অনলাইন ডেস্ক:
যায়যায়দিন এবং মৌচাকে ঢিল পত্রিকার সম্পাদক শফিক রেহমান বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবসের প্রচলক। তিনি জনপ্রিয় টিভি আর্টশো লাল গোলাপের উপস্থাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যে যান এবং ১৯৬৫ সালে ‘ইন্সটিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস ইন ইংল্যান্ড ও ওয়েলস’ থেকে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরবর্তীকালে দেশে ফিরে আসেন।
লেখক-সাংবাদিক শফিক রেহমান তার স্ত্রী, ডেমক্রেসিওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমানের ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য অনেকদিন ধরেই যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন। করোনাভাইরাসের আধিপত্যে সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন কার্যত লকডাউনে, তখন যুক্তরাজ্যের অবস্থা আরও ভয়াবহ। জ্যামিতিক হারে যেনো বেড়ে চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা, সেই সাথে মৃত্যুর মিছিল।
পঁচাশি বছর বয়সী ‘চিরতরুণ’ শফিক রেহমানের ‘লকডাউন দিন’ এর শুরুটা কিভাবে হচ্ছে লন্ডনের নিজ বাড়িতে?
‘সকালে উঠেই নিজের করা বাগানটা দেখি। লাল টিউলিপ আর হলুদ ড্যাফোডিলের চারা লাগিয়েছিলাম। সেগুলোতে অনেক ফুল ফুটেছে।
দেখতে ভালোই লাগে। আমার বাড়ির ঠিক পেছনেই আছে একটা বড় পার্ক। লেখার ঘর, বসার ঘর থেকেই সেটা দেখা যায়। কফি বানিয়ে খেতে খেতে আইপ্যাডে খবরগুলো পড়ি।’
আর কিছু করছেন? জানতে চাইলে অনেকটা আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘হ্যা, কিছু একটা করছি। কিন্তু তার আগে বলে নিই- বাংলাদেশে অনেক সময়ই অনেক বড় ঘটনা ঘটেছে, এখনো ঘটছে। কিন্তু আমি মনে করি সেসব নিয়ে অন্যান্য দেশের মতো কালজয়ী কোনো লেখা বা বই আমরা পাইনি। এই যেমনঃ করোনা ভাইরাস নিয়েও কেউ তেমন কিছু একটা লিখছে না।
বাংলাদেশে সেই অর্থে খুব একটা লেখক তৈরী হয়নি। আমি আমার পত্রিকার মাধ্যমে চেষ্টা করেছিলাম পাঠককে লিখতে উৎসাহিত করতে, লেখক তৈরী করতে। লেখকই পাঠক, পাঠকই লেখক- এটা আমারই শ্লোগান।
অনেক দিন ধরেই আমি বিশ্বসাহিত্যের কালজয়ী এবং গুরুত্বপূর্ণ গল্পগুলো বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে আসছি৷ এটাকে একপ্রকার আত্মত্যাগই বলা চলে। কারণ আমি নিজের লেখা না লিখে অন্যের লেখা অনুবাদ করে চলেছি।
এখন আমি ব্রিটিশ লেখক ডব্লিও সমারসেট মম এর একটি বিখ্যাত গল্প রেইন (Rain) অনুবাদ করছি। রেইন কে অনেকেই পৃথিবীর সেরা ১০টি গল্পের একটি বলে মনে করে থাকেন। রেইন নিয়ে একাধিক মুভিও নির্মিত হয়েছে। বুদ্ধদেব বসুও রেইন অনুবাদ করেছিলেন। গল্পটা ‘প্যাসিফিক আইল্যান্ড’ এর যেখানে এক পতিতাকে এক খ্রিস্টান মিশনারীর সংশোধনের প্রচেষ্টা শেষে এক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়।’
দুপুর কিভাবে কাটছে?
‘দুপুরে সাধারণত আমার স্ত্রী স্যান্ডউইচ বা স্যুপ তৈরী করেন। বাসাতেই খাবার এবং অন্যান্য জিনিস আছে। কিন্তু সমস্যাটা তাজা ফল এবং তাজা সবজির ক্ষেত্রে। মাঝেমাঝে আমার ছেলে সুমিত রেহমান সেগুলো দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবকিছুতেই এখন কড়াকড়ি। যেমনঃ সুমিত সেদিন সুপারমার্কেট থেকে সর্বোচ্চ ৬ টি কলা আনতে পেরেছিল। ওর পরিবারের জন্য ৩ টি রেখে আমাদের জন্য ৩ টি দিয়ে গেলো।
আগে ফুটবল ম্যাচগুলো দেখতাম। এখনতো আর সেগুলো দেখার সুযোগ নেই। বই পড়ি৷ হাটাহাটি করি।’
আপনার স্ত্রীর চিকিৎসা কেমন চলছে?
‘ওকে নিয়েই আমরা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিন্তিত। যেহেতু ওর লিউকেমিয়া আর লিউকেমিয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, আবার করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রয়োজন। হাসপাতাল থেকে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের দুজনের কাছেই নিয়মিত চিঠি আসছে। ওর কাছেই বেশি আসছে।
আমাদের দেয়াল পেরোলেই পার্ক। কিন্তু সেখানে যাওয়া কড়াকড়িভাবে নিষেধ৷ কারণ পার্কে অনেক সময়ই মানুষ একে অপরের কাছে চলে আসে।’
করোনা ভাইরাস মহামারী বিষয়ে আপনি যদি কিছু বলতেন…
‘এটাতো অবশ্যই ভয়াবহ। সবাইকে যথাসম্ভব বাড়িতে থাকা উচিত৷ এখানে যেমন দেখতে পাচ্ছি, খাবারের দোকান খোলা থাকার সময়ও মানুষ সেখানে কম যাচ্ছে। এখানকার একটা গবেষণায় বেরিয়েছে ১ জন লোক গড়ে ২.৫ জন লোককে সংক্রমিত করে থাকে। সুতরাং দূরত্ব বজায় রাখাই ভালো।
বলা যায় ৩য় বিশ্বযুদ্ধ চলছে। কিন্তু আমরা জানিনা কার বিরুদ্ধে লড়ছি। ২য় বিশ্বযুদ্ধের দশক পরে আমি ১৯৫৭ সালে যুক্তরাজ্যে এসেছিলাম। মনে হচ্ছে আবার ওই অবস্থায় ফিরে গেছি।
যাকে পৃথিবীর ১ নম্বর বুদ্ধিজীবী বলে মনে করা হয় সেই নোয়াম চমস্কি সতর্ক করে বলেছেন, করোনা সংকট কেটে যাওয়ার পরে পৃথিবীতে যুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে, এমনকি পরমাণু যুদ্ধও। একটা সহিংস পরিস্থিতির উদ্ভব হবে।’
বাংলাদেশে করোনা প্রতিরোধ বিষয়ে আপনার কোন বক্তব্য আছে কিনা জানতেই আফসোস করে বললেন, ‘আগে আমি লাল গোলাপ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দর্শকদের এসব বিষয় নিয়ে জানাতে পারতাম। এখন তা পারছি না। আমি বলবো, করোনায় কতজন মারা যাচ্ছে তার একটা তালিকা সব দল-মত মিলে একসাথে বসে ঠিক করতে হবে। সবাই মিলে বসতে পারলেই কেবল প্রকৃত সংখ্যাটা বের করা যাবে।’
‘সোশ্যাল মিডিয়াতে যারা লিখছেন, তাদের ধন্যবাদ দিতে চাই। অনেকেই সত্যটা তুলে ধরছেন। মানুষের চাহিদা পূরণ করছেন। আমি হয়তো সোশ্যাল মিডিয়াতে নেই। অন্যরাতো আছেন। তারাতো লিখছেন। তাদের ভুলগুলোও ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা উচিত। রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতায়তো আছে-
“যে আমারে দেখিবারে পায় অসীম ক্ষমায় ভালো মন্দ মিলায়ে সকলি…”
আরেকটা বিষয় যোগ করতে চাই, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে অনেকটাই স্বস্তি পেয়েছি। তিনি অসুস্থ। দুঃসহ অবস্থায় তিনি তার মা-বোন-সন্তানকেও হারিয়েছেন। আমার অনুরোধ, তাকে যেনো আক্ষরিক অর্থেই কোয়ারান্টাইনে রাখা হয়। অনেকেই তার সাথে দেখা করতে চাচ্ছেন। কিন্তু তাকে আগে সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। টিল দ্যান, নো পলিটিক্স।’
সেরা নিউজ/আকিব