ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক:
বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মহামারির ভয়াল থাবার মুখে পড়া স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৫১৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে। আগের দিন অর্থাৎ রোববার ও দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা ছিল ৬১৯।
এদিকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটিতে জারিকৃত লকডাউনে শিথিলতা এনেছে স্পেন। সোমবার থেকে দেশটির বেশকিছু খাতের কর্মীদের কাজে ফেরার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এতে লাখ লাখ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন।
গত এক মাসের বেশি সময় ধরে ঘরে বন্দি থাকা লাখো মানুষ কাজে ফিরতে শুরু করলেও রোববারও দেশটিতে তিন হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত এখন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৬ এবং মৃত ১৭ হাজার ৪৮৯।
কয়েকদিন ধরে দেশটিতে করোনায় মৃত্যু এবং সংক্রমণের সংখ্যা কমে আসায় পরিস্থিতির উন্নতি দেখছে স্পেন সরকার। যে কারণে সোমবার থেকে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, নির্মাণ শিল্প ও উৎপাদন খাত পুনরায় খুলে দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
নির্দিষ্ট কিছু খাতের মানুষকে কাজে ফেরার অনুমতি দেয়া হলেও দেশটির অধিকাংশ মানুষকে এখনও ঘরেই কাটাতে হবে। আগামী ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত দোকান-পাট, বার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য জনসমাগমপূর্ণ এলাকা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছে দেশটি সরকার।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইল বলছে, নির্মাণ খাত, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, কল-কারখানা, ধাতব-শিল্প, শিপইয়ার্ড কর্মী, স্যানিটেশন ও নিরাপত্তা খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষ সোমবার কাজে যোগ দিয়েছেন। দেশটির নির্মাণখাতের শ্রমিকদের একটি সংগঠন বলছে, কাঠ ও ফার্নিচার শিল্পের সঙ্গে জড়িত অন্তত ১৭ লাখ কর্মী পুনরায় কর্মে ফিরেছেন।
সোমবার সকালের দিকে যখন লাখ লাখ মানুষ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন; তখন দেশটির প্রধান প্রধান পরিবহন কেন্দ্রগুলোতে মাস্ক বিতরণ করা হয়। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফার্নান্দো গ্র্যান্ডে-মার্লাস্কা বলেন, কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। যদি সর্বনিম্ন সংক্রমণও ঘটে, তাহলে কাজ পুনরায় শুরু করা যাবে না।
চলতি মাসের শুরুর দিকে স্পেনে করোনায় প্রত্যেক দিনে মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন নতুন রেকর্ড হয়। তবে গত কয়েকদিন ধরে সেই সংখ্যা কমে আসায় দেশটির সরকার অপরিহার্য কিছু খাতকে সচল করার ঘোষণা দেয়।
সোমবার সকালের দিকে মাদ্রিদের আটোচা ট্রেন স্টেশনের সামনে অল্প কয়েকটি কমিউটার ট্রেন আসে। সেখান থেকে যাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা ছিল খুবই কম। কিছু কিছু গণপরিবহণও যাত্রী পরিবহন করেছে। তবে কিছু এলাকায় লাখ লাখ মাস্ক বিতরণ করেছে পুলিশ।
এর আগে রোববার দেশটির প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো স্যাঞ্চেজ বলেন, বৈজ্ঞানিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করেই অর্থনীতি বাঁচানোর মতো কিছু খাতে পুনরায় শুরু করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে অন্যান্য বিধি-নিষেধ প্রত্যাহারের বিষয়গুলো ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের অর্জনের ওপর নির্ভর করবে।
তিনি বলেন, আমরা এখনও বিজয় থেকে অনেক দূরে। যে সময়টাতে আমরা স্বাভাবিক জীবনে শুরু করতে পারবো; সেটি অনেক দূরে। তবে আমরা বিজয়ের পথের প্রথম সিদ্ধান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
এদিকে, মানুষকে কর্মস্থলে ফেরার অনুমতি দেয়ায় করোনার প্রাদুর্ভাব আবারও শুরু হতে পারে; এমন আশঙ্কায় আঞ্চলিক অনেক নেতা দেশটির সরকারের তীব্র সমালােচনা করেছনে। দেশটির বুর্গোসভিত্তিক বেসরকারি কোম্পানি নিকোলাস কোরেয়া বলেছে, তারা কোম্পানির কর্মীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করবে।
ইউরোপীয় সেন্ট্রাল ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট লুইস দে গিনদোস বলেন, ইউরোপ সাধারণত পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায়মারাত্মক সঙ্কটের মুখে পড়বে স্পেন।
স্প্যানিশ অর্থনীতির জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে মার্চের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৯ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। দেশটির সাবেক এক অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমরা (১৯৩৬-৩৯ স্প্যানিশ) গৃহযুদ্ধের পর সবচেয়ে মারাত্মক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছি। এই মহামারির কারণে ঐতিহ্যবাহী সব উৎসব বাতিল হয়েছে।
সূত্র: ডেইলি মেইল, রয়টার্স।