সেরা নিউজ ডেস্ক:
কোভিড-১৯ খুবই নির্দয় এক রোগ। এটি কারও ধর্ম-বর্ণ, উচ্চতা, বয়স, ধনী-গরিবের পার্থক্য দেখে না। প্রাণঘাতী এই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন সবাই, প্রাণ যাচ্ছে সব শ্রেণির মানুষের। তারপরও যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত হয়ে শেতাঙ্গদের চেয়ে কৃষ্ণবর্ণ অর্থাৎ অ্যাফ্রো-আমেরিকানদের মধ্যে তুলনামূলক মৃত্যুহার বেশি।
এর কারণ কী?
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত সার্জন জেরোমি অ্যাডামস বলেন, ‘আমরা জানি কৃষ্ণাঙ্গদের সাধারণত ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, ফুসফুসের রোগ বেশি থাকে। এ ধরনের করোনিক (দীর্ঘস্থায়ী) রোগের সঙ্গে দারিদ্র্য ও কাঠামোগত বর্ণবাদের যোগসূত্র রয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে এধরনের রোগাক্রান্তদের অবস্থা আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।’
অ্যাডামস নিজেই কৃষ্ণাঙ্গ এবং তিনিও উচ্চ রক্সচাপ ও অ্যাজমায় ভুগছেন। এ চিকিৎসক বলেন, ‘আমি এবং আমার মতো কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানরা করোনার উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।’
কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যু বাড়ছে
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে কী হারে কৃষ্ণাঙ্গরা মারা যাচ্ছেন তার পূর্ণাঙ্গ হিসাব এখনও নেই। তবে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু এলাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
এতে দেখা যায়, শিকাগোয় করোনায় মৃতদের মধ্যে ৬৮ শতাংশই অ্যাফ্রো-আমেরিকান। অথচ এ শহরে জনসংখ্যার মাত্র ৩০ শতাংশ হচ্ছেন তারা।
একই অবস্থা নর্থ ক্যারোলিনা, লুইজিয়ানা, মিশিগান, উইজকনসিন, এমনকি রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতেও।
পেশাগত কারণে ঝুঁকি
আমেরিকান পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক জর্জেস বেঞ্জামিন জানান, পেশাগত কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের কৃষ্ণাঙ্গরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘এই জনগোষ্ঠী অপেক্ষাকৃত বেশি জনমুখী। তাদের অনেকে বাসচালক, অনেকে কর্মক্ষেত্রে যেতে গণপরিবহন ব্যবহার করেন, অনেকে নার্সিংহোমে সেবা দিচ্ছেন, আরও অনেক লোক মুদি দোকানে কাজ করেন।’
মানুষজনের সংস্পর্শে বেশি থাকার কারণে কৃষ্ণাঙ্গদের বেশিরভাগেরই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয় না। ফলে তারাই করোনাভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।
কাঠামোগত বৈষম্য
ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়া মেডিকেল সেন্টারের অ্যানেসথেসিওলজিস্ট ডা. এবোনি হিল্টন বলেন, ‘যথেষ্ট তথ্য রয়েছে, কৃষ্ণাঙ্গরা চিকিৎসার জন্য গেলে তাদের উপসর্গগুলো কেউ বিশ্বাস করতে চায় না বা তারা উপযুক্ত সেবা পান না।’
উদাহরণস্বরূপ, ২০১২ সালে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসের এক গবেষণায় দেখা গেছে, শিকাগোতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত কৃষ্ণাঙ্গ নারীদের ম্যামোগ্রামস খুব কম বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখেছেন।
২০১৮ সালের আরেক গবেষণায় হৃদরোগে ভুক্তভোগী কৃষ্ণাঙ্গদের ক্ষেত্রেও একই বৈষম্য দেখা গেছে।
অবহেলায় ঝুঁকি সবার
ডা. হিল্টনের মতে, হৃদরোগ-ক্যান্সারের মতো কৃষ্ণাঙ্গদের চিকিৎসায় অবহেলা করলে করোনাভাইরাসের হাত থেকে নিস্তার মিলবে না কারোরই।
তিনি বলেন, ‘যখন আপনার সিস্টেম নিম্নআয় বা সংখ্যালঘুদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা দেবে না, তারা নিজ সম্প্রদায়কে আক্রান্ত করতে বাড়ি ফিরে যাবে। ওইসব কর্মী যারা ইতোমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন, তারা মুদি দোকানে কাজে যাবে। সেখানে আমেরিকার উচ্চপর্যায়ের লোকজন খাবার কিনতে আসলে তারাও আক্রান্ত হবেন।’
সুতরাং করোনাভাইরাস সংকটে কারও প্রতিই অবহেলা নয়, সবার জন্যই উপযুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে হবে বলে জানান এই চিকিৎসক।
সেরা নিউজ/আকিব