি দুবাই জিসানের সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য চায় এবং ঢাকাকে জানানো হয়, জিসান ভিন্ন নাম ব্যবহার করে দুবাইতে আছে। একইসঙ্গে অন্য দেশের (ভারতের) পাসপোর্ট ব্যবহার করছে। এ তথ্য জানার পর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মাধ্যমে সেগুলো যাচাই করা শুরু হয়।
এআইজি মহিউল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা জানতে পারি জিসান বর্তমানে ‘আলী আকবর’ নামে দুবাইতে আছে এবং তার পাসপোর্টটি ভারতের। এই পাসপোর্ট ভেরিফাইয়ের কাজ শুরু করার পর এনসিবি দুবাই আবার জানায়, জিসানের কাছে ডমিনিকান রিপাবলিকের পাসপোর্ট রয়েছে। পরবর্তীতে ডমিনিকান রিপাবলিকের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি। তারা জানায়, আমরা এ নামে কোনও পাসপোর্ট দেখছি না।’’
এরই মধ্যে জিসানের ব্যাপারে ইন্টারপোলের রেড এলার্ট নোটিশটি আপডেট করা হয় বলে জানান এআইজি মহিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বিভিন্নভাবে ভেরিফিকেশনের কাজ চলার সময় জিসানের ব্যাপারে থাকা রেড এলার্টটি আপডেট করতে বলা হলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে সেটা আপডেট করি। আপডেটে আরও কিছু মামলা যুক্ত করা হয়। এরমধ্যে এনসিবি দুবাই জিসানের আপডেট সম্পর্কে জানতে চায়। আমরা তখন ডিবির সঙ্গে বৈঠক করি। ডিবি আমাদের জানায়, সে এখনও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তার ভাইও সেখানে বসে অপরাধ করছে। এরপর ডিবি কয়েকটি নম্বর দেয়। এনসিবি দুবাই সেগুলো ট্র্যাক করে। সম্প্রতি তার দুজন সহযোগী ঢাকায় ধরা পড়ে। এসব তথ্যও আমরা দুবাইকে জানাই।’
সর্বশেষ বুধবার রাতে দুবাইয়ে জিসানকে গ্রেফতারের পর এনসিবি দুবাই ঢাকাকে জানায়। পরদিন বৃহস্পতিবার যাচাই করে জিসানের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান এনসিবি ঢাকার কর্মকর্তা মহিউল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে আইপি ফোনে যোগাযোগ করি এবং ভেরিফাইয়ের করে নিশ্চিত হই গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিই জিসান। বৃহস্পতিবার আমরা নিশ্চিতভাবে জানলাম জিসান গ্রেফতার হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করার পর দুবাইয়ে জুডিশিয়াল কাস্টডিতে নেওয়া হয়েছে।’
জিসানের গ্রেফতার ও দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. সোহেল রানা বলেন, ‘বাংলাদেশ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এনসিবি শাখার উদ্যোগে ও এনসিবি (ইন্টারপোল) দুবাইয়ের সহযোগিতায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনসিবি দুবাই ৩ অক্টোবর বিষয়টি আমাদের নিশ্চিত করেছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাকে দ্রুত বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হবে।’
সাম্প্রতিক দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে দুই যুবলীগ সাবেক নেতা জি কে শামীম ও খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতারের পর জিসানের নাম নতুন করে আলোচনায় আসে। তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলেও জানা গেছে।