নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা পরিস্থিতিতে সারা দেশে অঘোষিত লকডাউনের মধ্যেও দেশের সব মসজিদ চালু রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমরা। তাদের মতে, জুমার জামাতসহ সব জামাত চালু থাকবে। সীমিত আকারে হলেও যে কোনো মূল্যে দেশের সব মসজিদ চালু থাকবে। এমনকি করোনা পরিস্থিতির আরও অবনতি হলেও কোনোভাবেই মসজিদ বন্ধ করা যাবে না।
রোববার ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে আলেমরা তাদের এমন মতামত ব্যক্ত করেন। আলেমদের মতামতের ভিত্তিতে দেশের সব মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। তবে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে পুরো মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলার আহ্বান জানানো হয়েছে।
একই সঙ্গে জামাত সংক্ষিপ্ত করার কথাও বলেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন (ইফা)। দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে বৈঠক করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইফা। সোমবার (৩০ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত ২৪ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন দেশের খ্যাতনামা আলেমদের সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে জনগণের সুরক্ষার বিষয়ে পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে বৈঠক করে। সেই বৈঠকেও আলেমরা মসজিদগুলোতে জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের সংখ্যা সীমিত রাখার পরামর্শ দেন।একই সঙ্গে বলা হয়, মসজিদ বন্ধ থাকবে না, তবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষার বিষয়ে নিশ্চিত না হয়ে মসজিদে গমন করবেন না। আলেমদের পরামর্শ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রকাশ করে ইফা। যদিও সে পরামর্শের কোনো প্রতিফলন দেখা যায়নি দেশের মসজিদগুলোতে। বেশিরভাগ মসজিদে জুমার নামাজে পরিপূর্ণ মুসল্লি সমাগম দেখা গেছে।
এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আবারও রোববার (২৯ মার্চ) আলেমদের নিয়ে বৈঠক করে ইফা। বৈঠকে আরব দেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসল্লিদের মসজিদে নামাজ বন্ধের বিষয়গুলো সামনে রেখে বাংলাদেশেও পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়ে মতামত চায় ইফা। কোনো কোনো আলেম পরামর্শ দেন, মসজিদ খোলা থাকবে। শুধু ইমাম-মুয়াজ্জিন ও খাদেমরা জামাতে নামাজ আদায় করবেন, মুসল্লিরা মসজিদে আসবেন না। তবে বেশিরভাগ আলেমের বিরোধিতার কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন। বরং পরিস্থিতির অবনতি ঘটলেও মসজিদে মুসল্লিদের অংশগ্রহণে জামাতে নামাজ বন্ধ করার পক্ষে নন অধিকাংশ আলেম।
ইফার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মসজিদে নিয়মিত আজান, ইকামত, জামাত ও জুমার নামাজ অব্যাহত থাকবে। তবে জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণ সীমিত থাকবে। ৮ ধরনের মুসল্লিদের মসজিদে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে ইফা। সেগুলো হল: ১. যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। ২. যাদের সর্দি, জ্বর, কাশি, গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট আছে। ৩. যারা আক্রান্ত দেশ ও অঞ্চল থেকে এসেছেন। ৪. যারা উক্তরূপ মানুষের সংস্পর্শে গেছেন। ৫. যারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। ৬. বয়োবৃদ্ধ, দুর্বল, মহিলা ও শিশু। ৭. যারা অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত। ৮. যারা মসজিদে গিয়ে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করেন তাদেরও মসজিদে না আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। ইফা আরও বলেছে, যারা জুমা ও জামাতে যাবেন তারা যাবতীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা অবলম্বন করবেন। ওজু করে নিজ নিজ ঘরে সুন্নত ও নফল আদায় করবেন। শুধু জামাতের সময় মসজিদে যাবেন এবং ফরজ নামাজ শেষে দ্রুত ঘরে চলে আসবেন। সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পরা, জীবাণুনাশক দ্বারা মসজিদ ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার রাখাসহ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব নির্দেশনা মেনে চলবেন।
ইফার ওই বিজ্ঞপ্তিতে মসজিদের খতিব, ইমাম, মুয়াজ্জিন ও মসজিদ কমিটিকেও করণীয় সম্পর্কে ৮টি পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরামর্শগুলো হল: ১. পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদকে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা এবং কার্পেট-কাপড় সরিয়ে ফেলা। ২. জামাত সংক্ষিপ্ত করা। ৩. জুমার বয়ান, খুতবা ও দোয়া সংক্ষিপ্ত করা। ৪. বর্তমান সংকটকালে দরসে হাদিস, তাফসির ও তালিম স্থগিত রাখা। ৫. ওজুখানায় অবশ্যই সাবান ও পর্যাপ্ত টিস্যু রাখা। ৬. বর্তমান পরিস্থিতিতে জামাতের কাতারে ফাঁক ফাঁক হয়ে দাঁড়ানো। ৭. ইশরাক, তিলাওয়াত, জিকির ও অন্যান্য আমল ঘরে করা। ৮. ঢাকাসহ দেশের কোনো মসজিদে যদি কোনো বিদেশি অবস্থান করেন তাদের বিষয়ে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে সত্ত্বর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া।
সভায় হেফাজতে ইসলামের আমির ও আল জামিয়াতুল দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক আহমদ শফী, চট্টগ্রামের আল জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়া মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী, গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার নাযেমে তালিমাত মুফতি নুরুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামিয়া ইউনুছিয়া মুহতামিম মুফতি মোবারকুল্লাহসহ অনেক আলেমের পরামর্শ নেয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আনিস মাহমুদ। প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম। সভায় উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামাগণ।
সেরা নিউজ/আকিব