সেরা নিউজ ডেস্ক:
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। ভাইরাসটির বিরুদ্ধে বিশ্বের লড়াইয়ে পথনির্দেশকের ভূমিকা পালন করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। এমন পরিস্থিতিতে সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিশ্বজুড়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। বিশ্বের অন্যতম ধনকুবের ও ডব্লিউএইচওর অন্যতম অর্থদাতা বিল গেটস বলেছেন, এটা শুনতে যেমন শোনায়, ততটাই ভয়ানক। এছাড়া জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাসহ দেশে দেশে শীর্ষ কর্মকর্তারা ট্রাম্পের এ পদক্ষেপকে তুলোধনা করেছেন। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ট্রাম্প বলেছেন, ডব্লিউএইচও করোনা মহামারি মোকাবিলায় তাদের মৌলিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তার জবাবে ডব্লিউএইচও প্রধান টেড্রস আধানম ঘেব্রেয়েসুস বলেছেন, সংস্থাটি একটি লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে। সেটা হচ্ছে এই মহামারী থামানো। তিনি বলেন, নষ্ট করার মতো সময় নেই। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরা বলেছেন, এখন ডব্লিউএইচওতে অর্থায়ন বন্ধের সময় নয়। সংস্থাটি পুরো বিশ্বজুড়ে কভিড-১৯ মোকাবিলায় মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।
ট্রাম্প যা বলেছেন
ডব্লিউএইচওর বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী ভুল ও চীনকে অতিমাত্রায় বিশ্বাসের অভিযোগ এনেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে ডব্লিউএইচওর গুরুতর অব্যবস্থাপনা ও তথ্য ধামাচাপা দেয়ায় তাদের ভূমিকা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আমি আমার প্রশাসনকে সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছি।
পরবর্তীতে বুধবার হোয়াইট হাউজ এক বিবৃতিতে জানায়, ডব্লিউএইচও মার্কিন জনগণকে হতাশ করেছে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমেরিকান জনগণ ডব্লিউএইচওর কাছ থেকে আরো ভালো প্রতিক্রিয়া প্রাপ্য। যতদিন না এর অব্যবস্থাপনা, ধাপাচাপা দেয়া ও ব্যর্থতা নিয়ে তদন্ত শেষ হচ্ছে ততদিন সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধ থাকবে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, সংস্থাটিতে যুক্তরাষ্ট্র ফের অর্থায়ন শুরু করবে কিনা তা জানা যাবে ওই তদন্ত শেষ হওয়ার পর। তদন্ত শেষ হতে ৬০ থেকে ৭০ দিন লাগতে পারে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, ডব্লিউএইচওর সবচেয়ে বড় অর্থায়নকারী হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর সংস্থাটিতে ৪০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ অনুদান দিয়েছে দেশটি। সংস্থাটির দ্বিতীয় বৃহত্তম অনুদানকারী হচ্ছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন।
সমালোচনা
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ট্রাম্পের পদক্ষেপ আগ থেকেই ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছে। তিনি ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে যথাসময়ে পদক্ষেপ নেননি। এর মধ্যে ডব্লিউএইচওতে অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বজুড়ে ভর্ৎসনার শিকার হয়েছেন।
ডব্লিউএইচওতে ট্রাম্পের অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণার পর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরসি জনসন বলেছেন, সংস্থাটিতে অর্থায়ন বন্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই তার প্রশাসনের। তিনি আরো বলেন, বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যরক্ষায় সংস্থাটি নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা রাখছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর ডব্লিউএইচওতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ অর্থ দেয়া দেশ হচ্ছে বৃটেন।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস এক টুইটে লিখেছেন, এখনই পর্যাপ্ত অর্থায়ন না পাওয়া ডব্লিউএইচওতে বিনিয়োগের সবচেয়ে উপযোগী সময়গুলোর একটি। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেন, এই সিদ্ধান্তে ভাইরাসটি মোকাবিলায় আভ্যন্তরীণ সহযোগিতা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন বলেছে, এটা ভুল দিকে নেয়া বিপজ্জনক একটি পদক্ষেপ। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিমালা বিষয়ক প্রধান জোসেপ বরেল বলেছেন, ডব্লিউএইচওর দরকার এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এই মুহূর্তে এমন পদক্ষেপের ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত খাটে না। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেন, ডব্লিউএইচও’র দেয়া নির্দেশনা নির্ভরযোগ্য।
মার্কিন ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি এলিয়ট ইঙ্গেল বলেন, এই সংকটে প্রেসিডেন্টের প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা থেকে নজর সরাতে তিনি যা ইচ্ছা তাই করছেন।
সেরা নিউজ/আকিব